খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)- এর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ খাগড়াছড়িতে অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র (এসিসি)-এর উদ্যোগে ‘ক্যাম্প ফায়ার’ ও শিশু কিশোর সম্মিলনের আয়োজন করা হয়।
সমমনা ও সতীর্থদের সংহতি সুদৃঢ় মৈত্রী বন্ধন রচনার লক্ষ্যে ২৫ ডিসেম্বর
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৫৫ জনের একটি টিম ক্যাম্প ফায়ারে অংশ নেন।
শিশু-কিশোর সম্মিলন
“বিপুল–লিটন–সুনীল–রুহিন–মিঠুনসহ শত শহীদের রক্তবীজ থেকে জন্ম নেওয়া নতুন
বিপ্লবীরা পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করবোই” এই স্লোগানে ইউপিডিএফ-এর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সদরে অগ্রণী শিশু–কিশোর কেন্দ্রের আয়োজনে এক শিশু–কিশোর সম্মিলন অনুষ্ঠিত
হয়।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর ২০২৫) আয়োজিত এই কর্মসূচিতে খাগড়াছড়ি সদর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
কলেজ শিক্ষার্থী পরানি চাকমার সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ-এর
খাগড়াছড়ি ইউনিয়নের সংগঠন অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি
চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নরেশ ত্রিপুরা ও শহীদ
পরিবারবর্গ।
শুরুতেই ‘আমরা করবো জয়’ গানটির মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। পরে
চৌকস টিমের মাধ্যমে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা
জানানো হয়।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এযাবৎকালে অধিকার প্রতিষ্ঠা লড়াইয়ে যারা শহীদ হয়েছেন
সকল বীর শহীদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শুরুতে বক্তব্য দেন ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনীর গুলিতে
নিহত শহীদ রুবেল ত্রিপুরার মা। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর গুলিতে
আমার ছেলে রুবেল শহীদ হয়। আজ এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত আমার ছেলের বিচার পাইনি।
আমি আমার ছেলে হত্যাকারী সেনাবাহিনীর বিচার চাই।”
ইউপিডিএফ নেতা অংগ্য মারমা বলেন, “আজ ইউপিডিএফ-এর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে
সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। দীর্ঘ ২৭ বছরের সংগ্রামে জনগণের অধিকার রক্ষায় আমাদের
দলে ৩৫৬ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী-সমর্থক শহীদ হয়েছেন। আজ আমরা মনে করি আগামী দিনের বিপুল,
লিটন, সুনীল, রুহিন, মিঠুনসহ শত শহীদের উত্তরসূরি তোমরাই হবে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে
সেনাবাহিনীর গুলিতে জুনান চাকমা ও রুবেল ত্রিপুরা শহীদ হন। চলতি বছরেও খাগড়াছড়ি জেলায়
কার্যত একটি নির্যাতন ও দমন-পীড়নের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। খাগড়াছড়ি সিঙ্গিনালায় ৮ম
শ্রেণির মারমা কিশোরীর গণধর্ষণের বিচারের গণআন্দোলনের সময় গুইমারায় সেনাবাহিনীর গুলিতে
আখ্রসহ তিনজন শহীদ হয়েছেন। তারা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। আমরা যদি আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত
না হই, তাহলে কখনোই আমাদের অধিকার ফিরে পাব না।
অংগ্য মারমা বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন আসছে। এই নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু
ও স্বাভাবিক হবে তা অনিশ্চিত। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের এমন প্রার্থীকে বিজয়ী
করতে হবে, যিনি সংসদে পাহাড়িদের দুঃখ–কষ্ট ও বঞ্চনার কথা স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারবেন।
বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, এনসিপিসহ অন্যান্য শাসকগোষ্ঠিভুক্ত দলের প্রার্থীরা
সংসদে গেলে তারা দলীয় সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে পাহাড়িদের প্রকৃত সমস্যার কথা বলবেন না।
তিনি আরও বলেন, “২০১১ সালে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সংবিধানে ‘বাঙালি’ জাতীয়তাবাদ
চাপিয়ে দেয়। তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে তিনজন পাহাড়ি এমপি থাকলেও তারা এর বিরুদ্ধে
কার্যকর কোনো প্রতিবাদ করেননি। এই বাস্তবতায় আসন্ন নির্বাচনে পাহাড়ি জনগণকে সতর্ক ও
সংগঠিত থাকতে হবে এবং শক্ত অবস্থান থেকে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন ছাড়া পাহাড়ে টেকসই শান্তি ও ন্যায়বিচার
প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই আগামী দিনে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই আরো বেগবান
করতে হবে। অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্রের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম শিশু–কিশোরদের মধ্য থেকেই
আগামীর নেতৃত্ব গড়ে উঠবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন। |





