""

নানা কর্মসূচিতে লক্ষ্মীছড়িতে ইউপিডিএফ’র ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

লক্ষ্মীছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২

খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে নানা কর্মসূচিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

গতকাল ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার সকাল ৯টার সময় ইউপিডিএফ-এর লক্ষ্মীছড়ি ইউনিটের উদ্যাগে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি বিকাল ৪.০০টা পর্যন্ত চলে।

পার্টি পতাকায় স্যালুট প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। এতে পার্টি, গণফ্রন্ট ও সর্বস্তরের উপস্থিত লোকজন স্যালুট প্রদান করেন। এই সময় দলীয় সংগীত সাউন্ড বক্সে বাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। সাথে সাথে অনূষ্ঠানস্থল ‌ইউপিডিএফ জিন্দাবাদ, পার্টি দুই যুগপূর্তি অমর হোক’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। এরপর অস্থায়ী শহীদ স্বৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তপক অর্পণ করা হয়। এতে প্রথেমে ইউপিডিএফ, এরপর গণফ্রন্ট ও তারপরে শহীদ পরিবারবর্গ এবং পরিশেষে এলাকাবাসী ও সর্বস্তরের জনসাধারণ পুষ্পস্তপক অর্পন করেন।

প্রথমে ইউপিডিএফ’র পক্ষ থেকে দলের লক্ষ্মীছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক বিধুর চাকমা ও সিনিয়র সংগঠক দেবেশ চাকমা নেতৃত্বে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি পাইচি মারমা, পিসিপি’র সভাপতি রুপান্ত চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য সচিব সুপ্রভা চাকমা ও নারী সংঘের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি রিনা চাকমার নেতৃত্বে গণফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ পুষ্পস্তপক অর্পণ করেন। শহীদ পরিবারের পক্ষে পুষ্পস্তপক অর্পন করেন শহীদ পরেশ তংচংঙ্যা সহ-ধর্মীনী ইতিকা চাকমা।

পুষ্পস্তপক অর্পণ শেষে শহীদের উদ্দেশ্যে ১ মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়। নিরাবতা পালনের পর কিছুক্ষণ ‌‘শহীদের রক্ত বৃথ যেতে দেব না,পা র্টি দুইযুগপূর্তি অমর হোক’ সহ বিভিন্ন স্লোগানে অনুষ্ঠানস্থল প্রকম্পিত হয়ে উঠে। স্লোগানের পরপরই উপস্থিত জনতার উদ্যেশে পার্টির কেন্দ্রীয় বার্তা পাঠ করেন ইউপিডিএফ’র সিনিয়র সংগঠক দেবেশ চাকমা। কেন্দ্রীয় বার্তা পাঠের সাথে সাথে আবারও অনুষ্ঠানস্থল বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। এরপর উপস্থিত লোকজনকে নাস্তা পরিবেশনের জন্য অনুষ্ঠানের বিরতি ঘোষণা করা হয়।

নাস্তা পরিবেশনের পর অনুষ্ঠানের মূল পর্ব ‘আলোচনা সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অনূষ্ঠানের আয়োজক কমিটির সভাপতি সরল চাকমা ও সঞ্চালনা করেন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব বিবেক চাকমা। এতে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ-এর সিনিয়র সংগঠক দেবেশ চা্কমা, লক্ষ্মীছড়ি ইউনিটের সংগঠক বিধুর চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সভাপতি পাইচি মারমা, পিসিপি সভাপতি রুপান্ত চাকমা, নারী সংঘের লক্ষ্মীছড়ি প্রতিনিধি রিনা চাকমা ও এইচডব্লিইএফ লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সদস্য সচিব সুপ্রভা চাকমা।

আলোচনা সভা শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, লক্ষ্মীছড়ি ইউনিটের সংগঠক বিধুর চাকমা।

