""

পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে ৭ মার্চ : মুখোশ বাহিনীর বিরুদ্ধে জনতার বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ

’৯৬ সালে মুখোশ বাহিনীর বিরুদ্ধে জনতার লাঠি মিছিল। ফাইল ছবি
।। বিশেষ প্রতিবেদন ।।
৭ মার্চ পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের একটি বীরত্বপূর্ণ দিন। ১৯৯৬ সালের এই দিনে তকালীন সরকার ও সেনাবাহিনীর সৃষ্ট সন্ত্রাসী মুখোশ বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে খাগড়াছড়ির জনতা জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমে পড়েছিল। সেদিন জনতার বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ সংগ্রামে সামিল হয়ে সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন অমর বিকাশ চাকমা। আর এ প্রতিরোধের ফলে সরকার মুখোশ বাহিনী ভেঙে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এই বীরত্বপূর্ণ দিনটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো :

মুখোশ বাহিনী কেন ও কারা গঠন করে :
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও পাহাড়ি গণপরিষদ (পিজিপি)-কে গণতান্ত্রিক পন্থায় মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে তকালীন বিএনপি সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী কর্ণেল(অব:) অলি আহম্মদের প্রত্যক্ষ মদদে ও খাগড়াছড়ি ২০৩ সেনা ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে সমাজের বখাটে যুবকদের নিয়ে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি করা হয়, যা স্থানীয়দের কাছে ‘মুখোশবাহিনী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের মাধ্যমে এলাকার পরিস্থিতি অস্থির করে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমাধান বাধাগ্রস্ত করাই ছিল এর লক্ষ্য। সেনাবাহিনীর ছত্র ছায়ায় থেকে মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল।

সেদিন যেভাবে জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুলে:
সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এলাকায় শান্তি শৃংখলা বিনষ্ট ও জনজীবনে নানা বিঘ্ন সৃষ্টি করলে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। সেদিন (৭ মার্চ) সন্ত্রাসীরা পেরাছড়া গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের ঘরবাড়িতে তাণ্ডব চালাতে শুরু করলে গ্রামের লোকজন “মুখোশ মুখোশ’ বলে চিকার দেয়। আর এতে মুহুর্তের মধ্যেই পেরাছড়া গ্রামের জনতা লাঠিসোটা নিয়ে ছুটে আসে। তাদের চিকার শুনে পেরাছড়ার আশে-পাশের গ্রাম সিংগিনালা, খবংপজ্যা, নারাংহিয়া, মাজনপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকর শত শত লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে সেনা ঔরসজাত মুখোশ বাহিনী গুন্ডাদের ধরতে রাস্তায় নেমে পড়ে।

ইতিমধ্যে শত শত লোক চতুর্দিক থেকে মুখোশ বাহিনী গুন্ডাদের ধরার জন্য ছুটে আসতে থাকে। পেরাছড়া ও স্বনির্ভর এলাকায় মধ্যবর্তী স্টেডিয়াম সংলগ্ন পানছড়ি সড়কে তাদেরকে ঘিরে ফেলে। ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিরোধ ব্যুহ রচনা করে। স্বনির্ভর ও পেরাছড়া এলাকার শষ্যক্ষেত্র রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সেদিন রহস্য জনক কারণে ষ্ট্রীট লাইটগুলো আগে থেকেই অফ করে রাখা হয়। আর্মীরা চালাকি করে তাদের Pick up -এর বাতিও নিভিয়ে ফেলে। এতে হাজার হাজার জনতার ভীড়ে সন্ত্রাসী ও সেনাদের রাতের অন্ধকারে সনাক্ত করা দূরূহ হয়ে পড়ে। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে আর্মিরা ব্রাশ ফায়ার করে ও সন্ত্রাসীরা ককটেল ফাটিয়ে জনতাকে সন্ত্রস্ত করতে চায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিবাদী জনতা ক্ষান্ত হয়নি। বন্দুকের আওয়াজ থামলে উত্তেজিত জনতা “ধর ধর” বলে চিকার করে এগুতে থাকে। এভাবে রাত ৩টা পর্যন্ত চলতে থাকে। প্রতিরোধকোলে স্বনির্ভর এলাকায় সেনাদের গুলিতে মারা যায় অমর বিকাশ চাকমা।

জনতার প্রবল প্রতিরোধের মুখে পরে সেনাবাহিনী ও মুখোশ সন্ত্রাসীরা দুটি পিক আপ যোগে ক্যান্টনমেন্টের দিকে এগুতে থাকে। বীর জনতা তাদেরকে খেজুর বাগান উপজেলা মাঠ পর্যন্ত ধাওয়া করে নিয়ে যায়। সেনা ও গুন্ডারা জনতার তাড়া খেয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার হয়ে ক্যান্টমেন্টে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

জনতার এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ফলে সেনারা পরবর্তীতে আর মুখোশ বাহিনীকে মাঠে নামাতে সাহস পায়নি।

স্মর্তব্য যে, মুখোশ বাহিনী সৃষ্টির অন্যতম হোতা খাগড়াছড়ি ব্রিগেডের তকালীন জি-টু মেজর মেহবুব পরবর্তীতে দুর্নীতির দায়ে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হয়। এরপর তিনি ঢাকায় অপরাধী চক্রের সাথে যুক্ত হয়ে অপহরণ করতে গিয়ে মাইক্রোবাসসহ ধরা পড়েন বলে জানা যায়।

বর্তমানেও সরকার-সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সেই পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে। একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি করে তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও মদদ দিয়ে খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে জনমনে ভীতি সঞ্চার করে কায়েমী স্বার্থ উদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে সেনাবাহিনীর একটি অংশ।

’৯৬ সালের ৭ মার্চ জনতা যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে মুখোশ বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছিল, সেভাবেই গণপ্রতিরোধের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে আরো একটি প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাস সৃষ্টির সময় এসেছে। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জনতাকে গর্জে উঠতেই হবে।
------





1/Post a Comment/Comments

Unknown বলেছেন…
Your Affiliate Money Making Machine is ready -

And making profit with it is as easy as 1 . 2 . 3!

It's super easy how it works...

STEP 1. Input into the system which affiliate products you want to promote
STEP 2. Add some PUSH BUTTON TRAFFIC (it LITERALLY takes 2 minutes)
STEP 3. See how the affiliate products system explode your list and up-sell your affiliate products for you!

So, do you want to start making profits???

Get the full details here