""

থানচিতে খেয়াং নারীকে হত্যা, সন্দেহের তীর ট্যুরিস্টদের দিকে

এলাকাবাসীর সন্দেহ নৃশংস এই ঘটনাটি ট্যুরিস্টদের (বাঙালি) কোন একটি দল ঘটিয়েছে। সন্দেহ করার কারণ হিসেবে তারা ঘটনাস্থলের আশে-পাশে বিস্কুটের প্যাকেট, কমলার খোসা, শুকনো খাবারের প্যাকেট পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।


বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মংখয় খেয়াং পাড়া এলাকা থেকে গতকাল (৫ মে ২০২৫) তিন সন্তানের জননী এক খেয়াং নারীর (২৯) লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি প্রতিদিনের মতো সকালে বাড়ির নিকটবর্তী নিজের জুমে ধান রোপন করতে গিয়ে দুপুরে যথাসময়ে বাড়িতে না ফিরলে এলাকার লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পর নির্মাণাধীন থানচি-রেমাক্রি-লেইক্রি সড়কের পাশের নালা থেকে তার বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। এতে এলাকাবাসী নিশ্চিত হন যে, তাকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ট্যুরিস্টদের (বাঙালি) কোন একটি দল এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে সন্দেহ তাদের।

হত্যার শিকার নারী তিন সন্তানের জননী। দুই ছেলে ও এক মেয়ে। দুই ছেলের মধ্যে একজন দ্বিতীয় শ্রেণিতে ও আরেকজন ১ম শ্রেণিতে পড়ে। আর মেয়েটি এখনো দুধের শিশু। বয়স মাত্র ২ বছর ৭ দিন।

ওই নারীর স্বামী ব্র্যাকে কাজ করেন। তিনি ওই দিন মশারি বিতরণ করতে পাশের নেপিও পড়ায় গিয়েছিলেন।

নৃশংস এ ঘটনাটি কারা ঘটিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশও এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

তবে ঘটনাস্থল ও লাশ উদ্ধারের আলামত দেখে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা ধারণা করছেন হয়তো ট্যুরিস্টদের একটি দল এ নৃশংস ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে।

জানা যায়, প্রতিদিনের মতো গতকাল (৫ মে) সকাল ৬টার সময় ধান রোপনের জন্য ওই নারী নিজের জুমে গিয়েছিলেন। দুধের শিশুটির জন্য তিনি প্রতিদিন জুম থেকে দুপুর ১২টার আগে বাড়ি ফিরে আসতেন। কিন্তু গতকাল যথাসময়ে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজনের মধ্যে সন্দেহ হয়। কারণ তিনি আগের দিন (৪ মে) জুমে ধান রোপন করতে গিয়ে তিন জন বাঙালিকে (ট্যুরিস্ট বলে স্থানীয়দের সন্দেহ) অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে ভয়ে জুম থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন এবং ঘটনাটি তার শ্বশুর-শ্বাশুরিকে জানিয়েছিলেন।

গতকাল যথাসময়ে ওই নারী বাড়িতে না ফেরায় দুধের শিশুটি কান্নাকাটি করলে তার শ্বশুর-শ্বাশুরি জুমের কাছাকাছি গিয়ে তাকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পাননি। এরপর তারা জুমে গিয়েও তাকে খুঁজে পাননি। এ সময় তারা দেখতে পান যে ওই নারীর একটি জুতা পড়ে আছে, আরেকটি নেই। দা, গামছা আলাদা আলদাভাবে পড়ে আছে। বাড়ি থেকে রোপনের জন্য যে ধানগুলো নিয়েছেন সেগুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এতে তাদের সন্দেহ হয় যে, তাকে নিশ্চয় অপহরণ করা হয়েছে।

এরপর তারা গ্রামবাসী এবং ওই নারীর স্বামীকে খবর দেন। পরে নারীর স্বামীসহ মংখয় পাড়া ও পাশের নেপিউ পাড়াবাসী মিলে খুঁজতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা জঙ্গলে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চিহ্ন দেখতে পান এবং তা অনুসরণ করে খুঁজতে খুঁজতে বিকাল ৩টার দিকে তার লাশ খুঁজে পান তারা। নির্মাণাধীন থানচি-রেমাক্রি-লেইক্রি সড়কের নালায় লাশটি রক্তাক্ত ও বিবস্ত্র অবস্থায় পড়েছিল। নালার পাশে গাছে লটকানো ছিল তার কাপড়-চোপড়। তার মাথা থেতলে দেওয়া ও চোখ উপড়ে ফেলা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

পরে এলাকাবাসী থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে রাতে থানচি থানায় নিয়ে আসে। আজ (মঙ্গলবার) বান্দরবান সদর হাসপালে পাঠিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

এলাকাবাসীর সন্দেহ নৃশংস এই ঘটনাটি ট্যুরিস্টদের (বাঙালি) কোন একটি দল ঘটিয়েছে। সন্দেহ করার কারণ হিসেবে তারা ঘটনাস্থলের আশে-পাশে বিস্কুটের প্যাকেট, কমলার খোসা, শুকনো খাবারের প্যাকেট পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তারা আরো বলেছেন, “ট্যুরিস্টরা সচরাচর নির্মাণাধীন সড়ক দিয়েই সাকাহাফং পাহাড় দেখতে যান। তারা সাধারনত সকালেই সাকাহাফং পাহাড়ের দিকে গিয়ে থাকেন। এছাড়া ঘটনার আগের দিন ওই নারী জুমের পাশে তিনজন বাঙালিকে (ট্যুরিস্ট বলে সন্দেহ স্থানীয়দের) অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে ভয়ে জুম থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। হয়ত ওই তিনজনই সেখানে পরের দিনের জন্য ওঁৎপেতে থেকে এ ঘটনা ঘটানোর জন্য অপেক্ষা করেছিল”।

স্থানীয়দের ধারণা ঘটনাটি সকাল ৮টার মধ্যেই ঘটে থাকতে পারে। কারণ ওই নারী জুমে যাওয়ার সময় যে পানি নিয়ে গিয়েছিলেন সেগুলো ‘থুরুংয়ের’(বাঁশের তৈরি ঝুড়ি) মধ্যে না খাওয়া অবস্থায় ছিল।

এলাকাবাসী অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।



 





Post a Comment