""

বান্দরবানে খেয়াং নারীকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার-শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়িতে নারী সমাবেশ


খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

বান্দরবানের থানচিতে খেয়াং নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়িতে নারী সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফভুক্ত তিন সংগঠন।

আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে ২০২৫) সকালে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সারাদেশে নারী নিপীড়ন, লাঞ্ছনা ও অবমাননার বিরুদ্ধে এক হও, রুখে দাঁড়াও” এই আহ্বান সম্বলিত শ্লোগানে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা মাঠ থেকে মিছিল সহকারে চেঙ্গী স্কোয়ারে গিয়ে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমার সভাপতিত্বে ও খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মিঠুন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা।

নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের নারীরা কেউই নিরাপদে নেই। আমরা মনে করেছিলাম জুলাই অভ্যুত্থানের পরে গঠিত ইউনুস সরকারের সময়ে আমরা কিছুটা হলেও শান্তিতে থাকতে পারবো। আমরা পাহাড়ের মানুষ আশা করেছিলাম ইউনুস সরকারের সময়ে হয়তো সুবিচার পাবো, জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাবো, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কিন্তু ইউনুস সরকারের ৮ মাসে আমরা দেখতে পাচ্ছি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের নারী ও সাধারণ জনগণের কোন নিরাপত্তা নেই। সমতলে যেমন আছিয়ার মতো শিশুরা ধর্ষণ-হত্যার শিকার হচ্ছে, একইভাবে পাহাড়ে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হচ্ছে পাহাড়ি নারীরা।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারী ধর্ষণ নতুন কোন ঘটনা নয়। অতীতে আমরা দেখেছি এই খাগড়াছড়িতে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা, বলপিয়ে আদামে ৯ জন সেটলার কর্তৃক প্রতিবন্ধী নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা। কিন্তু এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি।

নীতি চাকমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে পানিশমেন্ট জোন বানিয়ে সমতলে প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতি, অন্যায়-অপকর্ম করছে তাদেরকে এখানে বদলী করা হচ্ছে। আর এসব কর্মকর্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে নানা অপকর্ম সংঘটিত করছে। খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে আমরা সে ধরনের এক শিক্ষক দ্বারা ছাত্রী ধর্ষণ-নিপীড়ন হতে দেখেছি।

তিনি চিংমা খেয়াংকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা প্রশাসন তদন্ত করছে কিনা সে প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা দেখি সমতলে কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে ধর্ষককে আটক করা হয়। কিন্তু চিংমা খেয়াংয়ের হত্যার ঘটনা চার দিন হয়ে গেলেও প্রশাসন এখনো কাউকে আটক করতে পারতে পারেনি। তাহলে কেন এমন বৈষম্য করা হবে?

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক যে ১১ দফা নির্দেশনা জার রয়েছে তার কারণেই এখানে ধর্ষণ, নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ি নারী ধর্ষণের মেডিকেল টেস্ট রিপোর্টের ওপর রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় বরাবরই ধর্ষণের ঘটনায় নেটেটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত যতগুলো ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার কোন বিচার আমরা পাইনি।

তিনি অবিলম্বে চিংমা খেয়াং-এর হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার ও যথাযথ বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সাজা প্রদানের দাবি জানান।

মিঠুন চাকমা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে এখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মতই চলছে। দেশে খুন, গুম, অপহরণ, ছিনতাই, নারী ও শিশু ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা আগের চেয়েও বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বান্দরবানে চিংমা খিয়াংকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের অহরহ ঘটনা ঘটেছে। বিলাইছড়িতে সেনা সদস্য কর্তৃক দুই মারমা কিশোরীকে ধর্ষণ-নির্যাতনসহ পাহাড়ে এ যাবত যত ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা ঘটেছে কোন ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হয়নি, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়নি।

তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারী-শিশুরা আজ কোথাও নিরাপদ নয়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও প্রশাসন এই ধর্ষণে মদদ দেয়ার কারণে এবং বিচার না হওয়ায় ধর্ষকরা বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস পেয়ে থাকে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারীসহ সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ মন্তব্য করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যেভাবে নারী ধর্ষণ, খুন ও নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে তার জন্য ইউনুস সরকারের লজ্জা পাওয়া উচিত।

তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বান্দরবানে খেয়াং নারীকে ধর্ষণ-হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।





সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







Post a Comment