গত ২২ এপ্রিল আটক এই তিন বম নারীকে দুগ্ধপোষ্য ও নাবালক শিশুসন্তানসহ কারাগারে প্রেরণ করা হয়। সংগৃহিত ছবি |
বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
বান্দরবানে চলমান কেএনএফ-বিরোধী রাষ্ট্রীয়
বাহিনীর যৌথ অভিযানে এ পর্যন্ত এক বম কলেজ ছাত্রসহ ৩ জনকে হত্যা ও ৭৮ জন বম নারী-পুরুষকে
গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া এক দুধের শিশুসহ ৪ নাবালক
শিশুকেও তাাদের মায়েদের সাথে কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে ব্যাংক
ডাকাতি ঘটনার পর থেকে থেকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় বাহিনী রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি
উপজেলায় কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। এতে উক্ত হত্যাকাণ্ড ও গণগ্রেফতারের
ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, আজ রবিবার (২৮ এপ্রিল ২০২৪) সকালে রুমা-থানচি
উপজেলার রেমাক্রী-প্রাংশা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাকলাই পাড়ায় দু’জনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ
পাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, আজ ভোররাতে উক্ত এলাকায় তারা অনেক গুলির শব্দ
শুনেছেন। আজ সকালে গুলিবিদ্ধ মরদেহগুলো সেখান জঙ্গলের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে তারা
পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এতেই ধারণা করা হচ্ছে,
অভিযানকারী সেনাবাহিনীর সদস্যদের গুলিতেই তারা নিহত হয়েছেন।
তবে নিহতদের নাম জানা যায়নি।
এ ঘটনায় দুপুরে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনীর অভিযানে কেএনএফের দু’জন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল সেনাবাহিনী রুমা উপজেলার মুনলাই পাড়ায় অভিযানের নামে বান্দরবান কলেজের বিএ (অনার্স)-এর ছাত্র লালরেম রুয়াত বমকে (২৮) বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী লাল রেম রুয়াত বমের পিতার নাম মৃত লালথুয়াই তেলং বম, তিনি স্থানীয় মৌজার হেডম্যান ছিলেন। এছাড়া একই দিন সকালে সেনাবাহিনী মুনলাই পাড়ায় এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ার ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করে করলে এতে সেলি বম (১৯) নামে এক নারী আহত হন।
লালরেম রুয়াত বম। গত ২২ এপ্রিল সেনাবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। |
এদিকে, গত ২৪ এপ্রিল সেনাবাহিনী রুমার পানখিয়ং পাড়ায় গিয়ে পাড়ার নারী-পুরুষকে ধরে নিয়ে হয়রানি করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে অবশ্য তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা যায়।
অপরদিকে, দুই সপ্তাহের অধিক চলা যৌথ বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত ৭৮ জনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে গর্ভবতী নারী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসা শিক্ষার্থী, জাতীয় দলের জিমন্যাস্টিক খেলোয়াড়, চাকুরিজীবী, ধর্মীয় গুরু, বাগানচাষী, দিনমজুর রয়েছেন। আর কয়েকজন মায়ের সাথে দুধের শিশুসহ নাবালক চার শিশুকেও কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে
সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল মুনলাই পাড়া আটক ভান নুন নোয়াম (৩৩), লাল নুন নোয়াম (৬৮), লাল দাভিদ বম (৪২), চমলিয়ান
বম (৫৬), লাল পেক লিয়ান (৩২), লাল মিন বম (৫৬) ভান বিয়াক লিয়ান বম (২৩)-কে কারাগারে
পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ভান নুন নেয়াম রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বলে জানা যায়।
আটকের পর পরই তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে মর্মে সংবাদ মাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি
দেওয়া হয়।
শুধু বম
জাতিসত্তার জনগণকে নয়, অন্যান্য জাতিসত্তার লোকজনকেও কেএনএফের সাথে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের
চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত ১৬ এপ্রিল রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন থেকে ৮
জন ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে অস্ত্রসহ ছবি তোলে ‘কেএনএফ সন্ত্রাসী’ আটক করার তথ্য জানিয়ে আইএসপিআর থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেওয়ায়
পরদিন তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা যায়।
চলমান যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে বর্তমানে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলাসহ আশে-পাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা
বিরাজ করছে। জনমনে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। ইতোমধ্যে অনেক বম পরিবার নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে
নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে বন্ধ রয়েছে যানবাহন
চলাচল। সেখানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী তল্লাশি চালাচ্ছে। তল্লাশি করে আরো দুই
জনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে, তবে তাদের নাম জানা যায়নি।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।