![]() |
মাইকেল চাকমা। যেদিন মুক্তি পান সেদিন এই ছবিটি তোলা। |
অনলাইন ডেস্ক, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫
ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক মাইকেল চাকমা গত বছরের ৭ আগস্ট ২০২৪ “আয়নাঘর” খ্যাত
রাষ্ট্রীয় গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি পান। আজ (৭ আগস্ট ২০২৫) তাঁর মুক্তির এক বছর
পূর্ণ হয়েছে। শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার একদিন পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাঁকে বারোইয়ারহাট - রামগড় সড়কের বনবিভাগের একটি বাগানে
হাত-চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়।
সেই কুখ্যাত বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়া বিষয়ে তিনি নিজের ফেসবুকে একট পোস্ট দিয়েছেন।
তাঁর পোস্টটি নীচে হুবহু তুলে দেয়া হলো:
“আজ আমার বোনাস জীবনের বয়স ১ বছর পূর্ণ হলো!”
“ফ্যাসিস্ট হাসিনার তৈরী মৃত্যুপুরী 'আয়নাঘর' থেকে ২০২৪ সালের আজকের এই
দিনে সম্পূর্ণ খালি পকেট নিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় ফিরে সর্বপ্রথম আশ্রয় নিয়েছিলাম চট্টগ্রাম
শহরের এক বন্ধুর বাসায়। তখনও দেশের পরিস্থিতি কিছুই জানতাম না। সেসময় পর্যন্ত মনের
মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছিলো। মনে মনে বোকার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যাক- আপাতত বন্ধুর
বাসায় কিছুক্ষণ আত্মগোপনে থাকি।
“বন্ধু অফিসে গেছে। বাসায় তার ওয়াইফ অনেগুলো বাচ্চা পড়াচ্ছিল। তাকে অনুরোধ
করলাম ব্যাপারটা যেন কাউকে না জানায়। একটু বিশ্রাম নিয়ে তার ওয়াইফের ফোন থেকে বন্ধুকে
ফোন দিয়ে বললাম আমার এক ঘনিষ্ট পরিচিত জন ও কমরেডকে যেন তার বাসায় পাঠিয়ে দেয়। ক্ষুধা,
ক্লান্তি, পরিশ্রম ও ঘুমে কাহিল অবস্থা। শরীরটাকে ধরে রাখাটাও দায়। একটু পরে গোসল করে
সামান্য ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এর মধ্যে যাকে আসতে বলেছিলাম সে এসেগেছে। তার সাথে দেখা হওয়ার
সাথে সাথে সে এক হৃদয়বিদারক অবস্থা। আমাকে দেখার সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে
লাগলো। পরে তাকে একটু শাস্তনা দিয়ে বললাম- দেখো ভাই আমি খুবই ক্লান্ত, এখন কান্না করার
সময় নয়, তুমি আমার জন্য একটা ডাব আর একটু ঠান্ডা জুস নিয়ে এসো। আমাকে একটু বিশ্রাম
নিতে হবে।
![]() |
“আয়নাঘরের’ একটি চিত্র। |
“তখনও মাত্র তিনজন ব্যক্তি জানে যে আমি পৃথিবীতে বেঁচে আছি। সে পর্যন্ত
কাউকে জানানো হয় নাই। ফোনে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলাম পাশে যদি আড়ি পেতে প্রশাসনের লোকজন
আমার লোকেশন জেনে যায়। এবং যদি আবার তুলে নিয়ে যায়! ইতিমধ্যে সে ডাব ও জুস নিয়ে সে
চলে আসলো। আমি একটা মাদুর বিছিয়ে টেবিল ফ্যান চালু করে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। তারপর
সে আমাকে পরিস্থিতি সম্বন্ধে সংক্ষেপে অবগত করতে লাগলো। তারপর দেশে কি ঘটেছে তা একটু
আন্দাজ করতে পারলাম। পরিস্থিতি জেনে মনে কিছুটা সাহসও চলে আসলো। ডাব জুস এরপর কিছু
ভাত খেয়ে আরেকটু বিশ্রাম নিলাম। তারপর দুপুরের আযান শুরু হলো। আযান শেষ হওয়ার পর তাকে
অন্য একজন কমরেড-এর কথা জিজ্ঞাসা করলাম এবং তার নাম্বার আছে কী না জানতে চাইলাম। সে
হ্যাঁ জবাব দিলো।
তারপর সেই কমরেডকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম- আমি পৃথিবীতে ফিরে এসেছি!”
(আজকের এই খুশির দিনে আমি বেডে শোয়া অবস্থায় রয়েছি। জ্বর, মাথা ও শরীরের
তীব্র ব্যাথা নিয়ে দুই দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর গতকাল বিকালে বাসায় ফিরেছি। এখনও
শরীর বেশ খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তবে শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠার আশা রাখছি।)
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।