এই ঢাকায় কারামুক্ত ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। |
ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
“বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত পিছপা
হবো না, লড়াই সংগ্রামে অবিচল থাকবো” এই স্লোগানে দীর্ঘ ৫ বছর ৮ মাস পর সদ্য কারামুক্ত হওয়া ছাত্রনেতা কুনেন্টু
চাকমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
আজ বৃহস্পতিবার
(৩১ অক্টোবর ২০২৪) বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকায় তোপখানা রোডে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের কার্যালয়ে
অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
আলোচনা সভায়
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক
অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা, গণতান্ত্রিক
যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য রূপসী চাকমা। এতে
সদ্য কারামুক্ত পিসিপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কুনেন্টু চাকমাও তার কারাভোগের অভিজ্ঞতা
তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
সভায় কুনেন্টু
চাকমা কারাগারের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং বলেন, ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কুতুকছড়ি
আবাসিক এলাকা থেকে সেনাবাহিনী সদস্যরা আমাকে অন্যায়ভাবে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে
দীর্ঘ ৫ বছরে অধিক কারাগারে অন্তরীণ রাখে। কারান্তরীণ সময়ে আমি দুইবার জামিনে বের
হতে চেয়েছিলাম প্রত্যেকবারে সেনা-গোযেন্দা সংস্থার লোকজন আমাকে জেলগেইট থেকে তুলে নিয়ে নতুন করে মামলা
দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
বক্তব্য রাখছেন কুনেন্টু চাকমা। |
তিনি আরো বলেন,
আমরা যারা রাজনৈতিক কর্মী রয়েছি শুধু তাদেরকে জেলগেইট থেকে তুলে নিয়ে যায় ব্যাপারটা
এমন নয়। অধিকাংশ পাহাড়িদের জামিনের পর সেনা-গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জেলগেইট থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নতুন মামলায়
দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করে। রাঙামাটি কারাগারে পাহাড়ি বন্দীদের জেলগেইট গ্রেফতারে
ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম,
জেলা প্রশাসকে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোন সুরহা পাইনি বরং অভিযোগ করার পর আমার
উপরে জেল কর্তৃপক্ষ ও সেনা-গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ক্ষেপে গিয়ে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন।
সংগঠন থেকে
সরিয়ে নেয়ার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজজন নানা প্রলোভন দেখিয়েছিল উল্লেখ করে কুনেন্টু
চাকমা বলেন, কারাগারে থাকাকালীন আমাকে সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সেনা-ডিজিএফআই নানা প্রলোভন দেখিয়েছিল।
‘সংগঠন
করবো না’ এমন শর্ত দিলে তারা মামলা জামিন করাবে, কারাগার থেকে বের হতে সহযোগীতা
করবে-- এমন কথা বলেছিল। কিন্তু আমি তাদের কথা মেনে নিইনি, তাদের সাথে আপোষ করিনি। যার
কারণে আমাকে দুইবার জেলগেইট থেকে আটক করে নিয়ে নতুন মামলায় জড়িয়ে দিয়েছিল।
কুনেন্টু চাকমা
বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণকে দীর্ঘ বছর ধরে নিপীড়নের মধ্যে রেখেছে।
এই নিপীড়ন থেকে মুক্ত হতে হলে লড়াই সংগ্রাম করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। আমরা লড়াই
সংগ্রামে আছি, যতদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের
অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না ততদিন আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো।
আলোচনায় মাইকেল
চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জেল—জুলুমের ঘটনা নতুন কিছু নয়, এটি খুবই পুরোনো।
ইউপিডিএফ গঠনের পর থেকে আরো বেশি এই ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রামে প্রশাসন
ইউপিডিএফের ১ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে হামলা করে ৪৫ জনকে আটক করেছিল। জরুরী অবস্থা
সময়ে ইউপিডিএফের অনেক নেতা—কর্মীকে আটক করে কারাগারে রাখা হয়েছিল। আমরা যারা বর্তমানে
ইউপিডিএফ ও গণসংগঠনের কাজ করছি তাদের অধিকাংশ কারাগারে যেতে হয়েছিল এবং জেলের অভিজ্ঞতা
তাদের রয়েছে।
তিনি বলেন,
সংগ্রামের রাস্তাটি কোন মসৃণ ছিল না। এটা অনেক কষ্ট, অনেক শ্রমের ব্যাপার। বিজয় অর্জন
করা ও স্বাধীনতা পাওয়া এত সহজ বিষয় নয়। বহু ত্যাগ, বহু সংগ্রামের মাধ্যমে তা আদায়
করে নিতে হয়।
পাহাড়ে জনগণকে
অধিকারের জন্য রক্ত দেয়া, ত্যাগ শিকার করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। বাঁচার মত বাঁচতে
হলে সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে। সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলন বেগবান
করতে হবে।
অঙ্কন চাকমা
বলেন, জেএসএস অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। তাই দলকে বাঁচাতে জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে বিকিয়ে
দিয়ে শাসকগোষ্ঠীর পদলেহন করছে। পাহাড়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার জায়গায় সংঘাতমূলক পরিস্থিতি
সৃষ্টি করে রেখেছে।
তিনি, অন্যায়
নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই সংগ্রামে যুক্ত হবার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি
আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৯
সালে গ্রেফতারের পর দীর্ঘ ৫ বছর ৮ মাস কারাভোগ করে গত ১৬ অক্টোবর কুনেন্টু চাকমা রাঙামাটি
জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি লাভ করেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।