খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
সম্প্রতি পাহাড়ি-বিরোধী সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গার পর সরকার ও সেনাবাহিনীর বিপক্ষে যে গণক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে
ফেরানোর জন্য একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহল জুম্মদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত বাঁধিয়ে
দেয়ার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
এজন্য একটি বিশেষ দলের সশস্ত্র সদস্যদের
ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তারা এখন ইউপিতিএফের সাংগঠনিক এলাকায় উস্কানীমূলকভাবে
সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে।
তবে স্বার্থান্বেষী মহলটির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ
করে দিতে জনগণকে সোচ্চার ও সক্রিয় হতে হবে বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
জানা গেছে, গতকাল (৮ অক্টোবর) রাত থেকে
পানছড়ির রূপসেন পাড়া, হাতিমারা ও মধুরঞ্জন পাড়ায় জনসংহতি সমিতির একদল সশস্ত্র সদস্য
অবস্থান করছে। কয়েকদিন আগে এই দলের এক সদস্য ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক নিকোলাস চাকমাকে
মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল।
তার প্রতীকী ছবি। সংগৃহিত |
এলাকায় জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র দলটির অবস্থানের কারণে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগি সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে বলে, দলের এক নেতা সিএইচটি নিউজকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “তাদের অবস্থানের কারণে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন
সরকারের কাছে দাবি নিয়ে আন্দোলন করার জন্য এখন পূর্ণ মনোযোগ ও শক্তি নিয়োজিত করতে
পারছি না।”
উল্লেখ্য, জনসংহতি সমিতির (সন্তু) উক্ত
সশস্ত্র দলটি জনগণের সমালোচনা ও চাপের মুখে সেখান থেকে কয়েকদিন আগে নো-ম্যানস ল্যান্ডে
সরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। নিকেলাস চাকমাকে মৃত্যুর হুমকি কার্যকর করতে তারা আবার ফিরে
এসেছে।
সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনসহ
ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচলসহ দেশ বিদেশের প্রবাসী জুম্মদের ঐক্যের ডাক ও সংঘাত
বিরোধী জোরালো প্রচারণা সত্বেও জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র দলটির ইউপিডিএফের সাংগঠনিক
এলাকায় অবস্থান করার বিষয়টি একটি সত্যকে প্রকাশ করে। আর তা হলো, এই দলটি জনগণের স্বার্থ,
মতামত, দাবি ও আকাঙ্ক্ষার কোন তোয়াক্ষা করে না।
এদিকে জানা গেছে, গতকাল রাতে জেএসএসের
(সন্তু) অন্য একটি সশস্ত্র দল দীঘিনালা থেকে সাজেকের গঙ্গারাম হয়ে গলাছড়ি (উগুদোছড়ির
কাছে) যায়। আজ সকালে তারা সেখানে দুপুরের খাবার খায়। এলাকাটিও ইউপিডিএফের সাংগঠনিক
এলাকা হিসেবে পরিচিত।
এছাড়া জেএসএসের (সন্তু) আরও কিছু সশস্ত্র
সদস্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সাজেকের মাজলং-এ হরেন্দ্রপাড়া ও শিবপাড়ায় উস্কানিমূলকভাবে
অবস্থান করছে। তবে আন্দোলনের বৃহত্তর স্বার্থে এতদিন ইউপিডিএফ সে বিষয়ে নিশ্চুপ ছিল
বলে দলের এক নেতা জানিয়েছেন।
লক্ষ্য করার বিষয় হলো, জেএসএস সন্তু গ্রুপের
সশস্ত্র দলগুলোর উস্কানিমূলকভাবে ইউপিডিএফের সাংগঠনিক এলাকায় আনাগোনার বৃদ্ধি এমন
সময়ে ঘটছে যখন পাহাড়িদের দোকানপাট, বাড়িঘর ও বিহারে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে
বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সাংগঠনিকভাবে এ বছর কঠিন চীবর দানোৎসব পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উল্লেখ্য , ২০১৮ সালে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের মধ্যে যে সমঝোতা হয় তাতে উভয় পক্ষ একে অপরের সাংগঠনিক এলাকায় বিচরণ করবে না বলে সম্মত হয়েছিল।
কিন্তু জেএসএস (সন্তু) উক্ত সমঝোতা লঙ্ঘন
করে ইউপিডিএফের সাংগঠনিক এলাকায় নিয়মিত সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে এবং ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন
ইউপিডিএফ সদস্যকে খুন করেছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, কায়েমী স্বার্থবাদী
মহলটি চায়, যে কোন প্রকারে পাহাড়িদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটাতে, যাতে
জনগণের দৃষ্টি “সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন” ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কর্মসূচি
থেকে অন্য দিকে সরিয়ে নেয়া যায়।
ওই মহলটি চায় পাহাড়িদের দলগুলো যাতে
কোনভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। এ জন্য তারা মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। আর তারা এটা
জানে যে, এ কাজে সফল হতে হলে তাদেরকে পাহাড়িদের যে কোন একটি রাজনৈতিক দলকে হাত করতে
হবে।
তবে বর্তমানে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি
ছাত্র আন্দোলনের কারণে পাহাড়িরা আগের যে কোন সময়ের চাইতে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
কাজেই কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলটির ষড়যন্ত্র অতীতে সফল হলেও এবার জনগণ তা হতে দেবে
না।
ইউপিডিএফ জানিয়েছে তারা জেএসএসকে রাজনৈতিকভাবে
মোকাবিলা করবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।