গুইমারা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ ।। খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলাধীন সিন্দুকছড়িতে জোনে ডেকে পাঠিয়ে পাহাড়ি জনপ্রতিনিধি ও কার্বারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার (২০ আগষ্ট ২০২১) বিকালে সিন্দুকছড়ি জোনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে এক জনপ্রতিনিধি জানান, সিন্দুকছড়িতে চলমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও কার্বারীকে সিন্দুকছড়ি জোনে ডেকে পাঠানো হয়। যার কারণে গতকাল বিকালের দিকে সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেডাক মারমা, ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য সবেন জয় ত্রিপুরা, ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য অঞ্জু ত্রিপুরা, ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য খঞ্জয় ত্রিপুরা, ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের নারী সদস্য কুন্তি রানী ত্রিপুরা, রোয়াজা পাড়ার কার্বারী অংক্যথোয়াই ত্রিপুরা, দৈঘ্যছড়া পাড়ার কার্বারী থোয়াইঅং ত্রিপুরা, পংঙ্খিমুড়া পাড়ার কার্বারী কৃপাচার্য ত্রিপুরা, ঠান্ডাছড়ি পাড়ার কার্বারী ধজেন্দ্র ত্রিপুরা, জগন্নাথ পাড়ার কার্বারী শ্যামাচরণ চাকমাসহ জোনে যাই। জোনে গেলে সেখানে আমাদেরকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে দায়িত্বেরত জোন অধিনায়ক, সার্জেন্ট মোহাম্মদ রাসেল, ওয়ারেন্ট অফিসার মোহাম্মদ আজিজ আমাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
আরো এক জনপ্রতিনিধি জানান, জোন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে শাঁসিয়ে বলে যে, গত ১৮ আগস্ট আমরা (সেনাবাহিনী) যে ঘরটি নির্মাণ করেছিলাম [মূলত সোহেল ত্রিপুরার জায়গা ও বসতভিটা দখল করেই তারা ঘরটি নির্মাণ করেছে] সে ঘরটি তোমাদের লোকেরা ভেঙে দিয়েছে। এটি আগামী ৩৬ ঘন্টার মধ্যে তৈরি করে দিতে হবে। তা না হলে ‘ঢোল বাজালে যেভাবে বাজে সেভাবে আমরাও বাজাতে ও থামাতে জানি’ বলে হুমকি প্রদান করা হয়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে অপর আরো একজন বলেন, আমাদেরকে জোনে ডেকে যেভাবে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে, কার্যত তা অপমান করা ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও ৩৬ ঘন্টার মধ্যে ঘরটি তৈরি করে দেয়ার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কিন্তু তারা (সেনাবাহিনী) ১২ ঘন্টার মধ্যে সেটলার বাঙালিদের দিয়ে উক্ত স্থানে ঘর তৈরি করে ফেলেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ আগষ্ট সিন্দুকছড়ির মনাজয় কার্বারী পাড়ার বাসিন্দা সোহেল ত্রিপুরার ভোগদখলীয় জায়গা ও বসতিভটা দখল করে সিন্দুকছড়ি জোনের সেনা সদস্যরা বাঁশ দিয়ে একটি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। নির্মাণাধীন ঐ ঘরটি ’১৯ আগস্ট রাতে ভেঙে দেয়া হয়েছে’ এমন অজুহাত দেখিয়ে গতকাল জনপ্রতিনিধি ও কার্বরীদের জোনে ডাকা হয়েছিল।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয়দের ধারণা, এলাকার পাহাড়ি জনগণকে চাপে রাখার জন্য হয়তো তারা নিজেরাই ঐ ঘরটি ভেঙে ফেলেছে।
এর আগে গত ১৭ জুলাই সোহেল ত্রিপুরা সিন্দুকছড়ি জোন কর্তৃপক্ষের হুমকি ও চাপের মুখে উক্ত স্থানে তার নির্মিত বসতবাড়িটি ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয়েছিলেন।
এছাড়াও সেনা সদস্যদের দ্বারা গত ১২ জুন রাতে পঙ্খিমুড়াতে সনে রঞ্জন ত্রিপুরার নির্মিত বাড়ি ভাঙচুর ও বসতভিটা দখল এবং ২৯ জুন রাতে ননজয় ত্রিপুরা নামে অপর এক গ্রামবাসীর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিন্দুকছড়ি-মহালছড়ি সড়কের আশে-পাশের এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ি বাসিন্দারা জায়গা-জমি বেদখল ও উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন। কখন কার জায়গা জোর করে দখল করা হয় সে আশঙ্কায় তারা দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।