""

ইউপিডিএফের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আলোচনা সভা


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর ২০২৪) বিকাল ৪টায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

“দালালি-লেজুরবৃত্তিতে মুক্তি নেই, লড়াই সংগ্রামে সামিল হোন; মৌনতা অপরাধ, নিষ্ক্রীয়তা আত্মঘাতী, প্রতিরোধেই মুক্তি” এই ব্যানার শ্লোগানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমার সঞ্চালনায় ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বন্দর থানা শাখার সহসভাপতি পিংকি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা ও বন্দর এলাকার সমাজ কমিটির বরুণ চাকমা।

আলোচনা সভা শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জাতিসত্তার মুক্তির সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সভায় ইউপিডিএফের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মীবাহিনী ও জনগণের উদ্দেশ্যে পার্টির কেন্দ্রীয় বার্তা পাঠ করেন কর্নি চাকমা। 

আলোচনা সভায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা বলেন, ক্ষমতাশালী স্বৈরাচারী হাসিনার পতন হবে নিজেও কল্পনা করতে পারেনি। কিন্তু দেশের ছাত্ররা স্বৈরাচারী হাসিনাকে টেনে নামিয়েছে। এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের পাহাড়ি জনগণ৷ সেনাবাহিনী ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী (মুখোশ) ও মগপার্টিকে সৃষ্টি করেছে হাসিনার আমলে। ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী কর্তৃক ইউপিডিএফের তরুণ নেতা মিঠুন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে ৯৭-এ চুক্তির নামে জুম্ম জনগণের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চব্বিশের গণ আন্দোলনে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। আওয়ামী লীগের সাজানো নির্বাচন আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু হাসিনা পরবর্তী ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও পাহাড়ে সাম্প্রতিক হামলা হয়েছে। আমাদের সংগঠনের কর্মীদের হত্যার শিকার হতে হয়েছে। এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দেশের এই সংকটকালীন সময়ে আমাদের শক্তিকে একত্রিত করে লড়াই সংগঠিত করতে হবে। জনগণের এই পার্টিকে যৌক্তিক সমালোচনা করে সঠিক পথে পরিচালনার সহযোগিতা দিতে হবে। জনগণের সহযোগিতার মাধ্যমে সঠিক পথে আন্দোলন পরিচালনার মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

নারী সংঘের নেত্রী পিংকি চাকমা বলেন, পাহাড় ও সমতলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে যেভাবে সেনা ও শাসকশ্রেণীর পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্ষণ, ভূমি বেদখল, খুন, সাম্প্রদায়িক হামলায় চরম নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি বিরাজমান তেমনি শহর বন্দরেও আমরা একই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই নিরাপত্তাহীনতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এখন যে অরাজক পরিস্থিতি চলছে এখান থেকে উত্তরণের জন্যে শুধু পার্টি কিংবা সংগঠন নয়, এই দায়িত্ব আমাদের সকলের কাঁধে নিয়ে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।


পিসিপি নেতা রোনাল চাকমা বলেন, পাহাড়ে সবচেয়ে কাছের শহর হলো চট্টগ্রাম। যখন পাহাড়ে অগ্নিসংযোগ, ভূমি বেদখল, হত্যাকান্ড ঘটে তখন সেই প্রভাব আমাদের এখানে সবচেয়ে বেশি পড়ে। জীবিকার তাগিদে হোক বা পড়াশোনার তাগিদে হোক আমরা যে এখানে অবস্থান করছি দিনশেষে পাহাড়ে নিজের ঘর, পরিবার পরিজন, ভিটেমাটি ভালো না থাকলে আমরা ভালো থাকতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, নিপীড়িত জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে একটি সুশৃঙ্খল পার্টি প্রয়োজন। জনগনের জন্য, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পার্টিকে শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। এই পার্টিকে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে জনগণের লড়াই  সংগ্রামকে শক্তিশালী করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বন্দরের সমাজ কমিটির সভাপতি বরুণ চাকমা বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি আমাদের সমাজের ভুল ত্রুটিগুলো শোধরাতে হবে। একটি জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সমাজে শৃঙ্খলা স্থাপন করা জরুরী। জুয়া, মাদকের সহজলভ্যতা আমাদের সমাজের ভিতকে ক্ষয় করে দিয়েছে। দেশের এই অরাজক পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে মা-বোনদের সতর্ক চলাফেরা করতে হবে।

সভাপতি বক্তব্যে বিজয় চাকমা বলেন, যারা নিঃস্বার্থভাবে লড়াই সংগ্রামে নিবেদিত তারাই অধিকার ছিনিয়ে আনতে পারেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা কখনও কল্পনা করেননি যে তার করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। কিন্তু ছাত্রদের গণজোয়ারে তার পতন হয়েছে। পাহাড়েও নিপীড়িত জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা যদি জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের চেতনাকে লালন করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ি তাহলে পাহাড়ের নিপীড়িত জাতি ও জনগণের মুক্তি আসবেই।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


 





0/Post a Comment/Comments