চবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে(চবি) বহু ভাষার বর্ণমালা প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’র
আয়োজন করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন
করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক
অমল ত্রিপুরা।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়ার সঞ্চালনায় এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সভাপতি রোনাল চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে।
ছাত্র নেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশ বহু জাতি, বহু ভাষা ও সংস্কৃতির
দেশ। এদেশে বাঙালি ছাড়াও ৫০টির অধিক জাতিগোষ্ঠীর ৪১টি মাতৃভাষা রয়েছে। ভাষাগুলোর
বিকাশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ১৪টির অধিক ভাষা বিলুপ্তির পথে
রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সাল থেকে সরকার পাহাড় ও সমতলের ৫টি জাতিসত্তার মাতৃভাষায়
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও শিক্ষক নিয়োগের অপর্যাপ্ততা, প্রশিক্ষণের
অভাব এবং ব্যবস্থাপনা ঘাটতির কারণে এই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখছে না। ভাষাসমূহ যথাযথ
বিকাশ ও সংরক্ষণের জন্য সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিকার নিশ্চিতসহ
সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
ছায়েদুল হক নিশান বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
করা হলেও এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্র সব জাতিগোষ্ঠীর ভাষার মর্যাদা দেয় না এবং সব জাতিগোষ্ঠীর
মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেনি ভাষা আন্দোলনের এত বছর পেরিয়ে গেলেও।
কিছুদিন আগে ভাষাগত সংখ্যালঘুর উপর জাতীয়তাবাদী বাঙালিদের আক্রমণের কথা
উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনে যারা বাঙালিদের উপর জাতিগত, সাংস্কৃতিক নিপীড়ন
চালিয়েছিলো, আজ উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা তাদেরই ভূমিকা গ্রহণ করেছে। তাছাড়া শিক্ষাব্যবস্থার
বাণিজ্যিকীকরণের মধ্য দিয়ে ভিনদেশী ভাষার উপর প্রাধান্য দিয়ে মাতৃভাষায় শিক্ষার
অবনতি ঘটানোর ব্যাপারে তিনি নিন্দা জানান।
তিনি আরো বলেন, সুমাইয়া সিকদারসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ জন শিক্ষার্থীকে
অন্যায্যভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। অবিলম্বে এই বহিষ্কারাদেশ বাতিল করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে
গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্র জোট সকাল ১০টায় ভাষা শহীদদের স্মরণে বুদ্ধিজীবী চত্বরে পুষ্পমাল্য
অর্পণ করে এবং বিকাল ৪ টা থেকে বুদ্ধিজীবী চত্বরে বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা প্রদর্শনীর
আয়োজন করে। সাথে বিলুপ্তপ্রায় ভাষার বর্তমান অবস্থা নিয়ে পেপার কাটিং প্রদর্শন
করা হয়। সন্ধ্যা ৬ টায় আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার। এতে ভাষা দিবস কেন্দ্রিক
ও দেশাত্মবোধক নানান গান, কবিতা ও নৃত্য পরিবেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতিসত্তার নৃত্য,
কবিতা পরিবেশিত হয়েছিলো। এছাড়া চট্টগ্রামভিত্তিক নানান সাংস্কৃতিক সংগঠনের অতিথি
শিল্পীবৃন্দ গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক ছাত্র
জোটভুক্ত বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন আরাফাত, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ভুবন চাকমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রণ্ট এর সংগঠক চন্দনা রানী প্রমুখ।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।