""

লুঙুদুতে অগ্নিসংযোগ ও দীঘিনালায় সমাবেশে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাঙামাটির লুঙুদুতে ঘরবাড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও দীঘিনালায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সেনা-পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে ডকুমেন্ট ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত ০৫ জুন উক্ত মানবাধিকার সংগঠন তাদের ওয়েবসাইটে ইনডেক্স নাম্বার-ASA 13/6423/2017 মূলে উক্ত ডকুমেন্ট ভিত্তিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইন্ডিজেনাস জনগণের উপর দুষ্টচক্রবত উন্মত্ত জনআক্রমণে জড়িতদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অতিঅবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া এমনেস্টি এই খবর পেয়ে গভীরভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানাচ্ছে যে, সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার সময় প্রতিবাদকারীদের উপর সৈন্যবাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে।

ডকুমেন্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ০২ জুন, ২০১৭ লুঙুদুতে এক হাজারের অধিক সেটলার বাঙালি একত্রিত হয়। তারা সমাবেশ করার পরে সেটলাররা উক্ত এলাকার কয়েকটি গ্রামে হামলা চালায় এবং কমপক্ষে ৩০০ এর মতো ইন্ডিজেনাস জনগণের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, শতশত পাহাড়ি জনগণ সংঘাত থেকে বাঁচতে জঙ্গলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মানবাধিকার কর্মীর সূত্র উল্লেখ করে উক্ত ডকুমেন্টে বলা হয়, কমপক্ষে একজন ৭০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা ঘরের ভেতরে ফাঁদে পড়ে বের হতে না পেরে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তথ্যদাতার কাছ থেকে জানতে পেরেছে যে, উন্মত্ত জনতা ছুরি, লাঠিসোঁটা বহন করেছে এবং তাদের কেউ কেউ পেট্রোল বহন করেছে। এতে পরিদৃষ্ট হয় যে, আক্রমণটি পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ ছিল।


যদিও বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ১২ টার দিকে ১৪৪ ধারা জারি করেছে তারপরেও আরো কয়েক ঘন্টা ধরে আক্রমণ জারি ছিল। এমনেস্টিকে তথ্যপ্রদানকারী জানিয়েছেন, আক্রমণের সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত ছিল; কিন্তু তারা কোনো হস্তক্ষেপ করেনি অথবা ইন্ডিজেনাস জনগণের ঘরবাড়ি বাঁচাতে প্রয়োজনীয় কিছু করেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাহাড়ি জনগণের উপর আক্রমণকারী সেটলার বাঙালিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অতীতের ‘ট্র্যাক রেকর্ড’ ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না এবং প্রায়ই হামলাকারীদের রেহাই দেয়ার ব্যবস্থা রেখে হামলার সুযোগ করে দেয়া হয়।

২০১১ সালেও একবার লুঙুদুতে পাহাড়িদের ঘরে সেটলাররা হামলা করে ২৩টি পাহাড়ি ঘর পুড়ে দিয়েছিল। পাহাড়ি জনগণ সাহায্যের জন্য আহ্বান জানালেও নিরাপত্তা বাহিনী গ্রামে হামলা রোধ করতে কোনোকিছুই করেনি। উক্ত আক্রমণে জড়িতে একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এছাড়া উক্ত ডকুমেন্ট প্রতিবেদনে গত ০৪ জুন দীঘিনালায় তিন সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করার কথা উল্লেখ করা হয়।

সমাবেশটি শান্তিপূর্ণ থাকার পরেও পুলিশ ও সেনাসদস্যরা উদগ্র ভুমিকা নিয়ে সমাবেশটি ভেঙে দেয়। সমাবেশ থেকে নীতিময় চাকমা ও জীবন চাকমাকে আটক বিষয়ে বলা হয়ে, তাদেরকে ফৌজদারী মামলায় গ্রেপ্তার করা হলেও মূলত, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার জন্যই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনেস্টি তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার ইন্টারন্যাশনাল কভনেন্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) এর একটি পক্ষ। সুতরাং, বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই এই সকল অধিকার চর্চার বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্তভাবে বলপ্রয়োগ করবে না।
এছাড়া উক্ত ডকুমেন্ট প্রতিবেদনে এমনেস্টি ৪ দফা প্রস্তাবনা পেশ করে।
প্রস্তাবনাসমূহ হলো-
১. হামলার স্বাধীন-নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
২. যারা জড়িত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা। তবে মৃত্যুদন্ড নয়।
৩. জনসম্মুখে এই আক্রমণের নিন্দা জানানো এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ইন্ডিজেনাস জনগণের উপর যেন এ ধরনের আক্রমণ প্রতিনিয়ত ঘটতে না পারে তার জন্য ফলপ্রসূ উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৪. শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অধিকার নিশ্চিত করা এবং নিরাপত্তা বাহিনী যেন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বিরুদ্ধ মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ না করে তা নিশ্চিত করা।
————-





0/Post a Comment/Comments