সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
খাগড়াছড়িতে এক স্কুল ছাত্রীকে সংঘবব্ধ ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালে সেনা-সেটলার কর্তৃক খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারায় হামলা-হত্যা-অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর সদস্য হেমা চাকমা।
আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে হেমা চাকমার ব্যক্তিগত ভেরিফাই করা ফেসবুক আইডিতে লেখা এক বিবৃতিতে বলেন, প্রিয় ছাত্র-জনতা, আপনারা নিশ্চয় জানেন,গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলায় একজন ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া আদিবাসী স্কুলছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষনের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িত একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো দুইজন অভিযুক্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় বিচার না পাবার শঙ্কা ও দ্রুত বিচারের দাবী নিয়ে পাহাড়ে ধর্ষণবিরোধী মুভমেন্ট ছড়িয়ে পড়ে।
আমি মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিবাদ জানানোর পূর্ণ অধিকার রয়েছে। মুভমেন্ট চলাকালীন প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপযুক্ত সাড়া না পেয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিবাদী জনতা জেলায় ২৭ সেপ্টেম্বরে পূর্ণদিবস সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এর পরে অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর সেখানে ব্যাপক সংঘাতের এবং একতরফা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে।
এই সংঘাতে কমপক্ষে তিনজন আদিবাসী প্রতিবাদী জনতা খুন এবং অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। স্হানীয় বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি, অনেক মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক মানুষ তার নিজের জীবনের সবকিছু হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এই পুরো ঘটনায় আমি ব্যথিত, ক্ষুদ্ধ এবং ভবিষ্যত শঙ্কা অনুভব করছি।
খাগড়াছড়ি ঘটনায় মিডিয়াগুলো বস্তুনিষ্ঠ নিউজ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে হেমা চাকমা বলেন, আমি খুব আশ্চর্যের সাথে খেয়াল করেছি জাতীয় মিডিয়াগুলোতে পাহাড়ের এই খুন এবং ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে খুব একটা বস্তুনিষ্ঠ নিউজ করা হয় নাই। বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম ইচ্ছাকৃতভাবে বায়াসড তথ্য ছড়িয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের এই নীরবতার কারণে পাহাড়ের আদিবাসী জনতার ব্যাপারে ফেসবুকে সমতলে প্রচুর পরিমাণে নেতিবাচক ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
পাহাড়ে ডিভাইড এন্ড রুল পলিসিই চলতে থাকলে এর পরিণতি সারা বাংলাদেশকেই ভোগ করতে হবে মন্তব্য করে ডাকসু সদস্য বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে পাহাড় এবং সমতলের মানুষদের মধ্যে একটা অবিশ্বাসের সম্পর্ক আছে। সুন্দর একটা বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যকার অবিশ্বাস ও মিথ্যার দেয়াল ভেঙে একসাথে এগুতে হবে। যে সকল শক্তি পাহাড়ের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘাতের চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের পারস্পরিক ঐক্যবদ্ধতা না থাকলে পাহাড়ে এক্সপেরিমেন্টাল ডিভাইড এন্ড রুল পলিসিই চলতে থাকবে। যার শেষ পরিণতি সারা বাংলাদেশকেই ভোগ করতে হবে।
রাষ্ট্রকে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা ও সম্মানে সাথে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে হেমা চাকমা বলেনে, আমি মনে করি, প্রত্যেক মানুষের তার সর্বোচ্চ সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। সংঘাতের পরিস্থিতি এড়াতে গেলে আদিবাসী মানুষসহ সারাদেশের সকল মানুষের গণতান্ত্রিক দাবীর প্রতি বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
একই সাথে, একজন মানুষ হিসেবে আমি অন্যের প্রাণের দাম বুঝি। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সম্পূর্ণ দায় হচ্ছে রাষ্ট্রের। ইতিমধ্যে যারা নিহত এবং আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার সকল খরচ প্রশাসনকে নিতে হবে।
বিবৃতিতে তিনি ,পাহাড় ও সমতলের অবিশ্বাসের দেওয়াল ভাঙতে হলে পাহাড়ের আদিবাসীদের দুঃখও শুনে অনুধাবন করতে হবে। আমি চাই বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক নিজের বোনের ধর্ষণের বিচার চাইবার অধিকার রাখবেন এবং একই সাথে তার প্রাণের নিরাপত্তা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
বিবৃতিতে হেমা চাকমা বর্তমান প্রেক্ষাপটে ৪দফা দাবি জানান। দাবিসমূহ হল: ১.বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে, আদিবাসী স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার সকল অপরাধীকে দ্রুত সময় গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচার দাবি করছি, ২.বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রশাসনকে এই সংঘাতের জন্য দায়ী অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নতুবা এই ঘটনার বিচারহীনতা আগামীতে আরেকটি সংঘাতের সূচনা হিসেবে কাজ করবে, ৩.রাষ্ট্র কর্তৃক, নিহত সকল ব্যক্তির পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।আহতদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্হা করতে হবে এবং ৪. মিডিয়ার পিনপতন নীরবতার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আদিবাসী মানুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, সাধারণ সমতলবাসীদের মাঝে তাদের হিংসাযোগ্য বানিয়ে ছোট দেখানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
%20(30%20%C3%97%2035%20cm)%20(3).png)