প্রতীকী ছবি |
সিএইচটি নিউজ ডেস্ক ।। আজ ৪মে লংগদু গণহত্যার ৩০ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৮৯ সালের এই দিনে রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় আর্মি ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর(ভিডিপি) সহায়তায় সেটলাররা পাহাড়ি অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করে এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ মুর্তি ধ্বংস করে। সেটলারদের এহামলায় বহু পাহাড়ি হতাহত হয়।
তৎসময়ে
এ হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, প্রাক্তন সংসদ
সদস্য চাইথোয়াই রোয়াজা, প্রাক্তন সংসদ সদস্যা সুদীপ্তা দেওয়ান ,প্রেসিডেন্টের
সাবেক উপদেষ্টা সুবিমল দেওয়ান, তৎকালীন
রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান এবং রাঙামাটি সদর উপজেলা
চেয়ারম্যান মায়াধন চাকমাসহ ২২ জন বিশিষ্ট পাহাড়ি নেতা বিচার বিভাগীয় তদন্ত
দাবি করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে তারা এ হত্যাযজ্ঞের
ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “উপজেলা সদরেসব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা
সত্ত্বেও পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য, লংগদু ইউনিয়নপরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও
৩নং লংগদু মৌজারহেডম্যান অনিল বিহারী চাকমা তার বাসভবনে হামলার শিকার হন। ভাগ্যক্রমে
তিনি প্রাণে বেঁচেগেলেও তার স্ত্রী ও প্রতিবেশীদের অনেকে(যারা হেডম্যানের বাসভবনে
আশ্রয় নিয়েছিল) এইনির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন। হত্যাকারীরা দা, বল্লম ইত্যাদি
সহ আগ্নেয়াস্ত্রের দ্বারাগুলি করে এইসব নিরীহ নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে হত্যা
করেও ক্ষান্ত হয়নি। মৃতদেহগুলিবাড়ীতে ফেলে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে
ফেলে। অনিল বিহারী চাকমা তার স্ত্রীর মৃতদেহবাড়ী থেকে বের করে বাড়ীর পাশ্ববর্তী
জঙ্গলে সারারাত পাহারা দিয়ে রাখেন। ভোরের দিকেথানায় খবর দিতে এসে উদ্ধার করতে
গেলে পরবর্তীতে মৃতদেহের কোন হদিস পাননি। পরিস্থিতিরএমন ভয়াবহতায় মৃতদেহগুলি
ধর্মীয় বিধিতে পর্যন্ত সৎকার করা
সম্ভব হয়নি”। ((তথ্য সূত্র: রাডার, লোগাঙগণহত্যা সংখ্যা)।
যে সময় এ ঘটনা সংঘটিত হয় সে সময় দেশে
ছিল সামরিক শাসন। ক্ষমতার আসনে ছিলেন স্বৈরাচারী এরশাদ। ফলে এ বর্বর হত্যাযজ্ঞের
সংবাদ সে সময় বাংলাদেশের কোন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি বা প্রকাশ করতে দেওয়া
হয়নি।
এই গণহত্যার
প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য
চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জন্ম লাভ করে। লোমহর্ষক এ গণহত্যার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ
জানানোর জন্য ঢাকার রাজপথে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ১৯৮৯ সালের ২১শে মে মৌন মিছিল সহকারে
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ
এ বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে একটি
শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের
ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
কিন্তু দীর্ঘ ৩০ বছর অতিক্রান্ত হলেও
দেশের কোন সরকারই এ হত্যাযজ্ঞের বিচার ও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার শাাস্তিমূলক
ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। লংগদু
গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবৎ ডজনের
অধিক গণহত্যা সংঘটিত হলেও কোন ঘটনারই সঠিক তদন্ত রিপোর্ট আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।
----------------