""

কল্পনা অপহরণ মামলার বাদীর নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করেছে আদালত!

কল্পনা চাকমা। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলায় পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের উপর বাদীর দাখিল করা নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছে আদালত।

আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল ২০২৪) সকালে রাঙামাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টট আদালতে (১ম আদালত) বাদীর নারাজি আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমার পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন আইনজীবী জুয়েল দেওয়ান, রাজীব চাকমা এবং সুস্মিতা চাকমা। এসময় বাদী কালিন্দী কুমার চাকমাও উপস্থিত ছিলেন।

পরে বিকাল ৩টার সময় ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা বেগম পুলিশের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমার নারজি আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন।

মামলার বাদী কল্পনার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বলেন, অপহরণের ২৮ বছর পরে এই আদেশ দুঃখজনক। তিনি তাঁর আইনজীবীদের এবং এদেশের সকল মানবাধিকার কর্মীদের যারা কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচারের দাবিতে শামিল হয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান বলেন, আমরা এই আদেশের ক্রিমিনাল রিভিশন চাইবো, প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাবো।

এদিকে, আদালতের এই আদেশের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রয়া জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী ও বাদী পক্ষের লোকজন। তারা বলেছেন, এই আদেশের মধ্য দিয়ে মূলত কল্পনা অপহরণ ঘটনায় অভিযুক্ত লেফটেনান্ট ফেরদৌস গংদের দায়মুক্তি দিয়ে মামলাটি ডিসমিস করা হয়েছে। তবে কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার দাবিতে আন্দোলন চলবে বলে তারা জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন বাঘাইছড়ির নিউ লাল্যাঘোনার নিজ বাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর তৎকালীন কজইছড়ি ক্যাম্প কমাণ্ডর লে. ফেরদৌস গং কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়। উক্ত ঘটনায় কল্পনার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা থানায় লে. ফেরদৗস গংদের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও এজাহারে অভিযুক্তদের নাম বাদ দেওয়া হয়।

মামলার দায়েরের দীর্ঘ সময় পর ২০১০ সালের ২১ মে বাঘাইছড়ি থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফারুক প্রথম চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা এ প্রতিবেদনের ওপর নারাজী দিলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। এরপর সিআইডি’র তদন্ত কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ দুইবছর তদন্ত করে চিহ্নিত অপহরণকারীদের নাম বাদ দিয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ তার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

সিআইডি’র তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর বাদী নারাজী দিলে বিজ্ঞ আদালত ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ আরও অধিকতর তদন্তের জন্য রাঙামাটি পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। এরপর ২০১৪ সালের ২০ জুলাই পুলিশ সুপার আমেনা বেগম তদন্ত অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিল করে বলেন যে “বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ মতে লেঃ ফেরদৌস এবং ভিডিপি সদস্য নূরুল হক ও ছালেহ আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের জবানবন্দির আলোকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। ঘটনার ১৮ বছর পরে ভিকটিমের চেহারায় অনেক পরিবর্তন হতে পারে। তাই অদূর ভবিষ্যতে তাকে উদ্ধার করা হলেও চেহারা দেখে শনাক্ত করা নাও যেতে পারে। কল্পনার ভাইয়েরা বৃদ্ধ বিধায় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হলে তাকে চিহ্নিত করার জন্য তার ভাইদের ডিএনএ সংগ্রহের জন্য আদালতের নির্দেশপ্রাপ্ত  হলেও মামলার বাদী ও তার ভাই লাল বিহারী চাকমা ডিএনএ সংরক্ষণের জন্য আগ্রহী নয় বিধায় তা সংগ্রহ করা হয়নি। যেহেতু এই মামলার মূল সাক্ষী ভিকটিম কল্পনা চাকমা নিজেই, তাই উক্ত কল্পনা চাকমা উদ্ধার না হওয়া কিংবা তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত মামলার তদন্ত শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না।”

বাদীর পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদন নাখোশ করা হলে ২৭ মে ২০১৫ রাঙামাটি জেলা জজ আদালতের বিচারিক হাকিম মোহসিনুল হক আবারো অধিকতর তদন্তের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

এরপর ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মামলার ৩৯তম তদন্ত কর্মকর্তা রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান ‘ভিকটিমের অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই’ মর্মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

পুলিশ সুপারের উক্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের উপর আদালতে আবারো নারাজি আবেদন দাখিল করেন মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা। এরপর বাদীর নারাজি আবেদনের ওপর শুনানির নামে কালক্ষেপণ করে আজ এই আদেশ দেওয়া হলো।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments