![]() |
রামগড়ে নারী নেত্রী গুলোমনি চাকমাকে আটকের চেষ্টা ও হয়রানি করে সেনা সদস্যরা। |
রামগড় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
খাগড়াছড়ির রামগড়ে সেনাবাহিনীর একটি দল এলাকার নারী সমাজের প্রতিনিধি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রামগড়
উপজেলা শাখার সভাপতি গুলোমনি চাকমাকে আটকের চেষ্টা ও নানা হয়রানি করেছে। তবে এলাকার জনগণের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের
কারণে তাকে আটকের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
আজ শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, আজ সকালে সেনাবাহিনীর একটি দল রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের মরাকইল্যা গ্রামে যায়। সেনারা সেখানে একটি দোকান থেকে নারী নেত্রী গুলোমনি চাকমাকে আটকের চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা গুলোমনি চাকমাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে আটকে রেখে নানা জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন চেক করে।
পরে এ খবর জানাজানি হলে এলাকার নারী-পুরুষ সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ জানালে
তাকে আটকের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
ভুক্তভোগী গুলোমনি চাকমা বলেন, সকাল পৌনে ১১টার দিকে তিনি বাড়ি থেকে দোকানে আসেন। তার আগেই একটি পিক-আপ নিয়ে একদল সেনা সদস্য দোকানের আশে-পাশে অবস্থান করছিল। দোকানে এসে তিনি সেনা সদস্যদের দেখতে পান। দোকানে আসার ৫/৬ মিনিট পর সেনারা গিয়ে তার সাথে কথা আছে বলে তাকে জানায়। এতে তিনি ‘কোন কথা থাকলে এখানে বলুন’ বলে সেনাদেরকে উত্তর দেন। এ সময় তিনি তার জা’র দোকানে ছিলেন।
পরে সেনারা তাকে ও তার জা’কে দোকানের ভেতর থেকে বের করে দোকানের পেছনে নিয়ে গিয়ে নানা কথাবার্তা জিজ্ঞাসা করে এবং তার মোবাইল ফোন চেক করে। সেনারা তাদের নিজেদের মোবাইলে থাকা ছবি দেখিয়ে মিছিল-সমাবেশে তার উপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চায়।
এ সময় তার স্বামী দোকানে আসলে সেনারা তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তার মোবাইল
ফোনও চেক করে বলে জানান গুলোমনি চাকমা।
পরে সেনারা থানা পুলিশকে সেখানে ডেকে নিয়ে আসে।
বেলা ২:৩০টার দিকে এসআই হারুনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে এসে উপস্থিত
হয়। তবে পুলিশ তাদের সাথে কোন খারাপ আচরণ করেনি বলে গুলোমনি চাকমা জানান।
এদিকে, এ ঘটনার খবর পেয়ে এলাকার শতাধিক নারী-পুরুষ সেখানে গিয়ে নারীদের সাথে এ ধরনের আচরণের প্রতিবাদ জানান এবং সেনা ও পুলিশ সদস্যদের সাথে কথাবার্তা বলেন।
এরপর পুলিশ তাদের কাছ থেকে ভিডিও আকারে বক্তব্য নেয়ার পর সেনা ও পুলিশ সদস্যরা
সেখান থেকে চলে যায়।
গুলোমনি চাকমা অভিযোগ করেন, সেনারা তাকে ছবি তোলে নিয়ে গেছে এবং তার মোবাইলের
সকল ডাটাও নিজেদের মোবাইলে ট্রান্সফার করে নিয়ে গেছে। ফলে তিনি এখন নিরাপত্তাহীনতায়
রয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক মুরুব্বী
বলেন, স্বাধীন দেশে প্রত্যেক নাগরিকের সংগঠন করার, সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ ও স্বাধীন মত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু
তার জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক একজন নারীকে আটকের চেষ্টা, হয়রানি ও তার ব্যক্তিগত মোবাইল
চেক করা এবং মোবাইলের ডাটা নিয়ে যাওয়া নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
তারা এ ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে এবং এ ধরনের
হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।