দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের জায়গায় বসে আছেন ত্রিপুরা বাসিন্দারা। ছবি: ডেইলি স্টার বাংলা |
লামা (বান্দরবান), সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
বান্দরবানে লামা উপজেলায় সরই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের তংঙঝিরি
নতুন পাড়ায় (নতুন বেতছড়া ত্রিপুরা পাড়া) দুর্বৃত্তদের লাগিয়ে দেয়া আগুনে ত্রিপুরাদের
১৭টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভূক্তভোগীরা সবাই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। ঘটনার সময় পাড়াবাসীরা
সবাই বড়দিনের উৎসবে অংশ নিতে পাড়ার বাইরে অবস্থান করছিলেন।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর ২০২৪) দিবাগত মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে বলে
জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, গির্জা না থাকায় ওই পাড়ার বাসিন্দারা বাড়িঘর খালি রেখে
সবাই বড়দিন উপযাপন করতে পুরোনো পাড়ায় গিয়েছিলেন। মধ্যরাতের পর দুর্বৃত্তরা পাড়ায় ঢুকে
আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
তারা আরও জানান, তিন-চার বছর আগে একদল লোক এসে দাবি করে পুলিশের সাবেক আইজিপি
বেনজীর আহমেদের স্ত্রীর নামে ওই পাড়ার জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। তারা পাড়ার বাসিন্দাদের
উচ্ছেদ করে সেখানে একটি বাগান করেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই পাড়ার
বাসিন্দারা আবার সেখানে এসে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করেন।
নতুন তংঙঝিরি পাড়ার কারবারি পাইসাপ্রু ত্রিপুরা বলেন, এই পাড়াটি আমাদের অনেক পুরনো পাড়া। আমদের তিন-চার প্রজন্মের পুরুষেরা এই পাড়াতেই ছিলাম। চার-পাঁচ বছর আগে একদল মানুষ নিজদের 'এসপির লোক' পরিচয় দিয়ে পাড়াটি উচ্ছেদ করে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দখলদাররা পাড়া ছেড়ে চলে যান। এর পর ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার সেখানে এসে ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করে। এর নাম দেওয়া হয় ‘তংঙঝিরি নতুন পাড়া’। এখানে গির্জা না থাকায় বড়দিন উপলক্ষ্যে নতুন পাড়ার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি খালি রেখে গতকাল রাতে সবাই তংঙঝিরি পুরান পাড়ায় যায়। রাতে কেউ না থাকায় দুর্বৃত্তরা পাড়ায় আগুন দেয়। এতে দুটি বাদে সব ঘর পুড়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত গুঙ্গামনি ত্রিপুরা বলেন, আমাদের ঘরগুলো সম্পূর্ণ ছাই হয়ে গেছে।
আমরা সবাই এক পোশাকে আছি। আগুন থেকে কিছুই রক্ষা করতে পরিনি।
সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস কোম্পানি বলেন, 'গতরাতে দুর্বৃত্তদের
দেওয়া আগুনে ১৭টি ঘর পুড়ে গেছে বলে শুনেছি। ইউএনও এবং আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছি।'
লামা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুপায়ন দেব বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। প্রাথমিকভাবে সতেরটি পরিবারের জন্য পরিবারপ্রতি একটি কম্বল ও একবস্তা চাউল দিয়ে এসেছি। জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লামা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত ওসি) মো. এনামুল হক ভুঁইয়া বলেন, সরই
ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা তংঙঝিরি এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। গত ৫ আগস্টের পর
জমি দখলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
কাজ করছে।
তথ্য সূত্র: ডেইলি স্টার বাংলা
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।