""

প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবিচল থেকেছে ইউপিডিএফ: অমল ত্রিপুরা

ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় তিন সংগঠনের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।


ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর সভাপতি অমল ত্রিপুরা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ত জাতি ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণের সাথে থেকে লড়াই সংগ্রাম করার যে প্রতিশ্রুতি ইউপিডিএফ দিয়েছিল, ২৭ বছর ধরে অধিকারে স্বপ্নে বিভোর হয়ে প্রায় ৪ শত নেতা-কর্মী-সমর্থক শহীদ ও বহু সহযোদ্ধার আত্মত্যাগের বিনিময়ে লড়াইয়ে পথে এখনো পর্যন্ত অবিচল থেকেছে। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি, অঙ্গীকার ইউপিডিএফ রক্ষা করেছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।

আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুর ১২টায় শাহবাগ এলাকায় একটি হল রুমে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

“পাহাড় সমতলে সংগ্রামী মৈত্রী জোরদার করুন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে সমর্থন দিন” এই আহ্বানে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামে সভাপতি জিকো ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও পিসিপির সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ চাকমার সঞ্চালনায় আরো আলোচনা করেন পিসিপির সাবেক নেতা লেখক ও গবেষক উৎপল খীসা, ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন সদস্য রুপসী চাকমা।

আলোচনা শুরুর পূর্বে তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও অংশগ্রহণকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ফুল দেয়া শেষ শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।



আলোচনায় অমল ত্রিপুরা বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি’ অসম্পূর্ণ এবং তা দ্বারা জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না বলে চুক্তির আগে তিন সংগঠনের নেতৃবন্দ সমালোচনা করেছিলেন। চুক্তির পরবর্তী ২৮ বছরে তা প্রমাণিত হয়েছে। ‘পার্বত্য চুক্তির’ মাধ্যমে সরকারের নিকট জেএসএসের অস্ত্র সমর্পনে পর যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক শূন্যতার ও অস্থিরতার মধ্যে যাচ্ছিল ঠিক সে সময়ে তৎকালীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পার্টি গঠনের জন্য প্রস্তুতি নেয় এবং আজকের এই দিনে ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠা করে।

ইউপিডিএফের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে মন্তব্য করে অমল ত্রিপুরা বলেন, শাসকগোষ্ঠীর নানা দমন-পীড়ন ও জাতির দালাল প্রতিক্রিয়াশীলদের নানা ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ইউপিডিএফ'র অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করা যায়নি। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে নানা সফলতা ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে শাসকগোষ্ঠী চোখ রাঙানি ও রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে ইউপিডিএফ জনগণকে সাথে নিয়ে লড়াই অব্যাহত রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি, পরিবেশ, জাতীয় সম্পদ ও নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে দীর্ঘ বছর ধরে আন্দোলন জারি রেখেছে।

দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ’২৪ গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে। সম্প্রতি ওসমান হাদি, দিপু দাস, ছোট্ট শিশু আয়েশাকে যেভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং সংবাদপত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠান যেভাবে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করা হয়েছে তা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। একটি গোষ্ঠী তা পরিকল্পিতভাবে করছে। ইউনূস সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে এসকল হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে দেশের জনসাধারণকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি, পাহাড় সমতলে সংগ্রামী মৈত্রী জোরদার করতে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে সমর্থন দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান এবং পাহাড়ে জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার্থে ও পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে বেগবান করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই সংগ্রামে এগিয়ে আসার ছাত্র-যুব-নারী সমাজ ও সংগ্রামী জনতাকে আহ্বান জানান।

সভায় উৎপল খীসা বলেন, ইউপিডিএফ প্রতিষ্ঠাকালীন আমিও ছিলাম। ইউপিডিএফ গঠনে অনেকের সাথে নিজে যুক্ত ছিলাম। এজন্য নিজেকে নিয়ে এখনো গর্ববোধ করি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সমস্যা অনেক গভীর। অতীতে আমাদের পূর্বপুরুষেরা অনেক ভুল করেছিল। যার কারণে এই সমস্যা বা সংকট তৈরি হয়েছিল। আমাদেরকে সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে সংকট মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য ঐক্যবদ্ধ লড়াই সংগ্রাম করতে হবে।

তিনি বলেন, লড়াই সংগ্রামে সঠিক আদর্শ থাকতে হয়, আদর্শ বিকিয়ে দিয়ে কোন কিছু অর্জিত হয় না। গণতান্ত্রিক শক্তি যদি একত্রিত না হয় তাহলে লড়াই সংগ্রাম সফল হতে পারে না। পাহাড়ে অনেক দল শাসকগোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। দলগুলোর মধ্যে একমাত্র ইউপিডিএফ'র সঠিক আদর্শে অবিচল থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউপিডিএফকে চাপিয়ে রাখার জন্য তাদের এলাকায় সেনা অভিযান পরিচালনা করার ঘটনাগুলো তা প্রমাণ করে।

জিকো ত্রিপুরা বলেন, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায় করা সম্ভব নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে ইউপিডিএফের প্রদর্শিত পথে এগিয়ে এসে লড়াই করতে হবে।

প্রমোদ জ্যোতি চাকমা বলেন, ইউপিডিএফ নিজের দলীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে জনগণের স্বার্থে কাজ করছে, দীর্ঘ বছর ধরে আপোষহীন সংগ্রামে অবিচল থেকেছে।

তিনি, অন্তর্বর্তী সরকারে আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা তল্লাশি, দমন-পীড়ন, হয়রানি  বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন। 


রুপসী চাকমা বলেন, স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সংগঠন চালিয়ে যাওয়া এতটা সহজ ছিলো না। ইউপিডিএফ'র স্রোতে বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে লড়াইয়ের অবিচল রয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, এই রাষ্ট্রে যে সরকারের ক্ষমতা আসুক না কেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটেনি। সব সময় শোষণ, নিপীড়ন জারি রাখা হয়। তিনি, স্ব স্ব অবস্থান থেকেই লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments