![]() |
সন্তু লারমা। সংগৃহিত ছবি |
থুইক্যচিং মারমা
কেউ কেউ মনে করেন সন্তু লারমা একজন ত্যাগী নেতা। কিন্তু এটা
একটা ভ্রান্ত ধারণা, একটা মিথ। যারা মনে করেন সন্তু লারমা একজন ত্যাগী নেতা, তাদের
কাছে আমার অনুরোধ দয়া করে আপনারা প্রমাণ দিন যে সন্তু লারমা একজন ত্যাগী নেতা – কেবল
মুখে বললে হবে না।
আমরা জানি, একজন আদর্শ নেতা লোভ, ক্ষমতালিপ্সা, অর্থ –বিত্ত-বৈভব
ও ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে থাকেন। সন্তু লারমা কি এসব ত্যাগ করেছেন? আমার
তো মনে হয় না, তিনি এসব ত্যাগ করেছেন। বরং এসবের প্রতি রয়েছে তার অস্বাভাবিক আসক্তি।
তার রয়েছে বহুবিধ লোভ, এর মধ্যে তার ক্ষমতালোভ হলো লেজেন্ডারি।
এটা সবাই জানে। ক্ষমতালিপ্সা তার গগণচুম্বী। তার এই ক্ষমতালিপ্সাই বিগত শতকের ৮০ দশকে
লাম্বা-বাদি গৃহযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ। এমনকি একমাত্র কারণ বললেও অত্যুক্তি হবে
না। বর্তমানে যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত চলছে তাও তার ক্ষমতালিপ্সার কারণেই। রূপায়ন দেওয়ান,
সুধাসিন্ধু খীসারা ২০০৬-৭ সালে তাকে অর্থাৎ জেএসএস ত্যাগ করে নতুন দল গঠনের পেছনেও
তার ক্ষমতালিপ্সা প্রধান ও এককভাবে দায়ি। আঞ্চলিক পরিষদের ক্ষমতায় থাকার জন্য ভ্রাতৃঘাতী
সংঘাতের মাধ্যমে নিজের জাতি ও জনগণকে রক্তাক্ত, ধ্বংস করতেও তিনি কুণ্ঠিত নন। তার ক্ষমতার
প্রতি লোভ ও মোহ বলা যায় একেবারে অসীম।
আর বাহ্যিকভাবে দেখলে মনে হবে তার অর্থ লালসা নেই। কিন্তু বাস্তবে
তা নয়। তার ছোট মেয়ের কানাডায় কয়েক মিলিয়ন ডলারের বিলাস বহুল বাড়ি কেনার টাকা কে যোগান
দিয়েছে? তার ফ্যাশন শো করার খরচের কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে যায়? তার কর্মহীন মেয়ে
ও বেকার জামাই সেই টাকা কোথা থেকে পায়? সন্তু লারমাই এসব টাকার যোগানদাতা। এই টাকা
জনগণের টাকা। সন্তু লারমার সাধারণ কর্মীরা দলের নামে যে টাকা উত্তোলন করেন তিনি সেসব
টাকা এভাবে তার মেয়েদেরকে দেন এবং দলের ভেতরে ও বাইরে তার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে ব্যবহার
করেন।
ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বেলায় বলা যায়, তিনি তা কোন কালে
ত্যাগ করতে পারেননি। সশস্ত্র সংগ্রামের সময়ও তিনি আরাম আয়েশে ছিলেন বলে তার ঘনিষ্টজনরা
জানিয়েছেন। তিনি কোনদিন ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপন করেননি। সন্তু লারমার ত্যাগ সম্পর্কে
এক কথায় বলতে গেলে তিনি মলমূত্র ছাড়া কিছুই ত্যাগ করেননি।
একজন আদর্শ বিপ্লবী নেতার কিছু গুণ থাকে, যেমন নীতি-নৈতিকতা,
প্রজ্ঞা, দূরদর্শীতা ইত্যাদি। এ তিনটির কোনটিই তার নেই। তিনি একজন অত্যন্ত কপট ব্যক্তি।
সাধুতা, নৈতিকতা তার মধ্যে পাওয়া যায় না। তিনি প্রজ্ঞা সম্পন্নও নন, তার প্রমাণ ১৯৯৭
সালের চুক্তি। তার প্রজ্ঞা থাকলে তিনি বিভাজনের রাজনীতি না করে ঐক্যের রাজনীতি করতেন।
অপরদিকে দূরদর্শীতা তার গুণ নয়। তিনি অন্ধ। সে কারণে তিনি দেখতে পান না যে, ভ্রাতৃঘাতী
সংঘাতে কেবল জুম্ম জনগণের শত্রুদেরই লাভ হয়। তিনি কেবল দেখতে পান কোথায় ও কিভাবে তিনি
তার ব্যক্তিগত ক্ষমতা লাভ করবেন ও তা রক্ষা করবেন।
বস্তুত সন্তু লারমা হলেন জুম্ম জাতির জন্য এক চরম অভিশাপ –
রাহুর মতো জুম্মদের ভাগ্যাকাশ ঢেকে রেখেছেন। অক্টোপাশের মতো জুম্ম জনগণকে চেপে ধরে
আছেন এবং আন্দোলনের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সন্তু লারমা থেকে যতদিন জুম্মরা মুক্ত
হতে পারবে না, ততদিন তারা বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন থেকেও মুক্ত হতে পারবে না।
এই সত্য আজ সন্তু লারমার গুটিকয় চামচা বাদে সবাই জেনে গেছে। এটাই হলো আমাদের আশার আলো। #
* থুইক্যচিং মারমা, সদস্য, ইউপিডিএফ
০৫.০৮.২০২৫
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো
লেখক/লেখকদের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।