""

পিসিপি’র ঢাকা শাখার ১৭তম কাউন্সিল সম্পন্ন, ২৭ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত


ঢাকা, সিএইচটি নিউজ
।। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র ঢাকা মহানগর শাখার ১৭তম কাউন্সিল গতকাল ১৫ অক্টোবর ২০২১ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শামসুর হক ভবনের একটি হল রুমে সম্পন্ন হয়েছে। এতে তুলতুল চাকমাকে সভাপতি ও অর্ণব চাকমাকে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

‘নির্যাতন-নিষ্পেষণের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে নাভিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা নয়, অস্তিত্ব সংকট নিরসনে জাতির দিশারী হও ছাত্র সমাজ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে উক্ত কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি শুভাশীষ চাকমা। সাধারন সম্পাদক রিপন চাকমার সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিনিধি মিথন চাকমা, ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র কেন্দ্রীয় সহ-সাধারন সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অংকন চাকমা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা।

কাউন্সিল অধিবেশন শুরুতে ১৬তম কাউন্সিলের প্রয়াত দুই সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ৩য় বর্ষের ছাত্র সুমন চাকমা (সহ-সভাপতি) ও তিতুমীর কলেজের স্নাতক ১ম বর্ষের ছাত্র নুহায়চিং মারমা (কার্যকরী সদস্য)’সহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সকল শহীদের উদ্দেশ্যে শোক প্রস্তাব পাঠ করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পিসিপি ঢাকা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তীর্থ ত্রিপুরা।

মিথন চাকমা বলেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র একটি সার্টিফিকেট অর্জন নয়। মানবিক মূল্যবোধ, শেখড়ের প্রতি টান, জাতিসত্তাবোধ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা যদি নাইবা থাকে তাহলে সে শিক্ষার কোন মূল্য থাকতে পারেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণের মধ্য দিয়ে আমরা যদি শুধু নিজের স্বার্থ নিয়ে মগ্ন থাকি তাহলে আমাদের জাতির অস্তিত্ব বিলীন হতে বাধ্য। সুতরাং, ছাত্র জীবন শেষে আমাদের প্রয়োজন সমাজের, জাতির হাল ধরা।


প্রমোদ জ্যোতি চাকমা বলেন, যুগে যুগে যেকোন আন্দোলনে ছাত্র সমাজের পাশাপাশি শ্রমিকদের অবদান ছিল অতুলনীয়। জাতির এহেন ক্রান্তিলগ্নে ছাত্র সমাজের সাথে আমাদের মত শ্রমিকরাও আন্দোলনে একাত্ব হতে না পারলে সেই আন্দোলন পরিপূর্ণতা পাবেনা। তিনি উক্ত সম্মেলন থেকে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জনের আন্দোলনে অধিকারহারা শ্রমিককুলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

পিসিপির সহ-সভাপতি অংকন চাকমা বলেন, আমরা আজকে যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পড়তে এসেছি তার সমষ্ট খরচপাতি পাঠানো হয় পরিবার থেকে। এখন সেই পরিবারের সমষ্ট জমি যদি জবরদখল হয়ে যায় তাহলে আমরা পড়াশোনা করবো কিভাবে? আপনি যতই বড় চাকরি করেন না কেন, রাজনৈতিক ক্ষমতা, জাতির অস্তিত্বই যদি না থাকে তাহলে সেই চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রী অর্জনের মূল্য কোথায়? দাস্য মনোভাব এবং পলায়নবাদী-লেজুরবৃত্তির চিন্তাধারা যদি মনে গেঁথে রাখি আমরা তাহলে সেখানে পড়ালেখার করার স্বার্থকতা নেই। তিনি উপস্থিত সকলকে নিজেদের সত্তা বিসর্জন না করে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার মর্যাদা অর্জনে পিসিপির পতাকাতলে সমবেত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।

পিসিপির সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা চলেন, রাজধানী ঢাকা অঞ্চল যেকোন আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকে বিভিন্ন সংগঠনে নেতৃত্ব ইনপুট হয়। তদ্রুপ পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। আমি মনে করি আগামী দিনের জাতির নেতৃত্বের হাল ধরবে তোমরাই। আন্দোলনের রেঁনেসা সৃষ্টি করবে তোমরাই। দাসত্ব মানসিকতা পরিত্যাগ করে আমাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম শোষণ-বঞ্চনা, নির্যাতন-নিপীড়ন, বিনা বিচারে হত্যা, ভিটেমাটি বেদখল, ধর্ষণের মত ঘটনা বিলুপ্ত হবেই। যারা নতুন দায়িত্ব নিবে তারা আগামীতে জাতির হাল ধরবে, পৃথিবীর যেখানে অত্যাচার-অনাচার হবে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হবে বলে তিনি আশাবাত ব্যক্ত করেন।

সভাপতির বক্তব্য শুভাশীষ চাকমা বলেন, আমাদের পূর্বসূরীদের আন্দোলনের ব্যর্থতার করুণ পরিণতির কুফল ভোগ করছে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণ। তাই আমরা যদি এখন রুণাঙ্গনের সারিতে এক্যবদ্ধ হয়ে গণআন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারি তাহলে ভবিষ্য
প্রজন্মের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। তাদের ভবিষ্য বসাবসের সুগম প্লাটফরমটি আমাদেরকেই তৈরি করে দিয়ে যেতে হবে। আগামী দিনে এই ঢাকা শাখা থেকে তুখোর ছাত্রনেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্ব দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি তার বক্তব্যর পরে কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণা করার আগে ২৭ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। কাউন্সিলে উপস্থিত সকলে করতালি দিয়ে ঘোষিত কমিটিকে পাস করে নেন।

পরে নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ্য করান পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অংকন চাকমা।





0/Post a Comment/Comments