""

ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ ও জাতীয় ঐক্যের দাবিতে সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ


বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

সংঘাত নয়, জাতীয় ঐক্য চাই শ্লোগানে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক একটি রাজনৈতিক দল ও পোষ্য সন্ত্রাসী দিয়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জারী রেখে অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে রাঙামাটির সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর ২০২৪) সকালে সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটি এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।

বিক্ষোভে অংশ নিতে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকার লোকজন সাজেক পর্যটন সড়কের বাঘাইহাট বনানী বন বিহারের মূল ফটকে জড়ো হন।

এরপর সকাল ১০টায় সংঘাত বন্ধ ও ঐক্যের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে এবং নানা শ্লোগান দিয়ে হাজারো জনতা বনানী বন বিহার গেইট থেকে মিছিল শুরু করেন। তারা মিছিল নিয়ে সাজেক পর্যটন সড়কের দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে উজো বাজারে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হন।


সমাবেশে জেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মেহেন্দ্র ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব বাবু ধন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাজেক কার্বারি এসোশিয়েশনের সভাপতি নতুন জয় চাকমা,সা জেক জুমচাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জোতি লাল চাকমা (কার্বারি) ও সাজেক ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার পরিচয় চাকমা। এছাড়া এতে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক, বঙ্গলতলী, রূপকারীসহ বিভিন্ন এলাকার কার্বারী-হেডম্যান, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীগণ উপস্থিত ছিলেন।

মেম্বার পরিচয় চাকমা বলেন, জনগণ আমরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। কিন্তু যারা আমাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা ঐক্য হতে পারছেন না। আজকে আমাদের এই সমাবেশের মাধ্যমে যে ঐক্যের কথা বলছি সে বিষয়ে তাদেরকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। আজকে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে যারা সমবেত হয়েছেন তাদের একটাই দাবি হচ্ছে ঐক্য।

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের জন্য আন্দোলন করে থাকেন তাহলে জনগণের ঐক্যের আহ্বানে তাদের অবশ্যই সাড়া দেওয়া দরকার, তাদের ঐক্য হওয়া দরকার। কারণ জনগণ তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

পরিচয় চাকমা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, যে রাজনৈতিক দল জনগণের ঐক্যের ডাকে সাড়া দেবে না, জনগণের দাবি মানবে না সেই রাজনৈতিক দলকে জনগণ বয়কট করবে। এ সময় উপস্থিত সকলে হাত উঁচিয়ে তার বক্তব্যের সমর্থন জানান।

তিনি ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের কল্যাণে আন্দোলন করে থাকেন তাহলে কেন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন না? যদি ঐক্য হতে না পারেন তাহলে জনগণ আপনাদের সহযোগিতা বন্ধ করে দেবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা সত্যিকার অর্থে জনগণের কল্যাণে রাজনীতি চাই, সংঘাতের রাজনীতি চাই না। আমরা ঐক্যের রাজনীতি চাই। ঐক্য, সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত ক্রমে যদি স্বায়ত্তশাসন কিংবা পার্বত্য চুক্তির পক্ষে কথা বলতে হয় তাহলে জনগণ তা করবে।

জ্যোতি লাল কার্বারি বলেন, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত নিরসনের দাবি জানাতে আমরা আজকে এখানে মিলিত হয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে পাহাড়িদের বাঙালি বানানোর বিরুদ্ধে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন জনগণ তাতে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করেছে। কিন্তু ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে চুক্তি হলেও তা এখনো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। চুক্তির পরবর্তীতে যে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত শুরু হয়েছে তা আজো চলছে।  

তিনি আরো বলেন, আমরা শাসকগোষ্ঠির দ্বারা নিপীড়িত হয়ে আসছি। কিন্তু এখন যারা রাজনীতি করছেন তারা জনগণের কল্যাণ না করে নিজেরা সংঘাতে লিপ্ত হয়েছেন। এই সংঘাতের ফলে জাতি ও জনগণের ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমরা সংঘাতের রাজনীতির অবসান চাই, ঐক্যের রাজনীতি চাই।

জ্যোতি লাল কার্বারি বলেন, আমরা জায়গা-জমি হারিয়ে উচ্ছেদ হতে হতে আজকে সাজেকে এসে পৌঁছেছি। এখান থেকেও উচ্ছেদের মুখে রয়েছি। সেজন্য আমি আজকের এই সমাবেশ থেকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই যে, আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের জন্য রাজনীতি করে থাকেন তাহলে অচিরেই সংঘাত বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ হোন।

তিনি আরো বলেন, আমরা বহু বছর ধরে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং করে আসছি। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে সরকার আমাদের মিছিল-মিটিংকে কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। সরকার আমাদেরকে মানুষ হিসেবেও গণ্য করছে না। যখন আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হবো, সকল রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হবে তখন আমাদের এই পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তি বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন বলেন আমরা অবশ্যই আদায় করতে পারবো। আর যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে তেরটির অধিক জাতিসত্তা রয়েছি তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলার পর ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচলসহ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের পক্ষে মিছিল-মিটিং করেছেন। সেসব মিছিল-মিটিংয়ে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের দলগুলোকে ঐক্য  হওয়ার কথা বলেছেন। তাদের এসব আহ্বান আমরা স্যোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।

তিনি অচিরেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঐক্য না হলে আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষা করা যাবে না। যদি ঐক্যবদ্ধ না হন তাহলে জনগণ আর আপনাদের সহযোগিতা দেবে না। তাই ঐক্যবদ্ধ হোন, জাতিকে রক্ষা করুন, মাতৃভূমিকে রক্ষা করুন।

নতুন জয় চাকমা বলেন, আমরা সকলে ঐক্য ঐক্য করছি, কিন্তু কেউ কোন কথা শুনছে না। এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাপার। সম্প্রতি দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে যে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা হলো এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। মিজোরাম, আগরতলাসহ বিভিন্ন জায়গায় বসবাসরত পাহাড়িরা পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।


তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংহতি সমিতি, ইউপিডিএফসহ যেসব দল রয়েছে তারা কেন ঐক্য হতে পারছে না? জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তারা কেন একটুও বিচলিত হচ্ছেন না।

তিনি আরো বলেন, আমরা সাধারণ জনগণ ঐক্য ঐক্য করলেও দলগুলোর যদি ঐক্যের মানসিকতা না থাকে তাহলে তো ঐক্য হবে না। তাই কীভাকে এই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা যায় সে ব্যাপারে সকলের প্রচেষ্টা থাকতে হবে, আলোচনা করতে হবে।

তিনি সম্প্রতি খাগড়াছড়ির পানছড়ি এলাকায় সংঘাতের কথা তুলে ধরে বলেন, ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি করে কখনো জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষা করা যাবে না। রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের একতা ছাড়া কোন উপায় নেই।  



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments