""

লংগদু-নান্যাচর সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে প্রচারপত্র বিলি


নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

লংগদু-নান্যাচর সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে প্রচারপত্র বিলি করছে নান্যাচর-লংগদু বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি। লংগদু ও নান্যাচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ জনগণের মাঝে এটি বিলি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তথাকথিত উন্নয়ন ও যাতায়াত সুবিধার নামে বন ও জৗববৈচিত্র্য ধ্বংস করতে দেবেন না, বন ও পরিবেশ রক্ষার্থে লংগদু-নান্যাচর সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করুন” শিরোনামে গত ২৫ মে ২০২৫ প্রচারপত্রটি প্রকাশ করা হয়।

প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, ...মূলত দু’একজন ঠিকাদার ও মুষ্ঠিমেয় সেনা-সরকারী আমলার পকেট ভারী করার জন্য নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২৪ কিলোমিটার সড়কের প্রায় অর্ধেক জনমানবহীন। এখানে এখনো গভীর প্রাকৃতিক বন রয়েছে। সড়কটি হলে এই বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তা হবে অপুরণীয়। লংগদু ও নান্যাচর মোনে যে বনজ সম্পদ রয়েছে তা দু’এক বছরের মধ্যেই সব ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ মুনাফা লোভী কাঠ ব্যবসায়ীদের তৎপরতার ফলে তখন এসব বনের গাছ কেটে বাজারজাত করা সহজতর হবে। গাছ বাঁশ সাবাড় হয়ে গেলে এলাকাটি বিরানভূমিতে পরিণত হবে। বন্য পশুপাখি ও জলজ প্রাণীও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পানির উৎস হিসেবে যে সব ছড়া, ঝর্ণা, ঝিরি  রয়েছে সেগুলো শুকিয়ে গিয়ে আশেপাশের এলাকায়ও তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে যত্রতত্র পাকা সড়ক নির্মাণের কারণে বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কী ক্ষতি হয়েছে তা নতুন করে বলার দরকার নেই, বুঝতেও গবেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। একটু খেয়াল করলেই তা বোঝা যায়। এখানে শুধু এটা বলা যথেষ্ট যে, যে দিকে পাকা সড়ক হয়েছে, সে দিকের বন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে প্রত্যেক গবেষক এই সত্যটি এক বাক্যে স্বীকার করবেন। প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের কারণে ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে খাবার পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়, যা দেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রায়শঃ শিরোনাম হয়ে থাকে।

মানুষ নিজের বাঁচার প্রয়োজনে খেত-খামার রক্ষা করতে সেই খেত-খামারের মধ্য দিয়ে রাস্তা করে না। সামান্য কষ্ট হলেও তারা ঘোরা পথে হেঁটে যায়। মানুষের বাঁচার জন্য বন দরকার। তাই বন রক্ষার জন্য সরকারও নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা যায় উল্টো চিত্র। এখানে এমন কাজ হাতে নেয়া হয়, যাতে বন ধ্বংস হয়। এই বন ধ্বংসের সহায়ক কাজের মধ্যে রয়েছে অপ্রয়োজনে ও যত্রতত্র পাকা সড়ক নির্মাণ ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন। বনের মধ্য দিয়ে নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণ করার অর্থ হলো ১০০ পার্সেন্ট বন ধ্বংস করা। মানুষের প্রয়োজনে উক্ত বন রক্ষার জন্য নৌপথে লংগদু ও নান্যাচরের মধ্যে যাতায়াত করতে অসুবিধা কোথায়? যুগ যুগ ধরে কি মানুষ এই নৌপথ ব্যবহার করে আসছে না?

এই সড়কের নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের আগে তার পরিবেশগত ও অন্যান্য ক্ষতি কী হবে তার জরিপ করা হয়েছে কীনা আমাদের জানা নেই। এমনকি এই সড়কটি হলে জনগণের আদৌ লাভ হবে কীনা তাও হিসাব করা হয়েছে বলে মনে হয় না। মোট কথা, এই রাস্তা নির্মাণ করা হলে তাতে জনগণের তথা দেশের কোন মঙ্গল হবে না, উপকার হবে না। এতে মূল্যবান বন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যই কেবল ধ্বংস হবে। তাই উন্নয়ন ও যাতায়াতের সুবিধার মামুলি কথা বলে সড়কটি নির্মাণের প্রকল্প যারা গ্রহণ করেছেন, তারা আসলে দেশবাসীকে ধোকা দিয়ে বোকা বানাতে চাইছেন।

এতে আরো বলা হয়, নান্যাচর-লংগদু সড়কটি নির্মাণের অন্য একটি উদ্দেশ্য হলো বহিরাগত সেটেলার পুনর্বাসন। নান্যাচরের অনেক সেটেলার নান্যাচর-লংগদু সড়কের ডাকঘর মোন (উঁচু পাহাড়) নামক স্থানে পাহাড়িদের মালিকানাধীন জমি তাদের বলে মিথ্যাভাবে দাবি করে থাকে। সড়কটি হলে সেনারা সেখানে তাদেরকে বসতিস্থাপনের চেষ্টা করবে। এতে ভূমি নিয়ে পাহাড়ি-বাঙালি বিরোধ ও সংঘর্ষ অনিবার্য, তীব্র ও স্থায়ী হয়ে পড়বে। শান্তি তিরোহিত হবে এবং পাহাড়িরা নিজ জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাবে। অন্যদিকে সেখানে শত শত সেটেলার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হলে বন ধ্বংসের প্রক্রিয়া আরও বেশি ত্বরান্বিত হবে।

মোটা দাগে নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো: ১) মুষ্টিমেয় কয়েকজনের পকেট ভারী করা। ২) বহিরাগত সেটেলার পুনর্বাসন করা। ৩) বনের মূল্যবান প্রাকৃতিক গাছ আহরণে কাঠ ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দেয়া।

অন্যদিকে এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে সাধারণ জনগণের কোন উপকার হবে না। বরং এতে বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হবে। কাজেই এই অবস্থায় বন, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য তথা সাধারণ জনগণ ও প্রাণীকুলের বাঁচার জন্য এই ক্ষতিকর নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

প্রচারপত্রে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে-

* বন ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নান্যাচর-লংগদু সড়ক  নির্মাণ কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

* নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণের কু-উদ্দেশ্য সবার কাছে উন্মোচন করে দিন।

* তথাকথিত উন্নয়নের নামে বন ধ্বংস ও পাহাড়ি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন।

* নান্যাচর-লংগদুর মধ্যবর্তী পাহাড়ের বন রক্ষা করুন, আমাদের বাসভূমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ  রাখুন।

সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে প্রচারপত্রে বলা হয়েছে-

১) অবিলম্বে বন, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং দেশ ও জনমানুষের জন্য ক্ষতিকর নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করুন।

২) উক্ত প্রকল্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেবেন না। মুষ্টিমেয় ব্যক্তির লাভের জন্য উক্ত বনধ্বংসকারী প্রকল্প অনুমোদন করবেন না।

৩) বন ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সকল প্রকল্প বাতিল করুন। আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বন ও পরিবেশের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রকল্প গ্রহণ করবেন না।

* নীচে আমাদের হাতে আসা প্রচারপত্রটির লেখাটি হুবহু তুলে দেয়া হলো। সাথে ছবি আকারেও সংযুক্ত করা হলো:

------------

তথাকথিত উন্নয়ন ও যাতায়াত সুবিধার নামে বন ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করতে দেবেন না

বন ও পরিবেশ  রক্ষার্থে লংগদু-নান্যচর সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করুন

 

