কাউখালি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
“নারীর সম্মান-সম্ভ্রম ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে এক হও, লড়াই
করো” শ্লোগানে বান্দরবানের থানচিতে খেয়াং নারীকে গণধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে এবং
ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাঙামাটির কাউখালীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
করেছে ইউপিডিএফভুক্ত চার সংগঠন।
আজ মঙ্গলবার (৬ মে ২০২৫) বেলা ২টার সময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ,
হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গনতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ কাউখালী
উপজেলা শাখাসমূহ যৌথভাবে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।
কাউখালির বেতবুনিয়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার এলাকা থেকে চার সংগঠনের
নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা মিছিলটি নিয়ে বেতবুনিয়া বাজারে
গিয়ে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের ফটিকছড়ি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি বিউটি মারমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কাউখালি উপজেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক সুজেচ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক দীপায়ন চাকমা, কাউখালি উপজেলা শাখার সভাপতি জিপল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কাউখালি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক একামনি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কাউখালি উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ক্যথুই মারমা।
সমাবেশে দীপায়ন চাকমা থানচিতে খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার
নিন্দা জানিয়ে বলেন, যেভাবে চিংমা খেয়াংকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তা
কখনো স্বাধীন দেশের চিত্র হতে পারে না। দেশের গণঅভ্যুত্থানের পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রামে
যেভাবে নারী ধর্ষণ ও নারীর ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটছে তা খুবই উদ্বেগজনক। নিজের জুম কিংবা
বাড়িতেও আমাদের মা-বোনেরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। জাতির অস্তিত্ব ধ্বংস করে
দিতে বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরো বলেন, সমতল থেকে যারা পর্যটকবেশে বান্দরবানের নীলগিরি,
নীলাচলসহ বিভিন্ন স্থানে আনন্দ-উল্লাসে ভ্রমণে যান আজকে তাদেরই কিছু কুলাঙ্গার খেয়াং
নারীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। ১৮ মাসের ছোট্ট মেয়েটিকে মাতৃহারা করেছে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতার কথা তুলে ধরে বলেন, বিচারহীনতার
সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনাগুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮ সালে বিলাইছড়িতে
সেনা সদস্য কর্তৃক দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত
সংঘটিত এ ধরনের ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনার কোন বিচার হয়নি। ফলে ধর্ষকরা রেহায় পেয়ে বার
বার এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে।
তিনি অবিলম্বে থানচিতে খেয়াং নারীকে গণধর্ষণ ও হত্যার সাথে
জড়িতদের গ্রেপতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
জিপল চাকমা বলেন, পাহাড়ের কোন জায়গায় আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদে
নেই। জুমে গিয়ে ধর্ষণ-হত্যার শিকার হচ্ছে, পানি আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, স্কুল-কলেজে
গেলেও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। গতকাল বান্দরবানের থানচিতে নিজের জুমে ধান রোপন
করতে গিয়ে তিন সন্তানের জননী চিংমা খেয়াংকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হাসিনা সরকারের পতনের পরে
ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অর্ন্তবর্তী সরকার গঠন করা হলেও পাহাড়ের পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন
হয়নি। পাহাড়ের মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট কিছুটা হলেও স্বস্তির আশা করেছিলো। কিন্তু
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হতে না হতেই খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক
হামলা করে শত শত ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসযোগ ও ৪ জনকে হত্যা করা হয়। এর পর
থেকেই প্রতিনিয়ত অন্যায়-অবিচার চলছে পাহাড়িদের ওপর। সেনা তল্লাশি, হয়রানি, অন্যায় ধরপাকড়,
খুন, ধর্ষণ অব্যাহত রয়েছে আগের মতোই।
তিনি অবিলম্বে চিংমা খেয়াং এর হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পাহাড়ের অন্যায়-অবিচার বন্ধের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
একামনি চাকমা বলেন, আমরা কীভাবে নিরাপদে থাকবো? সরকারতো আমাদেরকে
নিরাপত্তা দেয় না, উল্টো অনিরাপদ করে রেখেছে। আমরা কি এদেশের নাগরিক নয়? আমরাতো এদেশেই
বসবাস করি। তাহলে কেন বার বার আমাদের মা বোনদের ধর্ষণ-হত্যার শিকার হতে হবে?
সভাপতির বক্তব্যে বিউটি মার্মা চিংমা খেয়াং এর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের নারীদের আজ কোথাও নিরাপত্তা নেই। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের আর ঘরে বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। ধর্ষণ, খুনসহ সকল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, নিজেদের রক্ষার জন্য আন্দোলন করতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।