সচিব চাকমা, আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় পুনর্গঠন কমিটি, পাহাড়ি গণ পরিষদ
[লেখাটি ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি স্বাধিকার বুলেটিনের ১৭তম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিলো।
সিএইচটি নিউজের পাঠকদের জন্য এই লেখাটি ধারাবাহিকভাবে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হচ্ছে।]
(আজ ৩য় পর্ব)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
৫. রাজকীয় অতিথি বানানো তা থেকে আপ্যায়ন প্রসঙ্গে : জীবন বাবুদের রুচি,
মানসিকতা আর মিথ্যাচারের নমুনা দেখুন, “ঢাকা
বা চট্টগ্রাম যেখান থেকেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে সর্ব প্রকার সামর্থ্য দিয়ে জীপ
নতুবা কার ভাড়া করে রাজকীয় অতিথির মত করে নিয়ে যাওয়া হত। ... নজিরবিহীন
ব্যবস্থাপনায় এবং নিরাপত্তা দিয়ে ভেন্যুতে যখন তারা পৌছে যেত শীতকাল হলে গরম পানিতে
স্নান করতে দেয়া হত। সার্বক্ষণিক নিয়োজিত হত পার্টিকর্মী তাদের সুবিধার জন্য।
মুখ ধোয়ার পানি এমনকি পায়খানা করার সময় বদনায় পর্যন্ত পানি ভরে দিত দায়িত্বপ্রাপ্ত
কর্মীরা। ... আর প্রতি সকাল বিকাল ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনারে দুর্লভ সব খাবার
পরিবেশন করে আপ্যায়ন করত পাটিকর্মীর মা বোনেরা। অরণ্যের শুকর, হরিণ পর্যন্ত শিকার
করে প্রসিত বাবুদের রুচিসম্মত খাবার যোগাড় করা হত। ঢাকা চট্টগ্রামের নিত্যদিনের জীবনযাত্রায়
যা যা প্রেয়োজন টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, সাবান, তোয়ালে থেকে শুরু করে যথাসম্ভব ব্যবস্থা
করা হত তাদের জন্য যাতে তারা কষ্ট না পায়। নিজে কম খেয়ে, নিজের গরম কাপড় দিয়ে,
নিজের মশারী দিয়ে তাদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে ব্যবস্থা করে দিত পার্টি কর্মীরা।
[গুরুত্ব আরোপের জন্য নীচে দাগ দেয়া হয়েছে। সম্মানিত পাঠক দেখুন : সকাল বিকাল ব্রেকফাষ্ট]
এখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, একটা সত্যিকার
সংগ্রামী আন্দোলনকারী দল কেন কি উদ্দেশ্যে ছাত্র নেতাদের জীবন বাবুর উপরে পেশকৃত বিবরণমতো
আপ্যায়ন করতে যাবে? একটা আন্দোলনকারী সংগঠনের নিজ সামর্থ্যের বাইরে ছাত্র নেতাদের
‘রাজকীয় অতিথির মত’ নেয়া আর ‘আপ্যায়ন’ করার হেতু কি থাকতে পারে। তাদেরকে রাজনৈতিক
ও আদর্শিকভাবে (যদি সে রকম কিছু জেএসএস’এর থেকে থাকে) উদ্বুদ্ধ না করে, আন্দোলন সংগ্রামের
কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে পরিচিত না করে, ধারণা না দিয়ে কি হেতুতে আন্দোলনের মিথ্যা
জৌলুস ও সৌখিনতা দেখানো হয়েছে? জীবন বাবু “আপ্যায়নের” যে বিবরণ পেশ করেছেন তা আর
যাই হোক একটা সংগ্রামী আন্দোলনকারী দলের ‘আপ্যায়ন’ বলে মেনে নেয়া যায় না। প্রশ্নটা
বার বার জাগে কি হিসেবে ছাত্রনেতাদের সন্তু লারমা পেতে চেয়েছিলেন? কি আন্দোলনের শরীক
হিসেবে? নাকি আরো অন্য কিছু হিসেবে? আপ্যায়নের বিবরণ দেখে তো তা অন্য কিছুর অর্থ বোঝায়।
কথাটা জীবন বাবুদের বুঝানোর জন্য খুলে বলি, আমাদের সমাজের ঐ কিসিমের ‘আপ্যায়নকে’
‘জামাই আদর’ হিসেবে দেখা হয় আর কি!! কথাটা সন্তু লারমার মনপুত হবে না জানি, তবুও আসল
কথা বলতে হলো।
প্রসিত খীসার সাথে আমিও একজন। ভার্সিটিতে
থাকতে একাত্ম হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। বর্তমানেও একই আদর্শে একসাথে কাজ করছি। সন্তু
লারমার সাথে আমারও তো দেখা সাক্ষাত হয়েছে। কই আমি তো সে ধরনের ‘আপ্যায়ন’ পাইনি। প্রসিত
বাবুদের বলতে জীবন বাবু আর কাকে কাকে বুঝান, সেটাই তো ভেবে পাই না। প্রসিত খীসার সাথে
আলাপ করে তো আমরা সবাই হেসে খুন। তার জন্য কোন কালে গরম পানির ব্যবস্থা ছিলো না। সেটার
দরকারও হয়নি। কেবল অসুস্থতার সময়েই তিনি গরম পানি ব্যবহার করেন। অন্য কোন সময় নয়।
অভ্যাস হয়ে যাবার ভয়ে তিনি শীত কালেও গরম পানি ব্যবহার করতে চান না, কথাটি জীবন বাবুদের
অজানা থাকার কথা নয়। তাকে পার্টি কর্মীরাই আপ্যায়ন করেছে, পাটি কর্মীর মা বোনেরা
নয়। সুভাষ, সোহেল, যতনসহ যে সব বন্ধু আমাদের আপ্যায়ন করেছে, সঙ্গ দিয়েছে, তাদের
সবার প্রতি আমাদের সবার আন্তরিক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা তখনো ছিল, এখনো অটুট আছে। আমাদের
জন্য কোন কর্মিকে নিজের গরম কাপড় দিতে হয়নি, মশা কামড় খেয়ে নিজের মশারী দিতে হয়নি,
সে ধরনের পরিস্থিতিও ছিলো না। প্রসিত খীসাদের বেশী খাবার খাওয়ার জন্য কর্মি বন্ধুদের
কম খেতে হয়েছে, কস্মিনকালেও এ ঢাহা মিথ্যা অভিযোগ সুভাষ-সোহেল-যতন কেন অন্য কেউ করবেন
না-- এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। এ সব হচ্ছে সন্তু লারমা-জীবন বাবুদের প্রাইভেট কোং এ
বানানো কাসুন্দি। নিজের ভ্রান্ত রাজনীতির কারণে জেএসএস ’৮৯ সালের দিকে কোণঠাসা আর আর্থিকভাবে
সংকটে ছিলো। সে সময় তাদের দুর্দিন গেছে, তারপর আর নয়।
আমার ক্ষেত্রে সন্তু লারমার সাথে
দেখা করতে যাবার সময় কোন জীপ বা কার ভাড়া করা হয়নি। এটা আমি দ্যর্থহীনভাবে বলতে
পারি। প্রসিত খীসাকে একবার জীপে করে নেয়া হয়েছিলো, তাও তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন। অন্যদের
মতোই তিনি সাধারণভাবে যেতে চেয়েছিলেন। প্রসিত খীসার সাথে সন্তু লারমার তিন বার মাত্র
দেখা-সাক্ষাত হয়েছে। তার জন্য কোন বিশেষভাবে অরণ্যের শুকর, হরিণ শিকার করা হয়েছে
বলে তেমন দুর্লভ সম্মানের দিন স্মৃতি হাতরিয়েও তিনি মনে করতে পারেন না। মেহমানকে হাত
মুখ ধোয়ার পানি, সাবান, তোয়ালে দেয়া তো একেবারে সাধারণ ভদ্রতা সৌজন্যতা। সে ভদ্রতা
সৌজন্যতা দেখানোকে যদি বিরাট কিছু বলে জীবন বাবুরা দাবি করেন, সেগুলো লিখে প্রচার করতে
পারেন, তাদের কি বলা যাবে আমি ভাষা খুঁজে পাই না। তারা তো দেখছি কাউকে পানি খাওয়ালেও
তা হিসেব করে। আর পাড়ায় পাড়ায় বলে বেড়ায়, এখন লিখে প্রচারও তো করে দেখছি। মেহমান
আপ্যায়ন করে তা প্রচার করে বেড়ানো আমাদের সমাজে সাংঘাতিক হীন কাজ। শুধু আমাদের সমাজে
কেন সভ্য নাগরিকের জন্যও তো কথাগুলো সাংঘাতিক লজ্জাকর। নাহ্! জীবন বাবু-সন্তু লারমা
বাবুরা বাস্তবিক সাংঘাতিক নীচে নামতে পারেন। আন্দোলন করলে উদার হতে হয় বলেন। আপনাদের
মানসিকতা এখনো নিম্ন মধ্যবিত্তের সংকীর্ণ গণ্ডি পেরোতে পারেনি। কাউকে সৌজন্যতার খাতিরে
কিছু করে দিলেও তা দশ দিগন্ত মুখর করে প্রচার চালান।
সমাজে একেবারে সাধারণ খেটে খাওয়া
লোকেরাও যে রুচি আর ভদ্রতা মেনে চলে তারও বহু নীচে নেমেছেন আপনারা। শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে
বলছেন,... এমনকি পায়খানা করার সময় বদনায়
পর্যন্ত পানি ভরে দিত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। ছি! ছি!! জীবন এত নীচু আর এত নোংরা
কথাবার্তা বলতে পারেন!!! রুচিতে একটুও বাধলো না? আপনার ভাবখানা এমন একটু হলে এটাও বলে
ফেলতেন,...ধুইয়ে দিত!! জীবন বাবু—সন্তু লারমা বাবু বুকে হাত দিয়ে বলেন তো লোকে পায়খানা
করার সময় কেউ বদনায় পানি ভরে দিতে যায় কি??? কথাগুলো বলতে বমি আসছে। আপনারা নীচু
আর নোংরামির চর্চা করেন, দুর্গন্ধ ছড়ান বলেই বাধ্য হয়ে আমাদেরকে এই নোংরা কথাগুলো
সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হলো। আপনাদের রুচি, সংস্কৃতি আর মানসিকতার লেভেল এ পর্যন্ত
হবার কারণেই জনসংহতি সমিতির আন্দোলনের এ দশা হয়েছে। সুভাষ, সোহেল, যতনসহ যারা যারা
আমাদেরকে গাইড করেছে, তাদের সবাই আমাদের বন্ধু ও ভাই। তাদের সাথে আমাদের বেশ অন্তরঙ্গতাও
হয়েছিলো। যা দেখেছি কই তাদের মনে তো আপনাদের মতো এতো কুটিলতা ছিলো না। চুক্তির ফলে
আপনারা হয়েছেন লাভবান, টাকার পাহাড় বানিয়েছেন। আর বলি হয়েছে সুভাষ-সোহেল-যতনদের
মতো আরো বহু নিবেদিতপ্রাণ কর্মি।
অসন্তুষ্ট কর্মি আর জনগণের দৃষ্টি
ফিরিয়ে দিতে নোংরামির আশ্রয় নিয়েছেন। ধুম্রজাল সৃষ্টি করে নিজেকে জনরোষ থেকে বাঁচানোর
ফন্দি আঁটছেন।
৬. জেএসএস ধ্বংসের ধুয়ো: কথায় কথায় জেএসএস নেতৃত্ব মধ্যবিত্ত সুলভ সহানুভূতি
কুড়ানোর উদ্দেশ্যে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। ইউপিডিএফ জেএসএস নেতৃত্ব ধ্বংস করতে চায়,
জেএসএস’এর নেতৃত্ব ধ্বংস করতে চায়... ধুয়ো তুলে সাধারণ কর্মি আর জনগণকে বিভ্রান্ত
