""

সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা কে?


অমৃত লাল চাকমা, সাজেক, বাঘাইছড়ি

গতকাল রাঙামাটি জেলার বাঘাইহাটে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে মোঃ নাঈম নামে শান্তি পরিবহনের গাড়ির চালকের সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও অনেকে।

যেখান থেকে ঠ্যাঙাড়েরা গুলি চালায় সেটা হলো বাঘাইহাট সরকারী প্রাথমকি বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলা। এই ভবনটি বাঘাইহাট আর্মি জোন থেকে উত্তর দিকে মাত্র ১০০ থেকে ১২০ হাত দূরে, বলা যায় একেবারে কাছে। গত ৭ জুন থেকে ঠ্যাঙাড়েরা বাঘাইহাট বাজারের রাঙ্গুনীয়া বোর্ডিং-এ অবস্থান করছিল। এই বোর্ডিংও সেনা জোনের পাশে।

মূলত বর্তমানে স্থগিত হওয়া ৯ জুনের বাঘাইহাট উপজেলা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য ঠ্যাঙাড়েদেরকে ৭ জুন দুপুরে বাঘাইহাট নিয়ে আসা হয়। ঐদিন তারা বিশেষ কয়েকজন প্রার্থীর নির্বাচনী ও পোলিং এজেন্টসহ ভোটারদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় মাজলং নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ৮ জুন ঠ্যাঙাড়েদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সাজেকে সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। অপরদিকে প্রশাসন ঠ্যাঙাড়েদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেয়।

এতে ঠ্যাঙাড়েরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে যায় এবং সশস্ত্রভাবে বাঘাইহাটে তাদের অবস্থান অব্যাহত রাখে। শুধু তাই নয়, তারা সাধারণ নিরীহ লোকজনকে হয়রানি করে, হুমকি-ধমকি দেয় ও তাদের টাকা পয়সা-জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। এলাকার মুরুব্বীরা স্থানীয় বাঘাইহাট জোনসহ প্রশাসনকে এ ব্যাপারে অবগত করলেও কোন কাজ হয়নি। তারা ঠ্যাঙাড়েদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয় নি; বরং জোন কর্তৃপক্ষ বলে যে, যে ঠ্যাঙাড়েরা বাঘাইহাট বাজারে অবস্থান করছে তারা নিরস্ত্র, তারা স্থানীয় ভোটার।

ঘটনার দিন অর্থা গতকাল মঙ্গলবার সকালে উজো বাজার ও মাজলং বাজারের ব্যবসায়ীরা বাঘাইহাট বাজার থেকে মালামাল কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় ঠ্যাঙাড়েরা তা আটকিয়ে রাখে। এতে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ও প্রতিবাদ জানায়। ঠ্যাঙাড়েরা প্রতিবাদরত কয়েকজন নারীকে মারধর করলে এলাকার লোকজন আরও বেশি উত্তেজিত ও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। হাজার হাজার জনগণ রাস্তায় নেমে পড়ে। তারা বাঘাইহাট বাজারে গিয়ে ঠ্যাঙাড়েদের খুঁজতে থাকে। সেখানে তাদের না পেয়ে তারা স্কুল ভবনে যায় এবং ঘেরাও করে।

এ সময় ঠ্যাঙাড়েরা তাদের হাতে থাকা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে জনতাকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলি ছুঁড়তে থাকে। তাদের ছোঁড়া গুলি বাসের হেলপার নাঈমের গায়ে লাগলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিসারত অবস্থায় তিনি মারা যান।

বাঘাইহাটে ঠ্যাঙাড়েদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ নারীরা। এর মধ্যে সামনে মাঝের নারীসহ কয়েকজন ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন। 

এখানে বলা দরকার যে, নারীদের মারধর করার পর বিক্ষুদ্ধ লোকজন ঠ্যাঙাড়েদের খুঁজতে বাঘাইহাট বাজারের দিকে যখন যাচ্ছিল, তখন মুরুব্বীরা বাঘাইহাট জোন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেন ঠ্যাঙাড়েদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তারা কর্তৃপক্ষকে বলেন যে, জোনের পক্ষ থেকে ঠ্যাঙাড়েরা নিরস্ত্র বলা হলেও তা ঠিক নয়, কারণ জনগণ তাদেরকে সব সময় সশস্ত্র অবস্থায় দেখেছে। মুরুব্বীরা এও জানান যে, যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।

কাজেই গতকাল নাঈম হত্যার দায় ঠ্যাঙাড়েদের সাথে বাঘাইহাট জোন কমান্ডার খায়রুল আমিনকেও অবশ্যই নিতে হবে। জনগণের প্রশ্ন হলো, ঠ্যাঙাড়েরা দিন দুপুরে অস্ত্রসহ এতদিন ক্যাম্পের পাশে অবস্থান করলেও জোন কমান্ডার ও তার সৈন্যরা তা দেখেন না কেন? তাদের কী চোখ নেই? এলাকায় সন্ত্রাসী আসলে ক্যাম্পে খবর দিতে তো সেনারা সব সময় জনগণ ও মুরুব্বীদের চাপ দেয়। এমনকি সন্ত্রাসীদের খবর না জানালে শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত চালানো হয়। কিন্তু একেবারে ক্যাম্পের পাশে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা ঘোরাফিরা ও অবস্থান করলেও তাদেরকে তারা গ্রেফতার করে না কেন?

গতকালের ঘটনায় ঠ্যাঙাড়েদের হাতে অস্ত্র থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরও এবং তাদের ছোঁড়া গুলিতে নাঈম খুন হওয়ার পরও জোন কর্তৃপক্ষ এখনও ঠ্যাঙাড়েদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের গ্রেফতার করেনি। অন্যদিকে ঠ্যাঙাড়েরা আজও সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের স্টাফসহ সকলকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভয়ে সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। ঠ্যাঙাড়েদের কারণে এখন সাজেকে পাহাড়ি-বাঙালির স্বাভাবিক কাজকর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। পর্যটনেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কর্মসূচির কারণে পর্যটকবাহী গাড়ি আটকা পড়ছে।

এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, বাঘাইহাট জোনের কমান্ডার খায়রুল আমিনই সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও মদত দিয়ে যাচ্ছেন। তার মত সেনা অফিসারদের জন্যই আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে যত অশান্তি। কাজেই সরকার ও সেনাবাহিনীর উচ্চ নেতৃত্বের কাছে জনগণের দাবি হলো সাজেকসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ঠ্যাঙাড়েদের গ্রেফতার করা হোক, খায়রুল আমিনসহ ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের মদতদাতাদেরও যথোপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক। #

১৯ জুন ২০২৪



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।







0/Post a Comment/Comments