""

রোয়াংছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যার শিকার লালমিন তলুয়াং বম একজন প্রতিবন্ধী!

বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ৪ মে ২০২৪

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার পাইক্ষ্যং পাড়ায় গত বৃহস্পতিবার (২ মে ২০২৪) সেনাবাহিনী কর্তৃক যে কয়েকজন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে লালমিন তলুয়াং বম (২৫) নামের একজন রয়েছেন। তিনি একজন প্রতিবন্ধী বলে পরিবারের লোকজন নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে  জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা/৪টার দিকে কেএনএফ বিরোধী অভিয়ানের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য রোয়াংছড়ি উপজেলার পাইক্ষ্যং পাড়ায় হানা দিয়ে পাড়ার কার্বারীসহ অন্তত ২১ জন সাধারণ বম গ্রামবাসীকে আটক করে। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটককৃতদের একটি স্থানে জড়ো করে। পরে সেখান থেকে আলাদা করে নিয়ে অন্তত ৫ জনকে ঠাণ্ডামাথায় গুলি করে হত্যা করে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

লালমিন তলুয়াং বম (২৫)-এর মরদেহ। গত ২ মে রোয়াংছড়ির পাইক্ষ্যং পাড়া এলাকায় সেনাবাহিনী তাকে ঠাণ্ডামাথায় গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পরে গতকাল দুপুরে চ্যানেল২৪ নামের একটি টিভি চ্যানেলের খবরে রোয়াংছড়িতে একজনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য জানানো হয়।

এরপর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্ধারকৃত লাশটি আটককৃত ২১ জনের মধ্যে লালমিন তলুয়াং বম (২৫) নামের একজনের। তার বাড়ি পাইক্ষ্যং পাড়ায় এবং তিনি একজন প্রতিবন্ধী।

পরিবারের লোকজন লালমিন তলুয়াং বমের বিষয়ে বলেন, ছোটকাল থেকে তার কিছুটা মানসিক সমস্যা ধরা পড়ে। দশম শ্রেণী পর্যন্ত কোনরকমে পড়াশোনা করার পর তার রোগটি বাড়লে তাকে এলাকার কবিরাজের কাছ থেকে চিকিৎসা করানো হয়। এ বিষয়ে এলাকার সবাই অবগত রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার পরও তেমন সুস্থ না হওয়ায় তাকে আলাদা একটি ছোট ঘর তৈরি করে দিয়ে তাঁর মা সহ পরিবারের লোকজন তাকে খাওয়া-দাওয়াসহ প্রয়োজনীয় দেশাশোনা ও সহযোগিতা প্রদান করতেন। প্রায় ৫ বছর ধরে তিনি এভাবেই জীবন-যাপন করছিলেন।

কিন্তু গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে তারা মিডিয়ার খবরে ‌‘রোয়াংছড়ি পাইক্ষ্যং পাড়ায় এক কেএনএফ সদস্য সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা গেছে’ এমন খবর তারা দেখতে পান।

এরপর তারা খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হন যে উদ্ধারকৃত লাশটি তাদের প্রতিবন্ধী ছেলে লালমিন তলুয়াং বমের। এতে তারা খুবই মর্মাহত হয়ে পড়েন।

একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে এভাবে কেএনএফ সদস্য সাজিয়ে বিনা বিচারে হত্যার ঘটনা তারা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।

অপরদিকে, দুই দিন অতিবাহিত হলেও আটককৃত অপর গ্রামবাসীদের এখনো পুলিশের নিকট বা আদালতে সোপর্দ করা হয়নি। তাদেরকে কোথায় রাখা হয়েছে তাও জানা যায়নি।

উল্লেখ্য. গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা্ ও থানচিতে নাটকীয় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৭ এপ্রিল থেকে কেএনএফের বিরুদ্ধে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলা ও আশে-পাশের এলাকায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ অভিযানে সাধারণ লোকজনকে বিচার বহির্ভুত হত্যা, গণগেফতার ও নানা নিপীড়ন-হয়রানিসহ নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। ফলে এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments