![]() |
| শনিবার (২২ নভেম্বর) সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বিষয়ে জরুরী সভা শেষে প্রেস ব্রিফিং করছেন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। |
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ
পরীক্ষা আবার কবে অনুষ্ঠিত হবে, জটিলতা কাটবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আজ শনিবার (২২ নভেম্বর ২০২৫) অনতিবিলম্বে নিয়োগ
পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
স্মারকলিপিতে তারা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ অনুসারে প্রাথমিক
সহকারী শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা ও অবৈধ, অনিয়ম পরিহার করে মেধা ও স্বচ্ছতার
ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার দাবি তুলে ধরেছেন।
জানা যায়, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০২২ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির
পর এ পর্যন্ত চার দফায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
গত ১৪ নভেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হলে পরীক্ষার্থীরা
রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন এবং জেলা পরিষদের গেইটে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন
করেন। এরপর পরীক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে জেলা পরিষদ ২১ নভেম্বর পরীক্ষা গ্রহণের জন্য
পূনরায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কিন্তু এতেও বাধ সাধে উগ্রাবাদী সেটলারদের একটি গোষ্ঠি।
তারা নিয়োগ বৈষম্যের অভিযোগ তুলে পরীক্ষা বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদানসহ রাঙ্গামাটিতে
৩৬ ঘন্টা হরতালের ডাক দেয়। তাদের হরতালের কারণে ২০ নভেম্বর প্রেস ব্রিফিং করে জেলা
পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার আবারো নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এভাবে বার বার পরীক্ষা স্থগিতের ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ
করতে আবেদনকারী প্রায় ৭ হাজার পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত স্মারকলিপিতে বলা হয়, “পরীক্ষার নির্ধারিত দিন আসার একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে পরিষদ কর্তৃক বার বার পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে সকল সম্ভাবনা ও প্রত্যাশাকে ধ্বংস করে প্রায় সাত হাজার পরীক্ষার্থীর জীবন হতাশায় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। বার বার পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীরা আসা-যাওয়ার ফলে আর্থিক সংকট ও মানসিক চাপের একেবারে চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। যা শুধু ব্যক্তি বা পরিবারে নয় বরং জাতীয় জীবনেও এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমরা মনে করি।”
এদিকে, এ বিষয়ে আজ (২২ নভেম্বর) জরুরী সভা শেষে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার ‘উভয় পক্ষের দাবি যৌক্তিক” এমন আখ্যায়িত করে বলেন, “পার্বত্য জেলা পরিষদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘদিন ধরে পরিষদের আইন অনুসরণ করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে কোটা পুনঃ বিন্যাসের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই দুই ব্যবস্থার মধ্যে কোনটি নিয়োগে অনুসরণযোগ্য হবে এ বিষয়ে স্পষ্ট দিক নির্দেশনা পেতে মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত চাওয়া হচ্ছে। নির্দেশনার মাধ্যমে আইনগত অবস্থান পরিষ্কার হলেই স্থগিত হওয়া নিয়োগ পরীক্ষা সম্ভাব্য দ্রুততম সমাপ্ত করা হবে।”
পার্বত্য মন্ত্রণালয়
কী বলেছে?
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ২০ নভেম্বর ২০২৫, “রাঙ্গামাটি পার্বত্য
জেলা পরিষদের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পার্বত্য
চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্পষ্টীকরণ” শিরোনামে একটি বিবৃতি প্রদান করে।
এতে বলা হয়, ... “জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার ঘোষিত কোটা পদ্ধতি পার্বত্য
জেলাগুলোতে একইভাবে প্রযোজ্য হবে কিনা সে বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে এ বিষয়ে আইন,
বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর মতামত গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। এ
প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কোটার বিষয়টি তিন পার্বত্য জেলায়
কীভাবে কার্যকর করা হবে সে বিষয়ে মতামত চেয়ে ইতিমধ্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে
পত্র প্রেরণ করেছে।
“এসকল বিষয়ে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ তাদের
পুনঃঘোষিত লিখিত পরীক্ষা ২১/১১/২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে অনুষ্ঠানের জন্য মন্ত্রণালয়ের
একজন প্রতিনিধি চাইলে উপসচিব পর্যায়ে একজন কর্মকর্তাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক
মন্ত্রণালয় এর প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করা হয়। মন্ত্রণালয় এর প্রতিনিধি যথারীতি
২০/১১/২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এ রিপোর্ট করে জানতে
পারেন যে ২১/১১/২০২৫ তারিখের লিখিত পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, মন্ত্রণালয়
রেগুলেটরী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার নিয়ন্ত্রণাধীন দপ্তরসমূহে এখনও সবরকমের সহযোগিতা
করছে ও করবে, যদি পাৰ্বত্য জেলা পরিষদ লিখিতভাবে সহায়তা চেয়ে থাকে। তবে, পার্বত্য
মন্ত্রণালয় স্থানীয় অবস্থা ও শর্তাদি বিবেচনায় রেখে Meritocracy কে প্রাধান্য দিয়ে
প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নিরপেক্ষতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে সম্ভবপর
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সমাপ্ত করার পক্ষে।”
এতে আরো বলা হয়, “লিখিত পরীক্ষা স্থগিতকরণ, পুনরায় তারিখ ঘোষণা করা, আবার
স্থগিত করা ইত্যাদি বিষয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করেছে। যাহা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়া থেকে পেয়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ
সরাসরি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে নয়। তবে মন্ত্রণালয় পরিষদকে সব ধরণের সহযোগিতা দিয়ে
যাবে।”
তবে ‘নিযোগ বৈষম্য’ বা ‘কোটা’ বিষয়ে অভিযোগ তোলে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি
করা হয়েছে তা পরিকল্পিত বলেই মনে করছেন পরীক্ষার্থীসহ সচেতন মহল। তারা বলছেন, “রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ এর ৩২(২) নং ধারায়
'তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার
বজায় থাকিবে’ বিধানটি বিদ্যমান রয়েছে। কাজেই বাঙালি সেটলারদের পক্ষ থেকে ‘কোটা’ বিষয়ে
যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা জেলা পরিষদের আইনে কোথাও উল্লেখ নেই।”
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের
পক্ষ থেকে ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়’-এর নির্দেশনা দেখে নিয়োগ পরীক্ষার জটিলতা নিরসনের
কথা বলা হলেও পার্বত্য জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইনকে বাদ দিয়ে তা কতটা সম্ভব হবে তা
নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