করার প্রচারণা চালায়। এখানে জনসংহতি সমিতিকে পরিষ্কারভাবে বলে দেয়া দরকার যে, জেএসএস
প্রতিষ্ঠিত হবার আগেও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িরা ছিলেন, জেএসএস ধ্বংস হয়ে গেলেও
তারা থাকবেন।
জেএসএস আর পার্বত্য চট্টগ্রামের
জনগণ এক জিনিষ নয়। তাদের স্বার্থও এখন আর এক নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে “জাতিসত্তার
স্বীকৃতি” ও “অধিকার” প্রতিষ্ঠার কথা বলে জেএসএস আন্দোলন করেছে, এটা কেউ অস্বীকার করে
না। সে অধিকার যে তারা আদায় করতে পারেনি, এই সত্যও লুকিয়ে রাখা যাবে না। জেএসএস নেতৃত্ব
নিজেরা স্বীকার করছে চুক্তিতে জনগণের অধিকার অর্জিত হয়নি।
ইউপিডিএফ কখনোই জেএসএস’কে ধ্বংস
করে দিতে চায় না। সে প্রশ্ন অবান্তর। জেএসএস’এর ভিতরে টিকে থাকার উপাদান থাকলে, তা
কেউ ধ্বংস করে দিতে পারে না। আর সে উপাদান না থাকলে, বাইরে থেকে খুঁটি দিয়ে হাজার
ঠেস দিয়ে রাখলেও, কেউই তাকে রক্ষা করতে পারবে না।
জনগণের অধিকারের স্বপক্ষে কথা বলায়,
আগে সরকারের শত বাধার মুখেও জনগণের ঐকান্তিক সাহায্য-সহযোগিতায় জেএসএস টিকে গিয়েছিলো।
চুক্তি করে জনগণের সাথে বেঈমানি করায়, এবার সরকার শত সাহায্য করলেও জেএসএসকে বাঁচিয়ে
রাখতে পারবে না। রেডিও-টিভিতে ব্যাপক কাভারেজ, পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও
তা টিকতে পারবে না।
ইউপিডিএফ জেএসএসক’কে ধ্বংস করতে
হবে না। সেটা ইউপিডিএফ চায়ও না। সময়ের গতিতে জেএসএস এমনিতে নিজের থেকেই ধ্বংস হয়ে
যাবে। জেএসএস’এর মেয়াদ ফুরিয়েছে। ক্লিনিকে কৃত্রিম অক্সিজেন দিয়ে তাকে ক্ষমতাসীন
আওয়ামী লীগই বাঁচিয়ে রেখেছে নিজ স্বার্থে। ইউপিডিএফ’কে ‘মরা গুই সাপ লাথি মেরে ফি-অমঙ্গল
ডেকে আনতে হবে কেন?’
বরং ইউপিডিএফ জেএসএসকে সরকারের খপ্পর
থেকে বেরিয়ে এনে, আন্দোলনে টেনে এনে সংগঠন হিসেবে টিকিয়ে রাখতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
তা কেবল কথার কথা নয়, তিন জেলার বয়োজ্যষ্ঠদের নিয়ে গঠিত যোগাযোগ কমিটির সামনে ইউপিডিএফ
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০০ তারিখে সে প্রস্তাব দিয়েছে। তার সাক্ষী তিন জেলার উপরিস্থ ব্যক্তিরা।
জীবন বাবুদের অবস্থা ‘চোরের মার
বড় গলা’। পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন-খারাবি চালাচ্ছেন আপনারা আর দোষ চাপাতে চান ইউপিডিএফ'এর
উপর। ভুতের মুখে রাম নাম! আপনারা আবার ধর্মীয় বাণীও আওরান! “খুন খুনের জন্ম দেয়। হত্যা হত্যার।” বাহ! বাহ! কত সাধু কথাবার্তা!!! অভিনয়
বেশ ভালো শিখেছেন। এ ধর্মীয় বাণীর মর্মার্থ যদি আপনারা আদৌ বুঝতেন, তাহলে পার্বত্য
চট্টগ্রামে সাধারণ জনগণের এত দুর্ভোগ হতো না, নিরীহ মানুষকে আপনাদের হাতে অহেতুক প্রাণ
হারাতে হতো না। ধর্মীয় বাণী কাকে শোনান জীবন বাবু??? সন্তু লারমা বাবুর ক্ষেত্রে কি
এ বাণী প্রযোজ্য নয়? তিনি খুন করলে কি খুনের জন্ম হয় না? তিনি হত্যা করলে কি হত্যার
জন্য হয় না? পত্রিকায় সাক্ষাতকার দিয়ে সন্তু
লারমা চুক্তি বিরোধীদের গলা টিপে হত্যা করতে, হাত-পা ভেঙে দিতে নির্দেশ দেন। দেখুন:
যুগান্তর ১৩ নভেম্বর ও সাপ্তাহিক ২০০০ ১ নভেম্বর সংখ্যায়] সমিতির গোপন মিটিঙে আরো
ভয়ঙ্কর কথাবার্তা বলেন। কুসুম প্রিয়-প্রদীপ লালকে বর্বরোচিতভাবে খুন করার পর সন্তু
লারমা খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউজে (এপ্রিল’৯৮) চাকুরীজীবীদের সাথে দেখা করে নারকীয় উল্লাসে
মেতে উঠে বলেছিলেন, “চুক্তি বিরোধীদের হরিণ শুকরের মতো গুলি করে মারা হবে।’ তা পত্রিকায়
আসেনি। কিন্তু তার সাক্ষী তো সেদিন উপস্থিত চাকুরীজীবীরা সবাই। তার পর পরই পার্বত্য
চট্টগ্রামে সন্তু চক্র খুনের নেশায় মেতে উঠে। হরেন্দ্র-হরক্যা, আনন্দ-অমর, বীরলাল,
দেবোত্তম, অরুণ... ... খুনের তালিকা অনেক দীর্ঘ। এ পর্যন্ত ৪৫ জন। এ তালিকায় আরো কত
নিরীহ মানুষের নাম যে যুক্ত হয়, ভাবতেও গা হিম হয়ে আসে।
জীবন বাবু উদ্ধত্যের সাথে বলেন,
“প্রয়োজনে মরিয়া হয়েও জেএসএস প্রতিরক্ষার্থে
আক্রমণাত্মক ভুমিকা নেবে। সাধারণ মানুষের সমর্থন না পেলেও। কারণ মরতে কে চায়?”
আপনাদের এ মনোভাবের কারণে এ বছর ১০ নভেম্বরের আগে খাগড়াছড়ির নিরীহ সরকারি চাকুরীজীবী
কালী রতন চাকমা নিজের জায়গায় মানবেন্দ্র লারমার মূর্তি বানাতে দিতে অপারগতা প্রকাশ
করায় সন্তু লারমার নির্দেশে পানছড়ির লতিবানে নৃশংসভাবে খুন হন। বহুরূপী অভিনয়ে পারদর্শী
সন্তু লারমা কত কি ভূমিকায় যে নামেন!! আমিন-কানুনগো না হয়েও আগ বাড়িয়ে বিতর্কিত
জায়গা মাফার জন্য রাঙামাটিতে ফিতা নিয়ে হুড়মুড় করে দৌঁড় দেন। আরো কত কি কাণ্ড!!
মধ্যযুগীয় বর্বতাকেও আপনারা হার মানাচ্ছেন। মরিয়া হয়ে আপনারা আক্রমণাত্মক ভূমিকা
নিচ্ছেন। বৌদ্ধ মন্দিরে প্রব্যজ্যারত শ্রমণ নিরূপম চাকমা আর চন্দ্র মোহন চাকমা আপনাদের
হাত থেকে রেহাই পেলো না। মায়ের মৃত্যুর পর সামাজিক বিধানমতে নিরুপম চাকমা প্রব্রজ্যা
গ্রহণ করেছিলো। পার্বত্য শান্তি পরিষদের নাম দিয়ে সন্তু লারমার সশস্ত্র দুবৃর্ত্তরা
কিয়ং’এ হামলা চালায়। তাদের কাছ থেকে রঙ বস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। মারধর করে অমানুষিকভাবে।
কিয়ং’এ পর্যন্ত ভাঙচুর চালিয়েছে আপনাদের শান্তি পরিষদের শান্তি সেনারা!! এই অকল্পনীয়
বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদে সাম্য মৈত্রী বিহারের(সুভলং) অধ্যক্ষ প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি
দিতে বাধ্য হন। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ পুরোহিত কিয়ং হতে শ্রমণ অপহরণ আর কিয়ং ভাঙচুরের
জন্য জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র ক্যাডারদের বিবৃতিতে দায়ী করেছিলেন । আপনারা তা তথাকথিত
‘পার্বত্য শান্তি পরিষদের’ ঘাড়ে চাপে দিয়ে সাধু সাজতে চেয়েছিলেন। সত্য কখনই চাপা
থাকে না। সন্তু লারমা নিজে পত্রিকায় সাক্ষাতকার দিয়ে পার্বত্য শান্তি পরিষদের দায়িত্ব
নিয়েছেন। [দেখুন : সাপ্তাহিক ২০০০ নভেম্বর ১৭, পৃষ্টাঃ ২৫]।
রাঙ্গুনিয়ার চৌচালা বিলে রাতে ঘুমন্ত
লক্ষ্মী কুমার চাকমার বাড়ীতে হামলা চালিয়ে তার দুটি ছেলেকে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে
অত্যন্ত নৃশংসভাবে জেএসএস খুন করেছে। লক্ষ্মী কুমার চাকমার মৃত্যুর পথযাত্রী বৃদ্ধা
মা পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি, তাকে শারিরীকভাবে মারধর করা হয়েছে। লক্ষ্মী কুমার চাকমা
আজ বিনাদোষে পুত্র হারা। তার মাত্র দু'পুত্রকে আপনারা ধরে নিয়ে হত্যা করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায়
জনসংহতি সমিতি এ ধরনের হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। এ দীর্ঘ বিবরণ এখানে তুলে ধরার অবকাশ
নেই। জুম্মো দিয়ে জুম্মো ধ্বংসের ভয়াবহ সরকারি নীল নক্সা বাস্তবায়ন করে ক্ষমতাসীন
সরকারের অনুগ্রহভাজন হয়ে আঞ্চলিক পরিষদের ক্ষমতার গদিতে টিকে থাকাই হচ্ছে সন্তু লারমার
এখন আসল উদ্দেশ্য। যত জুম্মো তিনি খুন করতে পারেন, ততই তিনি সরকারের বিশ্বাসভাজন হতে
পারছেন। সে কারণে তিনি ইউপিডিএফ-এর সাথে বোঝাপড়া হোক তা কখনই চান না। ইউপিডিএফ অনেক
ছাড় দিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। এ বছর ২০ ফেব্রুয়ারি আর ২৩ সেপ্টেম্বর
দু’বার জনসংহতি সমিতির সাথে ইউপিডিএফ’এর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ইউপিডিএফ কি সদিচ্ছা আর
আন্তরিকতা দেখিয়েছে তার সাক্ষী উপস্থিত মুরুব্বীরা।
জীবন বাবু চিঠিতে লিখছেন, “এ মুহুর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বয়ং ভগবান
হাজির হলেও তিক্ততার অবসান বা সহিংসতার কোন সুরাহ্য করতে পারবে না।” আপনাদের মতলব
খোলাসা হয়ে পড়েছে। ধর্মের বাণী আপনাদের মুখে মুখে আর স্বয়ং ভগবান হাজির হলেও সহিংসতার
সুরাহা করতে পারবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছেন। কত স্ববিরোধী কথাবার্তা আপনাদের।
আবার এক জায়গায় জীবন বাবু নিজেই বলছেন, “কেবল
গোয়ার্তুমী দিয়ে নেতার কর্তৃত্ব বা ব্যক্তিত্ব রক্ষা করা যায় না।”
নিজেদের ব্যর্থতা, অক্ষমতা আর দোষ
আড়াল করে জেএসএস'এর সাধারণ কমি আর সাধারণ জনগণের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়ে সন্তু লারমারা
নিজেদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখার মতলবে ইউপিডিএফ’এর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে বিষেদাগার
করে চলেছেন। উদোর পিন্ডি বঁুদোর ঘাড়ে চাপানোর ব্যর্থ অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। ঈশপের গল্পের
রাখাল বালকটির মতো সন্তু লারমাও ইউপিডিএফ “জেএসএসকে ধ্বংস করতে চায়, “জেএসএস'এর নেতৃত্ব
ধ্বংস করতে চায়...” এসব কাল্পনিক অভিযোগ এনে সাধারণ কর্মিদের সহানুভূতি কুড়িয়ে নিজেকে
রক্ষা করার কি-ই না মরিয়া হয়ে উঠেছেন। “জেএসএস ধ্বংস হচ্ছে” জিগির তুলে সাধারণ কর্মিদেরকে
ইউপিডিএফ’এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারলে তাতে জনগণের মূল দাবি ঢাকা
পড়ে যাবে। তখন অধিকার আদায়ের আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হবে। তাতে সরকার-সেনাবাহিনী
আড়াল হয়ে পড়বে। জুম্মোরা নিজেরা নিজেরা পরস্পর মারামারি করবে। রক্তারক্তি হবে তাদের
মধ্যে। জুম্মো দিয়ে জুম্মো ধ্বংস করতে হলে সরকারকে ইউপিডিএফ'এর সাথে জেএসএস'এর সাধারণ
দ্বন্দ্ব-সংঘাত লাগিয়ে দিতে হয়। এটা করতে সক্ষম হলে এতে ক্ষমতাসীন সরকারের ভীষণ লাভ।
সন্তু লারমা হচ্ছে সরকারের এই ভয়াবহ নীল নক্সা বাস্তবায়নের প্রধান গুটি। নিজের ক্ষমতা
ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য তাকে জেএসএস’এর সাধারণ কর্মিদেরকে আন্দোলনরত ইউপিডিএফ’এর
সাথে কৃত্রিম দ্বন্দ্ব লাগিয়ে রাখতে হয়। এতে সাধারণ কর্মিরা ব্যস্ত থাকবে। আর চুক্তিজনিত
অসন্তোষ নিয়ে সন্তু লারমাকে ঝামেলা করতে পারবে না। এতে তিনি আঞ্চলিক পরিষদের গদি নিরাপদ
রাখতে পারেন। জাতির বৃহত্তর স্বার্থ নয়, তার ব্যক্তি স্বার্থ ও ক্ষমতাই তার কাছে প্রধান।
সে কারণে সন্তু লারমা জাতীয় ঐক্য সংহতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। ইউপিডিএফ
বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে অনেক কিছু ছাড় দিয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে সরকার বিরোধী আন্দোলন
করার প্রস্তাব দিলে জেএসএস রাজাকার-আলবদরের ভূমিকা নিয়ে সরকারকে সহায়তা করার জন্য
এক পায়ে খাড়া থাকে। জেএসএস’এর সহ সভাপতি উষাতন তালুকদার তো বলেও ফেলেছেন ‘সরকারের উচিত পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তি বিরোধী
সব ধরনের তৎপরতা কঠোর হস্তে দমনের উদ্যোগ নেয়া। এ ব্যাপারে সরকার আমাদের সহযোগিতা
চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।’ [ আজকের কাগজ, ৭ ডিসেম্বর ২০০০]
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার
প্রতিষ্ঠার কোন কর্মসূচী তাদের নেই। যারা অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিবেদিত তাদের
ধ্বংস করে সরকারের বিশ্বাসভাজন হয়ে ক্ষমতায় থাকাই হচ্ছে তাদের এখন একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান।
নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করাই হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীলদের একমাত্র লক্ষ্য।
জনসংহতি সমিতির একটা বিরাট অংশ চুক্তির
ফলে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। এ অসন্তোষ যাতে সরকার
বিরোধী আন্দোলনে রূপ না নেয় সে দিকে শাসকগোষ্ঠি সজাগ রয়েছে। সন্তু লারমা কথায় কথায়
পুরানো কর্মসুচীতে ফিরে যাবার গোস্বা দেখিয়ে, সরকার বিরোধী কথা বলে অসন্তুষ্ট সাধারণ
কর্মিদের ধরে রাখতে চান। সে জন্য তিনি রক্ত দেবেন বলে হাঁকডাক ছাড়েন, অথচ পরক্ষণে
আবার আঞ্চলিক পরিষদের গদিতে বসেন, প্যারিসে শেখ হাসিনার ইউনেস্কো পুরস্কার অনুষ্ঠানে
উপস্থিত থাকেন, বৃহত্তর আন্দোলনের কথা বলে সাধারণ কর্মিদের বিভ্রান্ত করেন, আবার পরে
প্রেস কনফারেন্স করে তার জন্য সরকারের কাছে ক্ষমা চান।
“আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আঞ্চলিক পরিষদ পাওয়া যথেষ্ট” রায় দিয়ে
সংগ্রাম করতে উদ্দীপ্ত কর্মিদের দাবিয়ে রাখার কৌশল খাটান। এই যথেষ্ট বলে তাদেরকে সরকার
বিরোধিতা থেকে নিরস্ত রাখেন। সাধারণ কর্মিদের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার
জন্য তিনি আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন।
৭. তিন এমপিদের প্রসঙ্গ: পার্বত্য চট্টগ্রামে পর পর দুই বার আওয়ামী লীগ হতে
এমপি নির্বাচিত হওয়াটা জেএসএস’এর আক্কেল সেলামি । কল্পরঞ্জন চাকমা তো প্রেস কনফারেন্স
করে সন্তু লামার উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন আমার নাম ধরে কিছু বলার সাহস
তার (সন্তু লারমার) হবে না। আমি (কল্পরঞ্জন) না থাকলে এরা (সন্তু বাবুরা) প্রকাশ্যে
ঘোরাফিরাও করতে পারতেন না। [দেখুন : সংবাদ, ১৭ নভে, ২০০০] সন্তু লারমা আজ পর্যন্ত সে
ব্যাপারে মুখ খুলতে পারেননি? ২০ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে
চুক্তি বিরোধী ও সরকারের বিশেষ মহলের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। অথচ তার পরের
দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের সময় সে ব্যাপারে কোন কথা
তুলেননি। কল্পরঞ্জনের ভাষায় সেসব হচ্ছে, “মাঠের
কথা।” [দেখুন: পূর্বকোণ ২১ মে, ২০০০]।
সন্তু লারমাদের মাঠের কথা আর ভিতরের
কথার মধ্যে পার্থক্য আছে, তা প্রমাণিত হয়েছে। বাইরের মাঠে হাঁকডাক ছেড়ে তারা সরকারের
বিরুদ্ধে কথা বলেন, জনগণের অধিকারের পক্ষে আছেন এমন ভাবভঙ্গী দেখান, আর ভিতরে হাসিনার
সাথে দেখা করে সুযোগ—সুবিধা আদায় করে নেন। তিন এমপি যাদের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার,
হাসিনার সামনে সন্তু লারমা তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে পারেন না। তখন তিনি আর কোন
বিশেষ মহল খুঁজে পান না। সবাই তখন হয়ে যান এক মহল, ক্ষমতাসীন মহল। এতে কল্পরঞ্জন পার্বত্য
মন্ত্রণালয়ে, দীপঙ্কর শরনার্থী টাস্কফোর্সে, বীর বাহাদুর উন্নয়ন বোর্ডে আর সন্তু
লারমা আঞ্চলিক পরিষদে। একই ট্রেনের যাত্রী, শুধু কম্পার্টমেন্ট আলাদা। তাদের গন্তব্য
একদিকে, সেটা হচ্ছে নির্বাচন-ক্ষমতা-স্বার্থ।
৮. তথ্য বিকৃপ্তি আর মিথ্যাচার প্রসঙ্গে:
ক) লক্ষ লক্ষ টাকা দেয়া: প্রসিত খীসাদের জেএসএস লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছে বলে
জীবন বাবু প্রচারণায় নেমেছেন। এখানে প্রশ্ন করি, তাদের তখনকার ছাত্রনেতাদের যদি আপনারা
লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে থাকেন, তাহলে যুক্তির নিরিখে এটা বেরিয়ে আসে যে, সমিতির নেতা
হিসেবে কোটি কোটি টাকা সন্তু লারমার হাতে ছিলো। না হলে শুধু ছাত্রনেতাদের পেছনে কিভাবে
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে পেরেছিলেন? লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রসিত খীসারা পার্বত্য চট্টগ্রামের
আনাচে-কানাচে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তা পার্বত্য চট্টগ্রামের আবাল—বৃদ্ধ সবাই জানে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে প্রসিত খীসারা টাকা কাজে লাগান। আর জীবন বাবু-সন্তু
লারমারা যুদ্ধ বিরতির অবসরে সাধারণ কর্মিদের ফাঁকি দিয়ে আড়ালে আড়ালে কোটি কোটি টাকা
জমা করেন, যেহেতু “এই পৃথিবী টাকার গোলাম”। কোটি কোটি টাকা হজম করতে হলে তাদের সরকারের
নিরাপত্তা আর আশ্রয় দরকার। সে কারণে যেন তেন রকমের একটা চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া তাদের
জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। আন্দোলন চলতে থাকলে কোটি কোটি টাকা গায়েব করা কঠিন ছিল।
তাই আন্দোলন গুটিয়ে ফেলা তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা তাই—ই করেছেন।
সরকারের কাছে জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে জীবন বাবুরা
দেশে আর ফিরেননি। কোলকাতা, দিল্লী আর কানাডায় আশ্রয় নিয়েছেন, ফিরার সাহস হয়নি।
আর প্রসিত খীসারা “লক্ষ লক্ষ টাকা”
দিয়ে আন্দোলন করেও নিজেদের এখন পর্যন্ত চাল-চুলো বলতে কিছু নেই। তারা এখনো আগের নীতি-আদর্শ-লক্ষ্য
নিয়ে আছেন।
এবার আরো প্রশ্ন করি, সন্তু লারমা
বাবু আপনি প্রসিত খীসাদের যে “লক্ষ লক্ষ টাকা” দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন, সেগুলো কাদের
টাকা??? ব্যক্তি টাকা, না আপনার... টাকা??? ঐ টাকা তো জনগণ থেকেই নিয়েছিলেন। কাকে
কি বলেন। শৈবাল দীঘিরে বলে উচ্চ করে শির, লিখে রাখো এক ফোটা দিলাম শিশির'। কোথায় দাঁড়িয়ে
কিসের বড়াই করেন??? আপনার পায়ের নীচে তাকিয়ে দেখুন। প্রসিত খীসাদের বিরুদ্ধে জেএসএস'এর
“নুন খাওয়ার” অভিযোগ আনেন। তা আপনি কাদের “নুন খেয়েছিলেন”? প্রসিত খীসারা তো জনগণের
সাথে বেঈমানী করেনি। জনগণের “নুন খেয়ে” আপনি জনগণের বুকে ছুরি বসিয়ে দিয়েছেন। জীবন
বাবু আপনার ভাষায়ই বলি, “একেই বলে দুধ কলা
দিয়ে সাপ পোষা।”
খ) জেএসএস’এর শুভেচ্ছা নিয়ে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা: পর্দা খুলে দেখা যাক, কে
কার শুভেচ্ছা কাজে লাগিয়ে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছে। ’৮৯ সালে জেলা পরিষদের নির্বাচন
বিরোধিতা করেও ফায়দা করতে না পেরে রাজনৈতিকভাবে যখন জেএসএস কোণঠাসা, সন্তু লারমার
নেতৃত্ব নিয়ে ত্রিপুরার শরণার্থী শিবিরে বিরাট প্রশ্ন, অসন্তোষ, জনতা ক্ষুব্ধ, সাধারণ
কর্মিরা হতাশ-রণক্লান্ত, পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি থেকেই জেএসএস বলতে গেলে বিতাড়িত,
জেএসএস বিধ্বস্ত-বিপর্যস্ত, সে এক বেহাল অবস্থা। এরশাদ সরকার সন্তু লারমার জেএসএস'কে
বলতে গেলে রাজনৈতিকভাবে চালমাত করে ফেলেছিলো। তখন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ তথা ছাত্র সমাজই
নতুন করে জনমনে আশার সঞ্চার করেছে। সে সময় ছাত্র জাগরণ না হলে সন্তু লারমারা এতদিন
কোথায় যে ভেসে যেতেন, তার কোন ঠিক ঠিকানা থাকতো না। এরশাদ সরকার তাদেরকে কানাকড়িও
দাম দিতে চায়নি। শান্তিবাহিনীর উদ্দেশ্যে সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। তাদের সাথে
বৈঠকও ভেঙে দেয়। জেএসএস রাজনৈতিকভাবে দারুণ মার খায়।
জেএসএস’এর বেহাল অবস্থা দেখে ত্রিপুরার
শরনার্থী শিবির হতে শরনার্থীরা দেশে ফিরে আসতে শুরু করেছিলো। সাধারণ কর্মি থেকে শুরু
করে অনেক নেতা শরণার্থী শিবিরে ছুটি নিয়ে পড়ে থাকতো। অনেকে সারেন্ডার করতে শুরু করে।
সন্তু লারমাকেও সে সময় কোন চুক্তি ছাড়াই সারেন্ডার করতে হতো— এটা কোন সময় গবেষণা
হলে বেরিয়ে আসবে।
সে সময় ছাত্র পরিষদের কথা বলে সন্তু
লারমারা শরণার্থীদের আশ্বস্ত করতেন। আন্দোলনে মনোবল যোগাতেন। সন্তু লারমার পেছনে প্রসিত
খীসারা রয়েছে বলে তখন শরণার্থী শিবিরে আর শান্তিবাহিনীর সাধারণ কর্মিদের কাছে প্রচার
চালানো হতো—একথা তো এখনো দেশে ফিরে আসা শরণার্থীরা বলবেন।
সন্তু লারমাকে জিজ্ঞেস করি, মিথ্যা
বুলি আওরাচ্ছে কে? কে চুক্তির প্রথম বর্ষপূর্তি থেকে “রক্ত দিচ্ছে”? কার শুভেচ্ছা কাজে
লাগিয়ে, কার কাঁধে ভর করে আপনি নেতৃত্ব টিকিয়ে রেখেছিলেন?? নিজের নেতৃত্ব টিকিয়ে
রাখতে হাজার হাজার লোককে শরণার্থী বানিয়েছিলেন। ব্যক্তি স্বার্থে তাদের বলি দিয়েছিলেন।
কি পেয়েছে তারা??? আর আপনি এখন আছেন কোথায়??? এ কারণে আপনি এখন পুলিশ গার্ড ছাড়া
বেরুতে পারেন না। নিরাপত্তা নেই বলে কান্নাকাটি করেন। দিন ঘনিয়ে আসছে কেবল শরণার্থীরাই
লাঠি নিয়ে আপনাকে মারতে আসবে। তখন সেনা-পুলিশ প্রহরায় থেকেও আপনি বাঁচতে পারবেন না।
গ) বিশুদ্ধ নেতৃত্ব: জীবন বাবু প্রশ্ন রেখেছেন, “এ যাবত তার (প্রসিত খীসার)
