আলোচনায় বক্তব্য রাখছেন রোনাল চাকমা। |
চবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি(SAD)-এর আয়োজনে “বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি : সংকট ও সম্ভাবনা” শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশনসহ ১৬টি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর ২০২৪) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান
অডিটোরিয়ামে বিকাল ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আলোচনা চলে।
আলোচনায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি’র সভাপতি রোনাল চাকমা বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে
আমাদের এই প্রত্যাশার জায়গা তৈরি হয়েছে যে
সমতল এবং পাহাড়ের সবার আত্মমর্যাদা ও সমতার প্রশ্নে একই অবস্থান জারি থাকবে যাতে নতুন
বাংলাদেশ বহু জাতি, বহু ভাষা এবং বহু সংস্কৃতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত থাকে। জুলাই অভ্যুত্থানেট
মূল চেতনা হল ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে সারা দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম
করা।”
তিনি প্রশ্নোত্তর পর্বে দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের
মানুষ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, সেনাশাসনের বিরুদ্ধে। বিচ্ছিন্ননতাবাদী নয় তাঁরা সম্পৃক্ততাবাদী।
সেনাবাহিনীর কাজ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা
করা কিন্তু পাহাড়ে রিসোর্ট-পর্যটনের ব্যবসা কারা করে, কারা কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করেছে,
কারা পাহাড়িদের জমি জোরপূর্বক দখল করে সেটেলার বাঙালিদের পুনর্বাসন করেছে। দুই বার বাংলাদেশকে
চ্যাম্পিয়ন করা মনিকা-ঋতুপর্ণাদেরও কী প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা সন্ত্রাসী আর বিচ্ছিন্নতাবাদী
নয়?
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। |
ছাত্র ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি আজাদ হোসেন বলেন,"লেজুড়বৃত্তিপনার
জন্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চান আপনারা কি ঠিক একই কারণে জাতীয়
রাজনীতি নিষিদ্ধ চান? বিশ্ববিদ্যালয় কি দেশের বাইরের কোন জায়গা? আপনার দেশ জাহান্নাম
হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কি ভালো থাকবে?" তিনি আরও বলেন, "শিক্ষার্থীদের জন্য
স্বাস্থ্য-বীমা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আমার কোন ভাইবোনকে বোরকা, দাড়ি-টুপি কিংবা টিশার্ট-জিন্স
ইত্যাদি পোশাকের জন্য হেনস্থা করা যাবে না।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি রিজাউর রহমান বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে সবসময় জবাবদিহিতার মধ্যে রাখতে হবে।'কোন সমস্যা হলে ভাইকে জানাইও'- সংস্কৃতির মূলোৎপাটন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তেলানোর সংস্কৃতি বন্ধ করে প্রশ্ন করার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।"
স্টুডেন্টস এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধি আবির বিন জাভেদ বলেন,
"বিশ্ববিদ্যালয় এক নীতিতে চলবে-ভুল যার জরিমানা তার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের
সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটে ভুলের জন্য আমাকে কেন টাকা দিয়ে তা সংশোধন করতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্রসংগঠনগুলোকে এসব ঠিক করার জন্য কাজ করতে হবে।"
রাষ্ট্রচিন্তা চবির প্রতিনিধি আল মাসনুন বলেন,"ছাত্রলীগ শিবির সন্দেহে
যাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে সেটি প্রশাসনের সহযোগিতায় করেছে। তাই এই অবিচারের
দায় কেবল ছাত্রলীগের নয় প্রশাসনেরও।"
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীগণ |
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের প্রতিনিধি ধ্রুব বড়ুয়া বলেন,"লেজুড়বৃত্তি ছেড়ে জ্ঞান উৎপাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলোকে কাজ করে যেতে হবে। ছাত্রলীগসহ অতীতে যাদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে সেসবের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে হবে।"
নারী অঙ্গনের প্রতিনিধি সুমাইয়া শিকদার বলেন, “বিগত স্বৈরাচারবিরোধী রাজনৈতিক
আন্দোলনগুলোতে নারীদের বাঁধভাঙা অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু অতীতের মত বর্তমানেও রাষ্ট্রীয়
কাজে নারীদের অংশগ্রহণে অনেক প্রতিবন্ধকতা কাজ করছে।এগুলো দূর করার জন্য সবাইকে কাজ
করতে হবে।”
বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন চবির প্রতিনিধি ঈশা দে বলেন, “আমরা ছাত্ররাজনীতির
পক্ষে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কাদের জন্য ছাত্ররাজনীতি? আমরা চাই আমাদের ছাত্ররাজনীতি শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি
মানুষের অধিকারের কথা বলুক। আমরা পাশ্চাত্য আগ্রাসনমুক্ত কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি বান্ধব
শিক্ষাব্যবস্থা বান্ধব চাই।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের চবি প্রতিনিধি তামজীদ উদ্দিন বলেন, “প্রকৃত ছাত্ররাজনীতি
কী তা আমাদের অনেকেই ভুলে গেছেন ফ্যাসিবাদের
কারণে। যারা অধিকার আদায়ে রাজপথে ছিলেন তারা কখনো ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চান না। আমরা
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, সংস্কার চাই।”
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক জগলুল আহমেদ বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে
প্রশ্ন করার সংস্কৃতি চালু থাকবে।”
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।