""

লামায় ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিসত্তার ৩৭ পরিবারের মাঝে চার সংগঠনের ত্রাণ বিতরণ

নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ 
শনিবার, ১৪ মে ২০২২


‘এসো বন্ধু প্রাণে প্রাণ মেলাই, ঐক্য-সংহতি ও মানবতা রক্ষায় লামায় ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিসত্তার পাশে দাঁড়াই’ এই আহ্বান সম্বলিত শ্লোগানে আজ শনিবার (১৪ মে ২০২২) বান্দরবানে লামার উপজেলার সরই ইউনিয়নে লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ লি. কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিসত্তার ৩৭ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার, হিল কালচারাল ফোরাম, ঢাকাস্থ জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার।  

এতে আরো সংহতি জানিয়ে অর্থ তুলে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম ভ্যাটেরেনারি এন্ড এলিমেন্স সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সংগঠন, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবি। ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি সফল করতে দেশ-বিদেশের নানা শুভাকাঙ্ক্ষী আর্থিক, মানসিকভাবে সহযোগিতা দিয়েছেন।


ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের (পূর্ব -৩) চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট
  ভূলন লাল ভৌমিক , গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা, একই সংগঠনের নগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উচিং শুভ চাক, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের চট্টগ্রাম নগর সভাপতি সাইফুর রুদ্র, হিল কালচারাল ফোরামের সভাপতি প্যাশন চাকমা, ঢাকাস্থ জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের প্রতিনিধি ইশিতা বসু, স্থানীয় কার্বারি লামকঙ ম্রো, কার্বারী জয়চন্দ্র ত্রিপুরা, কার্বারী রেং ইয়েন ম্রো, এবং স্থানীয় যুবকদের প্রতিনিধি জন ম্রো, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজেন্দ্র ত্রিপুরা  এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিং ম্রো প্রমুখ।


ত্রাণ বিতরণের আগে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম বলেন, এখানকার মুনাফাখোর রাবার কোম্পানি ম্রো এবং ত্রিপুরাদের জুম,ফলজ বাগান,প্রাকৃতিক বন পুড়িয়ে দেয়। তাঁরা বাংলাদেশকে মানে না এবং সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। সরকারের কাজ সংবিধানের নীতিমালা রক্ষা করা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে,দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও তাঁরা রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। তাহলে কি ধরে নেব এতে সরকারের হাত রয়েছে? আমরা আশা রাখছি,সরকার অতি শ্রীঘ্রই রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিবে। এবং পাহাড়িদের ভূমি ও জাননমালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করবে।


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিল কালচারাল ফোরামের সভাপতি প্যাশন চাকমা বলেন, আকাশে মেঘ জমে সাময়িক সময়ের জন্য। এই মেঘ কিছুটা সময়ের জন্য সূর্যের আলোকে ঢেকে রাখতে পারে। দীর্ঘ সময়ের জন্য নই। আমাদের সবাইকে সূর্যের মতো তেজোদ্দীপ্ত এবং প্রতিবাদী হতে হবে। একি সাথে তিনি লেখাপড়া প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন,এখানে শিক্ষা সুবিস্তীর্ণ করতে হবে। এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, আপনারা সাহস হারাবেন না আমরা সার্বক্ষণিক আপনাদের পাশে রয়েছি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের প্রতিনিধি হয়ে প্রভাতী চাকমা বলেন, রাবার কোম্পানি কর্তৃক আগুন দেওয়ার ফলে এখানকার ফসলাদি নষ্ট হয়ে যায়। খাদ্য সংকট দেখা যায়। এক পর্যায়ে তিনি তুমরা ও ম্রো কথা টেনে এনে বলেন,মাতৃত্বকালীন সময়ে মায়ের পুষ্টি দরকার।সেখানে আমরা দেখতে পেয়েছি, তুমরাও ম্রো ১১ দিনের শিশুকে কোলে নিয়ে ডেইলি স্টারকে  বলছে তারা অনাহারে দিনাতিপাত করছে। এবং কোম্পানির ত্রান ফিরিয়ে দিয়ে গ্রামের গ্রামবাসী যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে তাঁর জন্য  তিনি গ্রামবাসীদের স্যালুট জানান। এবং আগামীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সার্বক্ষণিক পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।


গ্রাম প্রধান লাঙকম পাড়ার কার্বারী লাঙকম ম্রো বলেন, আমরা রাবার বাগানের দখল করা ৪০০ একর জমি ফেরত চাই। ত্রাণ তো স্থায়ী সমাধান নয়, কিছুদিন হয়তো চলবে। কিন্তু এই ভূমিতে আমরা ভূমি অধিকার চাই। অবলিম্বে রাবার কোম্পানির ইজারা বাতিল
  এবং ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি  দ্রুত আহ্বান জানান।

অ্যাডভোকেট ভূলন লাল ভৌমিক বলেন, পাহাড়ি জাতিসত্তাদের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। পাহাড়িরা ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধ করেছে। তাঁরা আত্মমর্যাদা নিয়ে পাহাড়ের বুকে লড়াই করেছে। এই পাহাড় অঞ্চলে আঠারশ শতকে ব্রিটিশরা যখন দখল করে তখন তাঁরা তাঁদের ম্যানুয়েলে লিখেছে এইসব জমি পাহাড়িদের জমি। পাহাড়ি উচ্ছেদ করে রাবার কোম্পানির মুনাফার জন্য পাহাড়িদের এক ইঞ্চি আর জমি ছাড় দেওয়ার পক্ষে তিনি নন।


তিনি আরো বলেন, মাও সেতুংয়ের শত ফুল ফুটতে দাও। এইদেশে সকল জাতিসত্ত্বার বসবাস। পাহাড়িরা এই ভূমিতে বংশানুগতভাবে হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে। শুধু বান্দরবান নই,শাসকগোষ্ঠী খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতে ও সেটলার বাঙালিদের দিয়ে পাহাড়িদের ভূমি দখল করিয়েছে। এখানে
  রেহিঙ্গাদের ভূমি দখলের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি পাহাড়িদের মনোবল না হারানোর জন্য বলেন।একই সাথে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। এবং সকল আইনি-বেআইনি লড়াইয়ে পূর্ণসমর্থনের আশ্বাস দেন।

এরপর ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়। এতে লাঙকম ম্রো পাড়া, রেংইয়েং ম্রো পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার ৩৭টি পরিবারকে ত্রাণ প্রদান করা হয়। প্রতি পরিবারকে এক বস্তা চাল, নগদ ৩০০০  টাকা (মোট-১১১,০০০ টাকা ), তেল ১ লিটার, শুটকি ১/২ কেজি, পেয়াজ ১ কেজি, সাবান ২টি, ওরস্যালাইন প্যাকেট, ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা উপকরণ ১ সেট করে এবং শিশুদের বিভিন্ন খেলনা উপহার দেওয়া হয়।

ত্রাণ প্রদান শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। এতে গ্রাম প্রধানরা ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত জুম, ফলজ বাগান, প্রাকৃতিক বন ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসাবশেষ দেখতে পান।

হিল কালচারাল ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ উত্তোলন কমিটির সদস্য রিক্তা চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ত্রাণ বিতরণের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে।

---





0/Post a Comment/Comments