প্রিয় দেশবাসী,

আপনারা জানেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র মহল নান্যাচর-লংগদু সডক নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে এই প্রকল্প বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহি প্রকৌশলী সবুজ চাকমা এনটিভিতে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদিত হলে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে। অপরদিকে বাংলাদেশ আর্মির ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার মোঃ সামস্  গত ১৬/০৫/২০২৫ ইং তারিখে  সড়কটির নান্যাচর অংশ পরিদর্শন করেছেন। গত ১৯/০৫/২০২৫ইং তারিখে উক্ত সড়কে বগাছড়ির এক সেটেলার মাটি কাটার কাজ শুরু করেন। তিনি জানান আর্মিরা তাকে কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছে। বুঝা যাচ্ছে, সড়কটি নির্মাণের কাজ শুরু করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে তাদের এ প্রচেষ্টা কেবল এখন নয়। গত বছরের মার্চ মাসেও লংগদুতে রাস্তাটি নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু তখন সেটা জনগণের প্রতিরোধে বন্ধ হয়ে  যায়।

সড়ক প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে যাদের দু’পাইস কামাই হবে, তারা এটি নির্মাণের স্বপক্ষে কিছু ভূয়া যুক্তি সরকারের কাছে তুলে ধরছে। আসলে তাদের যুক্তি হলো কথার ফুলঝুরি মাত্র। তারা সড়কের লাভের দিকটি রঙচড়িয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এমনভাবে প্রচার করছে যেন এই সড়কটি হলে এলাকায় অভূতপূর্ব  উন্নয়ন  হবে, এলাকাবাসি স্বর্গসুখে থাকতে পারবে। তারা বলছে  রাস্তাটি হলে পরিবহণ ব্যয় কমবে ও জেলা সদরের সাথে খুব সহজে যাতায়াত করা যাবে।

আসলে তারা যে যুক্তি দেখিয়ে সড়কটি করতে চাই তা বর্তমান বাস্তবতায় ধোপে টেকে না। কারণ নান্যাচর সদরের সাথে রাঙামাটি জেলা সদরে ভালো সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। নান্যাচর সদরের সাথে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকেও সারা বছর নৌপথে যাতায়াত করা যায়। নান্যাচর সদরের সাথে পুরো নান্যাচর এলাকা নৌপথে ও সড়ক পথের মাধ্যমে সংযুক্ত। তাই অন্যান্য এলাকা থেকে সদরে মালপত্র পরিবহনে কোনো সমস্যা হয় না। কারণ বর্ষা মৌসুমে সব জায়গা থেকে নৌপথে এবং শুকনো  মৌসুমে গাড়ি যোগে মালপত্র পরিবহন করা যায়। সুতরাং নান্যাচর  অংশে যাতায়াতে ও মালামাল পরিবহনে জনগণের  কোন সমস্যা হয় না।

অপরদিকে লংগদু অংশে সারা বছর সব জায়গা থেকে রাঙামাটি জেলা সদরে নৌপথে যাতায়াত করা যায়। সেখানে লংগদু দিঘীনালা সড়ক হয়ে দেশের যেকোন স্থানে যাওয়া যায়। তাই লংগদুবাসীর যাতয়াত ও মালামাল পরিবহনে তেমন কোন সমস্যা হয় না।

এবার লংগদু ও নান্যাচরের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টি দেখা যাক। এই দুই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে দৈনন্দিন যাতয়াতের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। কেবলমাত্র আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে মাঝে মাঝে আসা যাওয়া হলেও নৌপথে ও সড়ক পথে আসা-যাওয়া করতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে এই যাতায়াত খুবই কমই হয়। কারণ আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেও বর্তমান যুগে বছরে দু-একবার ব্যতিত আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই এলাকাবাসীর নান্যাচর ও লংগদু সড়কের জরুরী প্রয়োজন নাই। এই কম যাতায়াতের জন্য একটি বড় সড়ক নির্মাণ করা অর্থের অপচয় ও বিলাসিতা মাত্র।

তাহলে কার লাভের জন্য নান্যাচর-লংগদু সড়ক?

মূলতঃ দু’একজন ঠিকাদার ও মুষ্ঠিমেয় সেনা-সরকারী আমলার পকেট ভারী করার জন্য নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২৪ কিলোমিটার সড়কের প্রায় অর্ধেক জনমানবহীন। এখানে এখনো গভীর প্রাকৃতিক বন রয়েছে। সড়কটি হলে এই বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তা হবে অপুরণীয়। লংগদু ও নান্যাচর মোনে যে বনজ সম্পদ রয়েছে তা দু’এক বছরের মধ্যেই সব ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ মুনাফা লোভী কাঠ ব্যবসায়ীদের তৎপরতার ফলে তখন এসব বনের গাছ কেটে বাজারজাত করা সহজতর হবে। গাছ বাঁশ সাবাড় হয়ে গেলে এলাকাটি বিরানভূমিতে পরিণত হবে। বন্য পশুপাখি ও জলজ প্রাণীও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পানির উৎস হিসেবে যে সব ছড়া, ঝর্ণা, ঝিরি  রয়েছে সেগুলো শুকিয়ে গিয়ে আশেপাশের এলাকায়ও তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে যত্রতত্র পাকা সড়ক নির্মাণের কারণে বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কী ক্ষতি হয়েছে তা নুতন করে বলার দরকার নেই, বুঝতেও গবেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। একটু খেয়াল করলেই তা বোঝা যায়। এখানে শুধু এটা বলা যথেষ্ট যে, যে দিকে পাকা সড়ক হয়েছে, সে দিকের বন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে প্রত্যেক গবেষক এই সত্যটি এক বাক্যে স্বীকার করবেন। প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের কারণে ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে খাবার পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়, যা দেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রায়শঃ শিরোনাম হয়ে থাকে।

মানুষ নিজের বাঁচার প্রয়োজনে খেত-খামার রক্ষা করতে সেই খেত-খামারের মধ্য দিয়ে রাস্তা করে না। সামান্য কষ্ট হলেও তারা ঘোরা পথে হেঁটে যায়। মানুষের বাঁচার জন্য বন দরকার। তাই বন রক্ষার জন্য সরকারও নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা যায় উল্টো চিত্র। এখানে এমন কাজ হাতে নেয়া হয়, যাতে বন ধ্বংস হয়। এই বন ধ্বংসের সহায়ক কাজের মধ্যে রয়েছে অপ্রয়োজনে ও যত্রতত্র পাকা সড়ক নির্মাণ ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন। বনের মধ্য দিয়ে নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণ করার অর্থ হলো ১০০ পার্সেন্ট বন ধ্বংস করা। মানুষের প্রয়োজনে উক্ত বন রক্ষার জন্য নৌপথে লংগদু ও নান্যাচরের মধ্যে যাতায়াত করতে অসুবিধা কোথায়? যুগ যুগ ধরে কি মানুষ এই নৌপথ ব্যবহার করে আসছে না?

এই সড়কের নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের আগে তার পরিবেশগত ও অন্যান্য ক্ষতি কী হবে তার জরিপ করা হয়েছে কীনা আমাদের জানা নেই। এমনকি এই সড়কটি হলে জনগণের আদৌ লাভ হবে কীনা তাও হিসাব করা হয়েছে বলে মনে হয় না। মোট কথা, এই রাস্তা নির্মাণ করা হলে তাতে জনগণের তথা দেশের কোন মঙ্গল হবে না, উপকার হবে না। এতে মূল্যবান বন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যই কেবল ধ্বংস হবে। তাই উন্নয়ন ও যাতায়াতের সুবিধার মামুলি কথা বলে সড়কটি নির্মাণের প্রকল্প যারা গ্রহণ করেছেন, তারা আসলে দেশবাসীকে ধোকা দিয়ে বোকা বানাতে চাইছেন।

সচেতন দেশবাসী,

অতীত থেকে বতর্মান পর্যন্ত যেসব শাসকগোষ্ঠি সরকারি ক্ষমতায় আসীন হয়েছে তারা সবাই  পার্বত্য চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে  অদূরদর্শী ও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন, বনবিভাগ  কর্তৃক হাজার  হাজার  একর ভূমি অধিগ্রহণ করে লক্ষ লক্ষ সেগুন গাছ লাগিয়েছে। শুধু যে তারা নিজেরা লাগিয়েছে তাই নয়, তারা জনগণকেও লাগাতে উৎসাহিত করেছে। সেগুন চারা নার্সারি করে কম মূল্যে বিক্রি করেছে। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন কোটি কোটি সেগুন গাছে ভরে গেছে। এই সেগুন গাছ থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হলেও এবং চাষীরা দীর্ঘ সময় পরিচর্যা করে সামান্য কিছু টাকা পেলেও প্রকৃতি ও পরিবেশের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা লক্ষ-কোটি টাকার বিনিময়েও পূরণ করা সম্ভব নয়। ব্যাপক মাত্রায় এই সেগুন গাছ রোপনের ফলে প্রকৃতি আজ রুক্ষ্ম হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। শুকনো মৌসুমে ব্যাপকভাবে পানির অভাব দেখা  দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পানির অভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকুলের জন্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। কারণ সেগুন বাগানে পশু পাখিরও অস্তিত্ব দেখা যায় না। যেখানে সেগুন বাগান সেখানে অন্য কোন গাছ বাঁশ জন্মাতে পারে না এবং মাটির নিচের সব পানি শুষে নেয়।

সেটেলার পুনর্বাসন

নান্যাচর-লংগদু সড়কটি নির্মাণের অন্য একটি উদ্দেশ্য হলো বহিরাগত সেটেলার পুনর্বাসন। নান্যাচরের অনেক সেটেলার নান্যাচর-লংগদু সড়কের ডাকঘর মোন (উঁচু পাহাড়) নামক স্থানে পাহাড়িদের মালিকানাধীন জমি তাদের বলে মিথ্যাভাবে দাবি করে থাকে। সড়কটি হলে সেনারা সেখানে তাদেরকে বসতিস্থাপনের চেষ্টা করবে। এতে ভূমি নিয়ে পাহাড়ি-বাঙালি বিরোধ ও সংঘর্ষ অনিবার্য, তীব্র ও স্থায়ী হয়ে পড়বে। শান্তি তিরোহিত হবে এবং পাহাড়িরা নিজ জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাবে। অন্যদিকে সেখানে শত শত সেটেলার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হলে বন ধ্বংসের প্রক্রিয়া আরও বেশি ত্বরান্বিত হবে।

মোটা দাগে নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো: ১) মুষ্টিমেয় কয়েকজনের পকেট ভারী করা। ২) বহিরাগত সেটেলার পুনর্বাসন করা। ৩) বনের মূল্যবান প্রাকৃতিক গাছ আহরণে কাঠ ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দেয়া।

অন্যদিকে এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে সাধারণ জনগণের কোন উপকার হবে না। বরং এতে বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হবে। কাজেই এই অবস্থায় বন, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য তথা সাধারণ জনগণ ও প্রাণীকুলের বাঁচার জন্য এই ক্ষতিকর নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তাই আহ্বান:

* বন ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নান্যাচর-লংগদু সড়ক  নির্মাণ কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

* নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণের কু-উদ্দেশ্য সবার কাছে উন্মোচন করে দিন।

* তথাকথিত উন্নয়নের নামে বন ধ্বংস ও পাহাড়ি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন।

* নান্যাচর-লংগদুর মধ্যবর্তী পাহাড়ের বন রক্ষা করুন, আমাদের বাসভূমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ  রাখুন।

সরকারের কাছে দাবি:

১) অবিলম্বে বন, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং দেশ ও জনমানুষের জন্য ক্ষতিকর নান্যাচর-লংগদু সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করুন।

২) উক্ত প্রকল্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেবেন না। মুষ্টিমেয় ব্যক্তির লাভের জন্য উক্ত বনধ্বংসকারী প্রকল্প অনুমোদন করবেন না।

৩) বন ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সকল প্রকল্প বাতিল করুন। আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বন ও পরিবেশের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রকল্প গ্রহণ  করবেন না।

প্রচারেঃ নান্যাচর-লংগদু বন ও পরিবেশ  রক্ষা কমিটি

তারিখ: ২৫ মে ২০২৫ খৃষ্টাব্দ





সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।








Post a Comment