অনলাইন ডেস্ক, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালিতে সাজেক জুনিয়র হাইস্কুলের সামনে
দোকান নির্মাণ করছে বিজিবি। এতে বিদ্যালয়ের ভেতরে বিভিন্ন সমস্যা হওয়ায় অসন্তোষ
দেখা দিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
সম্প্রতি
সরেজমিন জানা গেছে, সাজেক ভ্যালির রুইলুইয়ে সড়কের পাশে সাজেক জুনিয়র হাইস্কুলের
অবস্থান। এই বিদ্যালয়ের সামনে সেমিপাকা ছয়টি দোকানে ছাউনি দেওয়া হচ্ছে। দোকানগুলোর
কারণে বিদ্যালয়ে অন্ধকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একটি সরু পথ দিয়ে শিক্ষার্থীরা
যাতায়াত করছে। বিদ্যালয়ের সমাবেশস্থলে এসব দোকান তৈরি করায় শিক্ষার্থীরা সমাবেশ
করতে পারছে না।
বিদ্যালয়ের
শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা তিনটি। শিক্ষকদের জন্য কক্ষ একটি। দোকান নির্মাণকাজের
সুবিধার্থে লাইব্রেরির কক্ষটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। লাইব্রেরির বইগুলো শিক্ষকদের কক্ষে
রাখা হয়েছে।
একাধিক
শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়কে এখন তাদের কাছে একটি বদ্ধ ঘর মনে হয়। শ্রেণিকক্ষের
পাশে নির্মাণকাজ চলতে থাকায় তারা পাঠে মনোযোগী হতে পারছে না। শ্রেণিকক্ষ থেকে বের
হলে পাকা দেয়াল যেন নাকে-মুখে লেগে যায়। সমাবেশ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৫ জন। কক্ষ কম থাকায়
বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাচ্ছে না। বিদ্যালয়ের আশপাশে চারটি সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয় আছে। স্থানীয় বেটলিং, শিয়ালদাহ ও তুইচুই এলাকা থেকে বিভিন্ন শিক্ষার্থী
এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু বসার জায়গা ও শ্রেণিকক্ষের সংকটে ভর্তি করাতে
পারছে না কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক ববীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘স্কুলটি বাঘাইছড়ি মারিশ্যা বিজিবি জোন
পরিচালনা করছে। দোকান নির্মাণের আগে আমাদের বলা হয়েছিল দোকান থেকে যে আয় আসবে সে
টাকা দিয়ে স্কুল পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা হবে। সাজেক ভ্যালির মসজিদের পাশে
স্কুলের নামে দেড় একর জায়গা আছে সেখানে এটি স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে। এ কথা আরও
৮-১০ বছর আগে থেকে বলা হয়ে আসছে, কিন্তু কাজ আর হয়নি।’
প্রধান
শিক্ষক আরও বলেন, ‘বর্তমানে স্কুলে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীদের বেশি
সমস্যা হচ্ছে। সাজেকে এই স্কুলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার
পরিবেশ দেওয়া হলে এখানে আরও দ্বিগুণ শিক্ষার্থী ভর্তি হবে। দ্রুত এর নতুন ভবন
নির্মাণ করা হলে এলাকার জন্য মঙ্গল হবে।’
রুইলুই
মৌজার হেডম্যান এল থাংগ্যা পাংখোয়া বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ। এটা বিজিবি করছে।
আমরা কিছুই বলতে পারি না। এ কথা বললে শুধু চোখের পানি চলে আসে। এ কাজ বন্ধ করতে
হলে আমাদের মিছিল করতে হবে। স্কুলের নামে আমি দেড় একর রেকর্ড করা জায়গা দিয়েছি। সে
জায়গায় মসজিদ করা হয়েছে। স্কুল হবে বলা হয় তা অনেক বছর ধরে। এরপরে মসজিদ উঠে গেছে।
স্কুলের খবর নেই।’
বিদ্যালয়ের
একটি সূত্র জানায়, স্থানীয়রা তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য ১৯৯৮ সালে
সাজেক জুনিয়র হাইস্কুল নাম দিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাজেকে এলে তাঁর সম্মানে মারিশ্যা বিজিবি জোন বিদ্যালয়টি
সংস্কার করে নাম দেয় রুইলুই জুনিয়র হাইস্কুল। এর পর থেকে বিজিবি স্কুলটি
নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরবর্তীকালে বিদ্যালয়টি অফিশিয়াল জটিলতায় পড়লে এর নাম
প্রতিষ্ঠাকালীন নামে ফিরিয়ে আনা হয়।
সাজেক
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, ‘আমরা স্থানীয় অভিভাবকেরা ও
জনপ্রতিনিধিরা স্কুল সম্পর্কে কথা বলতে পারি না। স্কুলটি রুইলুই মৌজায়
অন্তর্ভুক্ত। এই স্কুল অনেক বছর হলো করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি এটি এমপিওভুক্ত
করা হোক। কিন্তু বিজিবি নিয়ন্ত্রণের নেওয়ার পর সব কাজ থমকে যায়। এই স্কুল নিয়ে
কোনো কথা বলতে পারেন না স্থানীয়রা। এখন এর সামনে দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। সাজেক
ভ্যালিতে যেভাবে রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, এতে স্কুল নির্মাণ করার জায়গা তো কমে এসেছে।’
এ বিষয়ে মারিশ্যা বিজিবি মিডিয়া উইং-এর হাবিলদার মো. সাখাওয়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিদ্যালয়ের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা সিরাজ মাস্টারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
সিরাজ
মাস্টার বলেন, ‘স্কুলের ব্যয় অনেক। এই ব্যয় নির্বাহের জন্য স্কুলের সামনে দোকান
করা হচ্ছে সেটা জানি। নতুন জায়গায় নতুন বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি
লেখা হয়েছে। তবে জানামতে প্রকল্প এখনো অনুমোদন হয়নি। টেন্ডারও হয়নি। তবে হবে।
বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করতে আবেদন করা হয়েছে। বোর্ড থেকে কর্মকর্তা পরিদর্শন করে
গেছেন।’
নতুন বিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত পাঠদান ব্যাহত করে বিদ্যালয়ের সামনে কেন
দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজ মাস্টার বলেন, ‘এ বিষয়ে
বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানবে। আমরা তাঁদের বাইরে কোনো কথা বলতে পারি না।
তাঁরা সব জানবেন।’
সূত্র: আজকের পত্রিকা
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।