""

মানিকছড়িতে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইউপিডিএফ’র ২ যুগপূর্তি উদযাপন

মানিকছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

 “শত শহীদের আত্মবলিদানে গড়া, ইউপিডিএফ এর পতাকাতলে সমবেত হোন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই জোরদার করুন” এই আহ্বানে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ইউপিডিএফর ২ যুগপূর্তি উদযাপন করা হয়েছে।

আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার সকালে ইউপিডিএফ’র দুই যুগপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান শুরুতে অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন ও শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর ইউপিডিএফ’র মানিকছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক ক্যহ্লাচিং মারমা অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভের সামনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের আন্দোলনে অবিচল থাকার প্রত্যয়ে শপথ বাক্য পাঠ করান।

 পরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফ এর মানিকছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক ক্যহ্লাচিং মারমা।

 পিসিপি’র মানিকছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক অংসালা মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মানিকছড়ি থানা শাখার অর্থ সম্পাদক আতুশে মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মানিকছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি অংচাই রোয়াজা ও বৃহত্তর বাটনাতলী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি আথোয়াই মারমা, স্থানীয় কার্বারি সুইজাই মারম, সাবেক মেম্বার চাইলা প্রু মারমা ও কোকিল মনি চাকমা।

ইউপিডিএফ নেতা ক্যহ্লাচিং মারমা উপস্থিত সবাইকে অভিবাদন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যে পাহাড়ি জনগণের কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না সেটা তৎকালীন তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বুঝতে পেরেছিলেন। সেজন্য চুক্তি হওয়ার ১০ মাস আগে ’৯৭ সালের ১০ মার্চ পিসিপি, পিজিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপন করেছিলেন।

তিনি বলেন, তৎকালীন তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন আজকে তাই প্রমানিত হয়েছে। পরবর্তীতে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবির ভিত্তিতে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর নয়া যুগের নয়া পার্টি ইউপিডিএফ গঠিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনের ধারা বদলে যায়। আজ এই পার্টি দুই যুগ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। গঠনলগ্ন থেকে শাসকগোষ্ঠি ইউপিডিএফের ওপর দমন-পীড়ন চালালেও  ইউপিডিএফকে তার লক্ষ্য থেকে একচুলও বিচ্যুত হয়নি, ভবিষ্যতেও পারবে না। যতক্ষণ নিপীড়িত পাহাড়ি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না ততক্ষণ পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলন চলতে থাকবে।


তিনি ছাত্র ও যুব সমাজসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে ইউপিডিএফের পতাকাতলে সমবেত হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।

কার্বারী সুইজাই মারমা বলেন, ইউপিডিএফ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। জাতির জন্য একমাত্র লড়াকু সংগঠন হচ্ছে ইউপিডিএফ। তিনি বলেন, পার্টি আমাদের অর্থাৎ জনগণের সন্তানের মতো। সন্তানের আদরে এই পার্টিকে আমাদের রক্ষা করতে

চাইলাপ্রু মারমা সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আগামীতে ইউপিডিএফ’র আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পার্টি দীর্ঘ দুই যুগ ধরে ভূমি ও জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় আন্দোলন করে আসছে। কাজেই এই পার্টিই পাহাড়ি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পিসিপি নেতা আতুশে মারমা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এখনো পরাধীন। এই পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্তি পেতে হলে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। তিনি ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইউপিডিএফের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।

যুব ফোরামের মানিকছড়ি থানা শাখার সভাপতি অংচাই রোয়াজা বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিবাদী কণ্ঠ রুদ্ধ করে দিতে একের পর এক ইউপিডিএফের নেতা-কর্মীকে খুন, গুম করছে। শাসকগোষ্ঠির এই অন্যায় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

যুব নেতা অংথোয়াই মারমা বলেন, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করে, অনেক সহযোদ্ধার তাজা রক্তের বিনিময়ে ইউপিডিএফ আজ ২৪ বছর পূর্ণ করেছে। এই সময়ে পার্টি শাসকগোষ্ঠির অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। ফলে শাসকগোষ্ঠি পার্টিকে ধ্বংস করতে নানা চক্রান্ত চালাচ্ছে। তিনি বলেন, যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করতে হবে।

আলোচনা সভা শেষে বিকাল ৪টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিবাদী গান, নাচ পরিবেশ করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন পিসিপি’র মানিকছড়ি থানা শাখার অর্থ সম্পাদক আতুশে মারমা।








0/Post a Comment/Comments