""

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৭ম কাউন্সিল সম্পন্ন

সমু চাকমা সভাপতি ও শামীন ত্রিপুরা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত


রাবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ১১ মে ২০২৪

“পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র সমাধান! দালাল-সুবিধাবাদী ও সরকারপন্থীদের হটিয়ে আসুন, জাতীয় মুক্তির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামে যুক্ত হই।” এই স্লোগানকে সামনে রেখে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৭ম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।

আজ শনিবার (১১ মে ২০২৪) সকাল ৯ টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের শুরুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্র ও ইউপিডিএফ’র অন্যতম সদস্য শহীদ অনিমেষ চাকমাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সকল শহীদদের প্রতিশ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

কাউন্সিল অধিবেশনে প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সমু চাকমা’র সভাপতিত্বে এবং সদস্য শামীন ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা, সংগঠনের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক রোনাল চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য আগর চাকমা।

কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-নির্যাতন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা যেভাবে রাজপথে নেমেছে, সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে তা প্রশংসনীয়। আবার ছাত্র সমাজকে বিভক্ত-বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারী এবং প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বাধাদানকারী সরকারপন্থীদের ভূমিকা নিন্দনীয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অতীতে শহীদ অনিমেষ চাকমার মতন বহু যোগ্য ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠন ও বিকাশে রাবি জুম্ম শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা আমরা দেখতে পেয়েছি। পাহাড়ের চলমান সংকটে বর্তমান শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে আসবে সেটা পাহাড়ি জনগণ প্রত্যাশা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মনুষ্যত্বের শিক্ষা অর্জন করে নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিশ্বের ছাত্র আন্দোলনে প্রসঙ্গে তুলে ধরে তিনি আরো বলেন,  পুঁজিবাদী বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাকে পণ্যে হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উন্নত জ্ঞান-গবেষণায় সুযোগ না দিয়ে শুধুমাত্র পুঁজিপতিদের দেশের ভাড়া খাটা শ্রমিক বানানোর আয়োজন চলছে। শিক্ষাকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে বৈশ্বিক বিভিন্ন আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। আমেরিকাসহ দেশে দেশে  ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে ও স্বাধীন ফিলিস্তিনের সমর্থনে ছাত্র বিক্ষোভ হচ্ছে। এসব বিক্ষোভ থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদেরও অনেক কিছু শেখার-জানার আছে।

রোনাল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে জনগণের আশা আকাঙ্খা হল ছাত্র সমাজ। সমাজ-জাতির সংকটে জনগণ ছাত্র সমাজের দিকে চেয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদেরও জনগণের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমদুঃখী-বঞ্চিত মানুষ আমাদের থেকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করে থাকে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক  আন্দোলনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে ১০ মার্চ তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন ঢাকায় আয়োজিত এক সমাবেশে পার্বত্য চুক্তি যে আওয়ামী সরকারের প্রতারণা এবং জেএসএসের যে আপোষরফা তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল। বর্তমানে আওয়ামী সরকার টানা ৪ বার ক্ষমতায় থাকার পরও চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না। সম্পাদিত চুক্তির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও জেএসএসের চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের প্রতি অনীহার কারনে চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চুক্তির আশায় দিনাতিপাত না করে ছাত্র সমাজকে জুম্ম জনগণের বাঁচার দাবি স্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে যুক্ত হতে হবে।

সভাপতি সমু চাকমা বলেন, শুরুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ও সচেতন শিক্ষার্থীরা কম ছিল। আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি এই অচলায়তন ভেঙ্গে জাতীয় সংকটের সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করার। বহু ষড়যন্ত্র, বাঁধা মোকাবেলা করে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানে যৌথ অভিযানের নামে বম জাতিসত্তার উপর গণগ্রেফতার ও হয়রানি, হত্যার প্রতিবাদে আমরা রাজপথে নেমেছি। আমরা সেটা নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য ভেবেছি। আমাদের অধিকার অর্জনে ছাত্র সমাজকে সংঘটিত ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

স্বাগত বক্তব্য আগর চাকমা বলেন, ১৯৮৯ ৪ঠা মে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জন্মলাভ করে। শহীদ ভরদ্বাজ মুনি, রূপন, সমর-সুকেশ-মনোতোষ, শহীদ মিঠুন-বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনসহ অসংখ্য সহযোদ্ধার আত্নবলিদানে গড়া এই সংগঠন আগামী ২০ মে ৩৫ বছরে পদার্পন করবে। পিসিপি’তে যুক্ত হওয়া সহজ নয়। বহু প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সংগঠনে যুক্ত হতে হয়। অপরদিকে আমরা ছাত্র সংগঠনের নামধারী  দালাল, সুবিধাবাদী ও সরকারপন্থীদের একটা অংশকে দেখতে পায় যাঁরা ছাত্র সমাজকে বিভক্ত ও বিভ্রান্ত  করে থাকে। সরকারের খুঁটিতে বাধাঁ এসব প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে হটিয়ে ছাত্র সমাজকে জাতীয় মুক্তির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামে যুক্ত হতে হবে।

কাউন্সিলের অধিবেশনে উপস্থিত সকলে সর্বসম্মতিতে সমু চাকমাকে সভাপতি ও শামীন ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠিত হয়। পিসিপি রাবি শাখার নবগঠিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা। শেষে সভাপতি অঙ্কন চাকমা নতুন কমিটিকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।










0/Post a Comment/Comments