তিনি বলেন, এক কঠিন পরিস্থিতিতে ইউপিডিএফ-এর দুই যুগপূর্তির অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে। এই অনূষ্ঠান বানচালের জন্য বিভিন্ন স্থানে মুখোশ বাহিনী, রাজাকার ও সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে। নিরাপত্তার কারণে এই অনূষ্ঠানের স্থান দুইবার পরিবর্তন করতে হয়েছে। এতে পার্টি ও গণফ্রন্ট কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে অনুষ্ঠানটির আয়োজন এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। কর্মীদের অপরিসীম পরিশ্রম ও ধৈর্য্যের কারণে অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভ হচ্ছে। এজন্য তিনি কর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি আরো বলেন, যে জায়গায় অনুষ্ঠানটি হচ্ছে এই জায়গার মরুব্বী ও যুব তথা পুরো সমাজ রাত-দিন পরিশ্রম করে করেছে। তারা এভাবে সহযোগিতা না করলে অনুষ্ঠানটি আয়োজন কোনভাবে করা সম্ভব ছিল না। এজন্য তাদের অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আরো বলেন, আশে-পাশের গ্রামের লোকজন ও অনুষ্ঠানটি আয়োজনে যথাযথ ভূমিকা পালন করেছেন এবং ঝুঁকি নিয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছেন তাদের অবদানও কম নয়। তাই তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এরপর উপস্থিত মরুব্বীবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এতে বক্তব্য দেন লক্ষ্মীছড়ি সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র চাকমা, কাউখালি উপজেলা ২নং ফটিকছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে সাবেক মেম্বার শ্যামল চাকমা, ইউপিডিএফ সাবেক সদস্য প্রহ্লাদ চাকমা, চেঙ্গী মূখ পাড়া বিশিষ্ট মরুব্বী বিমল চাকমা, হুলুদিয়া পাড়ার যুব প্রতিনিধি খিলুঅং মারমা।

ইউপিডিএফ গঠনের পঠভূমি উল্লেখ করে রাজেন্দ্র চাকমা বলেন, ইউপিডিএফ গঠন পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক ইতিহাসে এক যুগকান্তকারী ঘটনা। ইউপিডিএফ গঠনের যে প্রয়োজনীয়তা ছিল তা আজকের পরিস্থিতি প্রমাণ করে। ইউপিডিএফ জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে আপোষহীনভাবে লড়াই সংগ্রাম করে আসছে। তাইতো আজ পার্টি দুইযুগপূর্তির অনুষ্ঠান এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে করতে হচ্ছে। তিনি উপস্থিত সকলকে পার্টির পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

অন্যান্য বক্তাগণ এত দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও পার্টির দুইযুগপূর্তিতে সুন্দর একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য পার্টিকে ধন্যবাদ জানান।

এরপর গণফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। তারা স্ব-স্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে এই কঠিন পরিস্থিতিতেও পার্টির দু্ইযুগপূর্তি অনুষ্ঠানে আসার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তারা আগামী দিনের যে কোন পরিস্থিতিতে লড়াই সংগ্রামে অবিচল থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এরপর বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর সিনিয়র সংগঠক দেবেশ চাকমা। তিনি সরকারের জুম্ম ধ্বংসের বিভিন্ন কর্মকান্ড উল্লেখ করে বলেন ইউপিডিএফই একমাত্র সরকারের জুম্ম ধ্বংসের নীলনক্সার বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে এযাব ১৯টি বড় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এগুলি অধিকাংশই ভূমি বেদখলকে কেন্দ্র করে। পাহাড়িদের ভূমি কেড়ে নেওয়ার জন্য এখন শাসকগোষ্ঠী মরিয়া। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকতে হবে। দুইযুগের লড়াই সংগ্রামে ইউপিডিএফ তার ৩৩৮জন সহযোদ্ধা সমর্থককে হারিয়েছে। এরা জেএসএস, রাজাকার ও মুখোশদের হামলায় নিহত হয়েছে। এই সংখ্যাটি কম নয়। তারপর পার্টি লড়াই সংগ্রামে অবিচল রয়েছে।

তিনি আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে পার্টির পাশে থাকর জন্য উপস্থিত সবাইকে আহ্বান জানান।

লক্ষ্মীছড়ি ইউনিটের সংগঠক বিধুর চাকমা বলেন, বিশ্ব করোনা পরিস্থিতির প্রাদুর্ভাব এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার উপর এখন চলছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে বলে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এর প্রভাব আমাদের উপরও পড়বে। বাংলাদেশে পরিস্থিতি আরো নাজুক। এক বছর পর বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবার কথা এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো র্নিদলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথ উত্তপ্ত করে তুলছে। অপরদিকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাকে চিরতরে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতে করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্চই সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পার্টির নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করার জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, পার্টি এযাব রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে বিচার বিশ্লেষণে কোন ভুল করেনি। আগামীতেও কোন ভুল হবে না। এরপর আগামী দিনে লড়াই সংগ্রামে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য উপস্থিত সবাইকে প্রতিজ্ঞাপত্র পাঠ করিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

পরিশেষে আলোচনার সভাপতি সরল চাকমা উপস্থিত সবাইকে শুভ কামনা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে সভা সমাপ্তি করেন। সভা সমাপ্তির পর স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় দেশাত্ববোধক গান ও নাচের মাধ্যমে পুরো দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

 





0/Post a Comment/Comments