বিশুদ্ধ নেতৃত্ব কি দিতে পেরেছে?” প্রশ্নটা যদি জীবন বাবুকে করি, তার মতো দোদুল্যমানতা
আর সন্তু লারমার নোংরা কলুষিত নেতৃত্ব কি দিলো জনগণকে??? বিশুদ্ধ নেতৃত্ব’এর প্রতি
জীবন বাবুর আস্থা নেই বুঝা গেল। সে কারণেই বুঝি তিনি কলুষিত নেতৃত্বের লেজ ধরেছেন।
প্রসিত খীসা সব সময়ই নির্ভুল আর নিখুঁতভাবে কাজ করতে পেরেছিলেন এমন দাবি তিনি কখনো
করেন না। ছাত্র থাকাকালে সব কিছু নিখুঁতভাবে করতে পারা সম্ভব কতখানি ছিল তাও বিবেচনার
দাবি রাখে। জীবন বাবু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কি ভূমিকা রেখেছিলেন, তা কি তিনি
একটু কষ্ট করে স্মরণ করবেন? আলাপ আলোচনা ছাড়া খেয়াল-খুশীর বশে তিনি এমন এমন কাজ করে
বসতেন তার জন্য প্রসিত খীসাসহ আমাদেরকে কি অবস্থায় পড়তে হতো। তার খেসারত দিতে হতো
আমাদেরকে। জীবন বা কাজকারবারের দায় ভাগ বর্তাতে আমাদের উপর। তিনি এমন এমন কাজ করেছিলেন,
যে সব প্রসিত খীসা জানতেনও না। অথচ, পরিহাসের বিষয় হচ্ছে তার জন্য প্রসিত খীসাকে অভিযুক্ত
হতে হয়েছে। তাকে অনেকে ভুল বুঝেছে। সে সব ঘটনা অনেকে জানেন না। প্রসিত খীসা সে সব
কারোর কাছে বলেননি। বন্ধুর কেবল গুণ নয়, দোষগুলোও মানিয়ে নিতে হয় বলে প্রসিত খীসা
মুখ খুলেননি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে জীবন বার একটা বিশেষ “ক্যাসেট” বাজিয়ে শুনিয়েছিলেন।
এলোপাতাড়িভাবে কথাবার্তা বলায় সাধারণ কিছু ছাত্র ভুল বুঝে ক্ষেপে গিয়েছিল। অথচ সে
ধরনের কোন কথাবার্তা জীবন বাবুর সাথে হয়নি। “ক্যাসেট”টি নিয়ে আগে ভালোভাবে না শুনে
বাইরে প্রচার না করারই সিদ্ধান্ত ছিল। উক্ত “ক্যাসেটে” ধারণকৃত ঘটনার সাথে কিছু ছাত্র
নিজেদেরও এক করে ফেলেছিল। অথচ দায়ভাগ কার উপর পড়েছিল? সে নিয়ে অনেক ঝক্কি ঝামেলা
পোহাতে হয়েছে। সমষ্টির সিদ্ধান্তের বাইরে মনগড়া খেয়াল—খুশীর বশে কাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছাত্রদের মাঝে কি ঐক্য ধরে রাখা যায়? আলোচনা না করে ধর্মীয় সংগঠনের “সাদা কাগজে”
স্বাক্ষর দিলে তাতে কি সংগঠনের শৃঙ্খলা থাকে? জেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করতে তখন চট্টগ্রামে
২৪ পদাতিক ডিভিশন ও খাগড়াছড়ি সেনা ব্রিগেড ছিল ভীষণ তৎপর। তারা বেশ কিছু ছাত্রকে
চর হিসেবে ভাসিটিতে লাগিয়েছিল। সেনা গোয়েন্দাদের যোগসাজশে ভার্সিটিতে তখন ছাত্রবেশী
স্পাইরা কি কি করেছিলো তার শিকার তো জীবন বাবুও হয়েছিলেন। ক্ষমতাসীন এরশাদ সরকারের
কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিতে যেসব অধঃপতিত জুম্মো ছাত্র “নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ”-এ
যোগ দেয়, পরবর্তীতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের হাতে “নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ” উৎখাত হলে,
ঐ অধঃপতিত ছাত্ররা প্রথমে খাগড়াছড়ি সেনা ব্রিগেডের শরণাপন্ন হয়। সেনা গোয়েন্দাদের
মদদে ভার্সিটিতে ছাত্রদের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি করে। চট্টগ্রাম উপজাতীয় ছাত্র পরিষদের
মিটিঙে [ ৮৯ সালের ২৪ মার্চ] হামলা চালিয়ে সংগঠনের ফাইলপত্র কেড়ে নেয়। সে সব কোথায়
সরবরাহ করা হয়েছে তা সবার ধারণা মধ্যে আছে। জীবন বাবু সরকার সেনাবাহিনী ভার্সিটিতে
“আঙ গারিয়ে দিলে” (তন্ত্র মন্ত্র করলে) ছাত্রদের মাঝে কি বিশৃঙ্খলা হবে না? আমি নিজে
তখন শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছি। অবস্থান পাল্টে যাওয়ায় এখন জীবন বাবুর ভূমিকাও সাংঘাতিক
পাল্টে গেছে দেখছি। অনেক কাল্পনিক অভিযোগ তিনি দাঁড় করাচ্ছেন। ধুধুকছড়ায় বসে সন্তু
লারমা যে চক্রান্ত করেন, তার ফলশ্রম্নতিতে পিসিপি’তে গন্ডগোল দেখা দেয়। (সূত্র: স্বাধিকার
বুলেটিন ১৭)
(চলবে...)
* ২য় পর্ব দেখতে ক্লিক করুন এখানে
* ১ম পর্ব দেখতে ক্লিক করুন এখানে
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।