জাতির কাছে অমর হয়ে থাকবেন জুনান-রুবেল: অমল ত্রিপুরা
![]() |
গত বছর স্বনির্ভর এলাকায় সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাত ও বৈসাবি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন অমল ত্রিপুরার নেতৃত্বে একটি টিম। |
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর এলাকায় গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত জুনান
চাকমা ও রুবেল ত্রিপুরা’র পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনার তদন্ত কী হলো তা নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের
কাছে প্রশ্ন রেখেছেন।
গতকাল (১৩ এপ্রিল ২০২৫) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপাতি অমল ত্রিপুরার নেতৃত্বে
একটি টিম নিহত জুনান ও রুবেল ত্রিপুরার পরিবার এবং গুরুতর আহত (যারা এখনো সুস্থ হয়ে
ওঠেননি) নলেজ চাকমা, বিজয় চাকমাসহ বেশ কয়েকজনের সাথে তাদের নিজ বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাত
ও বৈসাবি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ও আহতরা ঘটনার তদন্ত
বিষয়ে সরকারের কাছে উক্ত প্রশ্ন রাখেন।
টিমের মধ্যে আরো ছিলেন, ইউপিডিএফ সংগঠক লালন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের
সভাপতি নীতি চাকমা ও পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি অনিমেষ চাকমাসহ অন্যান্য
নেতৃবৃন্দ।
নিহতদের পরিবার ও আহতরা আক্ষেপ করে বলেন, উক্ত ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী
সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও ৭ মাসেও এ কমিটির তদন্ত কাজ কী হলো, তদন্তে কী পাওয়া
গেল তা জানা যায়নি। আসলে তারা এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত করেছে কিনা তাও আমরা জানি না।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, “আমরা ঘটনায় সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ত থাকার
বিষয়ে কমিটির নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ করেছিলাম। পরবর্তীতে তৎকালীন খাগড়াছড়ির ডিসির কাছে
বেশ কয়েকবার গিয়ে তদন্তের খোঁজ নিয়েছিলাম। তখন প্রত্যেকবারে ডিসি বলেছিলেন তাঁর কাছে
কোন রিপোর্ট জমা পড়েনি। পরে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থানায়
ডেকে নিয়ে মামলা করবে কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমরা বলেছিলাম ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যের
বিরুদ্ধে আমরা মামলা করতে চাই, তবে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করবো না। তখন ওসি আমাদেরকে
বলেছিলেন যে, তাদের (সেনাবাহিনী) নামে মামলা করা যায় না। ফলে আমাদের আর মামলা করা সম্ভব
হয়নি।”
এসময় নিহতদের পরিবার ও আহতরা ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় এবং
২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে
বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপূরণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানান।
জুনান-রুবেল জাতির কাছে অমর হয়ে থাকবেন
নিহত জুনান ও রুবেল’র পরিবার ও আহতদের সাথে সাক্ষাত ও বৈসাবি শুভেচ্ছা বিনিময়কালে
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা বলেন, চিন্তা চেতনায় অগ্রসর হওয়ায় জুনান
চাকমা ও রুবেল ত্রিপুরা নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্যদের গ্রাম রক্ষা করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন এবং
নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারা চির অমর হয়ে থাকবেন। জাতি তাদেরকে যথাযথ সম্মান ও
মর্যাদায় স্মরণ করবে এবং আজীবন মনে রাখবে।
সাক্ষাত ও শুভেচ্ছা বিনিময়কালে জুনান চাকমার মা রূপসী চাকমা এবং রুবেল ত্রিপুরা
পিতা-মাতা ও বড় ভাই চোখের অশ্রু ফেলে বলেন, ‘প্রত্যেক বছর বৈসাবি’র সময় তাদের নিয়ে
আমরা উৎসব পালন করতাম। কিন্তু তারা আজ নেই। গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর সদস্যরা
আমাদের সন্তান, ভাইদের গুলি করে হত্যা করেছে।’
![]() |
সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত জুনান, রুবেল-এর মরদেহ। ফাইল ছবি |
বৈসাবি শুভেচ্ছা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ নিহতদের পরিবার ও আহতদের উদ্দেশ্য বলেন,
জুনান, রুবেল-এর আত্মবলিদান এবং আহত হয়ে যারা যন্ত্রণাময় জীবন নিয়ে বেঁচে রয়েছেন সকলের
এই ত্যাগ আমাদের ও পাহাড়ের প্রত্যেকটি মানুষের সাহস, শক্তি, অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। এ
ত্যাগের জন্য আমরা স্যালুট জানাই। আহত হয়ে যারা কঠিন জীবন পার করছেন আমরা আপনাদের সাথে
সমব্যথী।
পাহাড়ের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, জুনান, রুবেল’রা সাহস
ও বীরত্বের সাথে জীবন উৎসর্গ করে লড়াই সংগ্রামের পথ দেখিয়েছেন। সমাজ ও এলাকা রক্ষার্থে,
অস্তিত্ব রক্ষার্থে পাহাড়ের জনসাধারণকে তাদের মতো এগিয়ে আসতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জুনান, রুবেল, অনিক, ধনরঞ্জনের খুনীরা যতই শক্তিশালী হোক
না কেন একদিন তাদের বিচার হবে। হত্যা-খুন করে কেউ রেহায় পাইনি, তারাও রেহায় পাবে না।
পাহাড়ে জনগণের কাঠগড়ায় একদিন তাদের মুখোমুখি হতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।