![]() |
প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযো ওঠা
লক্ষীছড়ি (সাজেক) সেনা ক্যাম্পের কমাণ্ডার মো. আওয়াল। |
সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের দুর্গম লক্ষীছড়ি
মুখ গ্রামে রাতের আঁধারে স্থানীয় লক্ষীছড়ি সেনা ক্যাম্প কমাণ্ডার ওয়ারেন্ট অফিসার
(সুবেদার) মো. আওয়াল এক প্রতিবন্ধী নারীকে (২৮) ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ
পাওয়া গেছে।
গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) রাতে এ
ঘটনা ঘটে বলে ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামী জানান।
ভুক্তভোগী নারী একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী।
তার দুই হাতের আঙুল রোগাক্রান্ত। তিনি প্রতিবন্ধী ভাতাও পেয়ে থাকেন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে ভুক্তভোগী নারী বলেন, “গতকাল
রাত ১০টার সময় আর্মিরা আমাদের বাড়িতে এসে দরজার লাথি দিয়ে দরজা খুলতে বলে। তারপর আমি
বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে দেয়া মাত্র ক্যাম্প কমাণ্ডার মো. আওয়াল আমাকে আমার পরনের
জামায় ধরে টেনে বাইরে বের করেন। এতে আমার জামা কিছুটা ছিঁড়ে যায়। তখন আমি ভয় পেয়ে দৌঁড়ে
গিয়ে ঘরের ভিতর লাইট জ্বালাতে গেলে ক্যাম্প কমাণ্ডার লাইট বন্ধ করতে বলেন। আমাকে মারধর
করার হুমকি দেন এবং স্বামীকে খোঁজ করেন”।
তিনি আরো বলেন, “আমি তাকে (ক্যাম্প কমাণ্ডারকে)
বলি যে, আমার স্বামী অসুস্থ। তারা আমার স্বামীকে ডাকতে বলে। আমি স্বামীকে ডেকে তুলি।
আমার স্বামী বাড়ির বাইরে বের হওয়ার সাথে সাথে সেনারা তাাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে ও গালিগালাজ
করতে করতে অন্যদিকে নিতে থাকে। তাকে মঘাছড়া কার্বারির বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায়”।
তখন খুব ভয় পান বলে জানান ভুক্তভোগী নারী।
“তখন আমি ভয় পেয়ে যাই। আর রাতের অন্ধকারে
আমার স্বামীকে সেনারা কেন নিয়ে গেছে তা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়ি। চিন্তা করতে করতে ঘুমাতেও
পারছি না, বসে থাকতেও পারছি না অবস্থা হয় আমার” বলেন তিনি।
তারপর তিনি তার শ্বাশুরিকে দোকানে গিয়ে ঘটনাটি
গ্রামের লোকজনকে জানাতে বলেন বলে জানান।
তিনি বলেন, “পরে আমি স্বামীকে খুঁজতে গ্রামের
লোকজনকে নিয়ে মঘাছড়া কার্বারির বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি তারা (সেনারা) সেখানে চেয়ারে
বসে রয়েছে। আমি তখন আমার ছেঁড়া জামা দেখিয়ে বলি যে, দেখুন আমাকে কী করেছেন। আমার কথা
শুনে উল্টো সুবেদার হাসছিল। আমি তখন ক্ষোভে তীব্র প্রতিবাদ করি। আমি সুবেদারকে বলি
যে, এখানে মোবাইলের নেট পাওয়া যায় না, সে সুযোগে আমার সাথে এত রাতে এ ধরনের খারাপ আচরণ
করেছেন”।
তখন সুবেদার তা অস্বীকার করলে কার্বারির বাড়িতে
উপস্থিত লোকজন এর প্রতিবাদ জানান।
এরপর সুবেদার মো. আওয়াল কাল সকালে (অর্থাৎ
আজ সকালে) গ্রামের কার্বারিকে সাথে নিয়ে তাকে ক্যাম্পে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেছেন
বলে তিনি জানান।
তাদের বাড়িটি মুল গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে
হওয়ায় ক্যাম্প কমাণ্ডার এ সুযোগটা নিতে চেয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এর আগে সুবেদার
মো. আওয়াল তাদের নির্মাণাধীন বাড়িটি ভেঙে ফেলতে বলেছিলেন এবং জোন থেকে অনুমতি নিয়ে
বাড়ি তুলতে হবে বলে জানিয়েছিলেন। সুবেদার তাদেরকে নতুন কোন বাড়ি নির্মাণ করা যাবে না
বলে নিষেধ করেছিলেন বলেও তিনি জানান।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী সুরেশ চাকমা (৩৫),
পিতা সহদেব চাকমা ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, “গতরাতে সুবেদার আওয়ালের নেতৃত্বে আর্মিরা
গিয়ে আমার বাড়ি ঘেরাও করে। আমাকে ডাক দেয়। এরপর আমার স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে বের হলে সুবেদার
তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তার পরনের জামা ছিঁড়ে দেয়।
তিনি বলেন, “এরপর আমি বাড়ির ভিতর চিৎকার দিই।
তখন সুবেদার আমাকে ডাকে। আমি তার কাছে গেলে তিনি তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আমাকে আঘাত
করে বলে যে, “তুমি এখানে থাকতে পারবে না। তোমার ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া হবে। তোমাকে এখান
থেকে চলে যেতে হবে। সুবেদার তাকে চিনি কিনা জানতে চাইলে আমি চিনি বলে উত্তর দিই”।
সেনারা তাকে মঘাছড়ায় নিয়ে গেলে পরে ৩০-৩৫
জন গ্রামবাসী মঘাছড়ায় গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন এবং তিনি বাড়িতে ফেরেন বলে তিনি জানান।
তিনি তার স্ত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ও লাঠি দিয়ে
আঘাতের বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।