দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
“জাগিয়ে তোলো নারী শক্তি, রুখে দাও অন্যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকা অপরিহার্য” এই ব্যানার স্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের
দীঘিনালা উপজেলা শাখার ৪র্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর ২০২৪) সকাল ১১টায় দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া এলাকায়
এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে মেরুনা চাকমা ও জিনিয়া চাকমার সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত থেকে বক্তব্য
রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক চন্দন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ
সম্পাদক পরিণীতা চাকমা, বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রতিভা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম
নারী সংঘের পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি মিনতি চাকমা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য
রবিতা চাকমা।
শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকল শহীদদের সম্মানে
দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সম্মেলনে ইউপিডিএফ নেতা চন্দন চাকমা নারী সমাজকে আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, নারীরা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ভূমিকা রাখলে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিকামী জনতা একদিন নিশ্চয় বিজয় লাভ করবে। কারণ সত্য ও ন্যায়ের জয় অবশ্যই বিজয় হয়।
তিনি দালালী, লেজুড়বৃত্তিক কর্মকাণ্ড পরিহার করে সবাইকে জাতির অস্তিত্ব
রক্ষার লড়াইয়ে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, যারা জনগণের সংগ্রামী ঐক্যকে বিতর্কিত
করতে ব্যস্ত এবং স্বজাতির রক্ত পিপাসু তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
চন্দন চাকমা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, শাসকদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে যারা
জাতির ভাগ্য নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, যারা সংঘাত জিইয়ে রেখে শাসকের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে
তাদের একদিন জনতার আদালতে বিচার হবে।
তিনি জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ইউপিডিএফ-এর
পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।
নারী নেত্রী পরিণীতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী সমাজকে শক্তিশালী
করতে নারীদেরকেই সচেতন হতে হবে। সংগঠনকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নারী
সমাজ ঐক্যবদ্ধ হলে কোন অপশক্তি আন্দোলন থামিয়ে রাখতে পারবে না।
ইউপি সদস্য প্রতিভা চাকমা বলেন, নারী সমাজ যদি জাতির জন্য কাজ করে তাহলে
অধিকার আদায়ের আন্দোলন আর জোরদার করা সহজ হবে। অনেক রাষ্ট্রে আজ দেশ গঠনে নারীরা অবদান
রাখছে। তাই আমাদের পাহাড়ি নারীদেরও শুধু চার দেওয়ালে আবদ্ধ না থেকে সমাজের জন্য কাজ
করতে হবে। নারীদের শুধু রান্না-বান্নার দায়িত্ব পালন করলে হবে না, জাত রক্ষার্থে কাজ
করতে মানসিকতা রাখতে হবে। তাহলে জাতি সুশৃঙ্খল হবে।
মিনতি চাকমা বলেন, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীদেরবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ
করতে হবে। তা না হলে বিজয় অর্জন করতে কঠিন হবে। পুরুষরা আন্দোলনে নামতে পারলে নারীরা
কেন পিছিয়ে থাকবে। তাই আমাদের পাহাড়ি নারীদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকারের জন্য কাজ করতে
হবে। যারা অন্যায় করছে তাদের বিরুদ্ধে নারীদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
রবিতা চাকমা বলেন, পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি তার অর্ধেক নারীদের অবদান। নারীরা
বর্তমানে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নামছে। ৫ আগষ্টের হাজার হাজার নারী সমাজ
ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে
কোন সরকার ভূমিকা রাখেনি। তাই নিজেদের নিরাপত্তা ও জাতির অধিকাররের জন্য পাহাড়ি নারীদেরও
সোচ্চার হতে হবে।
পরে সভাপতির বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের ১ম অধিবেশন শেষ করা হয়।
এরপর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অধিবেশনে উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে মিতালি চাকমাকে
সভাপতি ও কালোরানী চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট নিয়ে নতুন
উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়।
নতুন কমিটিকে শপথ পাঠ করান পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ
সম্পাদক পরিণীতা চাকমা।
সম্মেলনে দীঘিনালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই শতাধিক নারী অংশগ্রহণ
করেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।