![]() |
রেংয়েন কার্বারি |
বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে রেংয়েন ম্রো কার্বারি, রেংয়ুং ম্রো, দুইথং ম্রো ও কাদিং ম্রো’কে কারাগারে পাঠিয়েছে লামা উপজেলা আদালত।
আজ মঙ্গলবার (১৮ মার্চ ২০২৫) সকালে রেংয়েন কার্বারিসহ ৮ জন পাড়াবাসী লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক তিনটি মামলায় (জিআর- ০৬/২৪ ইং, সিআর- ৩১৩/২২ ইং ও সিআর-১২৯/২৪ ইং) জামিন চাইতে লামা উপজেলা আদালতে যান। মামলার শুনানী শেষে আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী রিয়াদ ৮ জনের মধ্য থেকে চার জনকে (যোহন ম্রো, সিংবত ম্রো, মেনসিং ম্রো ও ইয়াংইং ম্রো) জামিন দিলেও রেংয়েন কার্বারি, রেংয়ুং ম্রো, দুইথং ম্রো ও কাদিং ম্রো’কে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে প্রেরিত রেংয়ন কার্বারিসহ ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা সবাই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক লামার সরই ইউনিয়নে ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখলের চক্রান্তের বিরুদ্ধে এবং উক্ত জুমভূমি রক্ষায় আন্দোলনের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৩ সালের ১ মার্চ পুলিশ লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সংগঠক মথি ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করেছিল। এরপর একই বছর ৩০ মার্চ আদালতে জামিন চাইতে গিয়ে লাংকম পাড়ার কার্বারি লাংকম ম্রোকে জামিন নমঞ্জুর করে আদালত কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। পরে তারা দু’জনই জামিনে মুক্তি লাভ করেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সাদা পোশাকধারী একদল পুলিশ ভূমি রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক রিংরং ম্রোকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়, এখনো তিনি কারাগারে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। সর্বশেষ আজকে আদালত কর্তৃক রেংয়েন কার্বারিসহ ৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হলো।
![]() |
ম্রো-ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের জুমভূমিতে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লাগানো একটি সাইনবোর্ড। ফাইল ছবি |
প্রসঙ্গত, বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ভূমিদস্যু লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল থেকে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগীতায় রেংয়েন ম্রো কারবারি পাড়া, লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া, ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কারবারি পাড়ায় ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখল করার ষড়ন্ত্র চালিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে এ পর্যন্ত কোম্পানিটির লেলিয়ে দেয়া লোকজন কর্তৃক ম্রো-ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের জুম ভুমি পুড়িয়ে দেয়া, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, কলাবাগান-সবজি খেত ধ্বংস করে দেয়া, পাড়াবাসীদের একমাত্র পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ, বৌদ্ধ বিহারে হামলা-ভাঙচুর, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, আটক ইত্যাদি ঘটনা সংঘটিত করে আসছে।
ইতোমধ্যে পাড়াবাসীদের বিরুদ্ধে ৬টি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মধ্যে ১টি মামলা থেকে পাড়াবাসীরা খালাস পেয়েছেন। বর্তমানে আরও ৫টি মামলা চলমান রয়েছে।
গত বছর ১ জানুয়ারি দিবাগত মধ্য রাতে রাবার
কোম্পানির লেলিয়ে দেয়া লোকজন কর্তৃক ম্রো পাড়াবাসীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের
ঘটনা ঘটে। এরপর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দু’দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এছাড়া এ ঘটনা
তদন্তে তৎসময়ে সংসদীয় একটি প্রতিনিধিদলও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিল। কিন্তু ম্রো-ত্রিপুরা
পাড়াবাসীরা এখনো কোন সুরক্ষা পায়নি। তাদের ওপর নানা নিপীড়ন-হয়রানি অব্যাহত রয়েছে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।