""

গুইমারা রামসু বাজার সহিংসতা: পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা না পেয়ে পঙ্গুত্বের পথে আহতরা, অর্থ বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন

ছবি সৌজন্য: কালচক্র২৪
 

অন্য মিডিয়া ডেস্ক, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় আহত অনেক মানুষ এখনো পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ পঙ্গুত্বের ঝুঁকিতে পড়েছেন, কেউ বা অর্ধমৃত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

রামসু বাজার এলাকায় গিয়ে আহতদের সঙ্গে কথা বলে এমনই করুণ চিত্র উঠে এসেছে। আহতরা অভিযোগ করেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর এবং ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারা রামসু বাজারে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় আহতদের শুরুতে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে খরচ বহন বন্ধ করে দেয় জেলা পরিষদ। এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিষদ সদস্যরা বর্তমানে ভুক্তভোগীদের ফোন রিসিভ করছেন না কিংবা চিকিৎসার খোঁজও রাখছেন না বলে অভিযোগ আহত ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের।

১ কোটি টাকা বরাদ্দের তথ্য, কিন্তু আহতদের চিকিৎসা থমকে

পার্বত্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় আহত, নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ অর্থ ব্যয়ের জন্য জেলা পরিষদ সদস্য নিটোল মনি চাকমা–কে আহ্বায়ক করে একটি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন—কংজপ্রু মারমা, আবদুল লতিফ, মঞ্জিলা ঝুমা ও সাথোওয়াইপ্রু মারমা।

তবে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে একেকজন একেক ধরনের বক্তব্য দেন, যা সমন্বয়ের ঘাটতি ও সঠিক তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

তথ্য চাইলে উত্তপ্ত প্রতিক্রিয়া, সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণের অভিযোগ

এ বিষয়ে জেলা পরিষদের কাছে তথ্য জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কোনো তথ্য না দিয়ে উল্টো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান এবং সাক্ষাৎ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ সময় পরিষদের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের ধমকের সুরে বলেন, “কোথায়, কখন, কাকে কী প্রশ্ন করতে হয়—সেটাও জানো না তোমরা!”

অথচ এলাকাবাসীর দাবি, ঘটনার সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রামসু বাজারে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

‘২০ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়নি, বাকিটা গেল কোথায়?’

ঘটনার শুরু থেকে আহতদের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করে আসা রামসু বাজার এলাকার বাসিন্দা উক্রাচিং মারমা বলেন,
“আমি শুরু থেকে রোগীদের সঙ্গে ছিলাম। কার কত টাকা খরচ হয়েছে তার হিসাব আমার কাছে আছে। সব মিলিয়ে বড়জোর ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। তাহলে বাকি টাকা কোথায় গেল?”

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৫–৭ জন আহত ব্যক্তি অপারেশন ও পরবর্তী চিকিৎসা না পেয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। কারো পায়ে, কারো হাতে, কারো উরুতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হলেও অর্থের অভাবে চিকিৎসা থেমে আছে।

আহতদের পরিবারে হাহাকার

আহত ক্যজাই মারমা’র স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। ঘটনার দিন আত্মীয়ের বাড়িতে ছিল। গোলযোগ শুরু হলে আমাদের উদ্ধার করতে এসে তার হাতে গুলি লাগে। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ।”

অন্য আহত সাচিংনু মারমা বলেন, “আমিই আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এখন কাজ করতে পারছি না। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি।”

ত্রাণ কমিটির বক্তব্যে অস্পষ্টতা

এলাকাবাসীকে নিয়ে গঠিত ত্রাণ কমিটির সভাপতি কংলাপ্রু মারমা আহতদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তহবিলে কত টাকা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন মাত্র ৬০–৭০ হাজার টাকা আছে, বাকি সব বিতরণ হয়ে গেছে।”

অন্যদিকে জেলা পরিষদের ত্রাণ তহবিল কমিটির আহ্বায়ক নিটোল মনি চাকমা বলেন,
“ফান্ডে এখন আর কোনো টাকা নেই। আহতদের আরও সহায়তা করতে হলে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে নতুন করে চাহিদাপত্র পাঠাতে হবে। তবে চেয়ারম্যান চাইলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, মানবিক সংকট গভীর

চিকিৎসা বিলম্বিত হলে আহতদের অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন—এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। অধিকাংশ আহতই দিনমজুর ও দরিদ্র পরিবারের মানুষ। মানবিক সহায়তা ও স্বচ্ছ তদন্ত ছাড়া তাদের সুস্থ হয়ে ওঠা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

সূত্র: কালচক্র২৪



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments