বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বান্দরবানে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর দুর্গম মুরুংঝিরি থেকে গতকাল রবিবার
(১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকালে রাবারবাগানের ২৬ জন শ্রমিককে অপহরণ করেছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা।
অপহরণকারীরা শ্রমিকদের মুক্তির জন্য মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করেছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে দুই দফায় ১০ জনের বেশি
শ্রমিককে অপহরণ করার তথ্য জানায় পুলিশ।
লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেছেন বাগানমালিকের
কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা শ্রমিকদের অপহরণ করেছে বলে ধারণা
করা হচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফাঁসিয়াখালী
ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম মুরুংঝিরি এলাকার সন্ত্রাসীরা কয়েকটি রবারবাগানে
হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে সেখানে কর্মরত ২৬ জন শ্রমিককে অপহরণ করে নিয়ে
গেছে।
অপহৃতদের মধ্য থেকে থেকে ২০ জন হলেন মো. ফারুক (২৬), আয়ুব আলী (২৬), মো.
সিদ্দিক (৪০), আবদুল খালেক (২০), আবদুল মাজেদ (১৭), মনিরুল ইসলাম (৩০), জিয়াউর রহমান
(৪৫), মো. মোবারক (২৫), মো. হারুন (৩০), রমিজ উদ্দিন (৩২), সৈয়দ নুর (২৮), মো. কায়ছার
(৩৮), মনির হোসেন (৩৫), মো. ইমরান (১৭), মো. মঞ্জুরুল (৩০), আবছার আলী (২৫), খায়রুল
আমিন (৩০), আবু বক্কর (২৮), আবদুর রাজ্জাক (৩৩) ও মো. মবিন (২৫)। বাকি ৬ জনের নাম জানা
যায়নি।
অপহরণের নেপথ্যে কারা?
শ্রমিকদের অপহরণের ঘটনায় কারা জড়িত সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত করে বলতে
পারেনি। লামা থানার ওসি মো. শাহাদাৎ হোসেন জানিয়েছেন, ওই সন্ত্রাসীরা কিছুদিন আগেও
সরই ইউনিয়নের বমুখালের আগা থেকে তামাকখেতের শ্রমিকদের অপহরণ করেছে। অপহৃতদের উদ্ধারে
যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশ কিছু দিন ধরে ওই এলাকায় সেনাবাহিনীর সৃষ্ট ও
মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে
যাচ্ছে। গত ২৭ জানুয়ারি লামা সরই ইউনিয়নে লম্বাখোলা বাজারে চাঁদাবাজির সময় স্থানীয়
লোকজন মং এনু মার্মা (৩৫) নামে এক মুখোশ সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশের নিকট
সোপর্দ করে।
এ বিষয়ে একটি বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, রাবার শ্রমিকদের অপহরণের নেপথ্যে
রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার কিছু লোকজন। তারা নিজেদের সৃষ্ট
সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে এসব অপহরণের ঘটনা সংঘটিত করছে। আর মুক্তিপণের এক অংশ চলে যাচ্ছে
তাদের পকেটে। ঘটনার পর তারা নিজেদের আড়াল করতে ‘অভিযান’ চালায় এবং অপহৃত ব্যক্তিদের
‘উদ্ধার’ নাটক সাজায়। যা সবই হয়ে থাকে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। যার কারণে অপহৃতরা
উদ্ধার হলেও অপহরণকারীদের গ্রেফতার করা হয় না।
সূত্রটির তথ্য মতে, নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার এ অংশটি নিজেদের
আখের গোছাতে বরাবরই পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জিইয়ে রাখতে চায়। সেজন্য তারা তিন
পার্বত্য জেলায় নিজেদের সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়োজিত রেখে খুন, গুম,
অপহরণ, চাঁদাবাজির মতো ঘটনা সংঘটিত করছে। তাই এসব ঘটনা বন্ধ করতে হলে সর্ষের ভিতর যে
ভূত লুকিয়ে রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হলে ‘অভিযান’ ও
‘উদ্ধার’ নাটক মঞ্চস্থ হবে বটে, এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে না।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।