""

পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষকদের রক্ষায় মরিয়া একটি গোষ্ঠি!

বিশেষ প্রতিবেদন, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

প্রতীকী ছবি

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বান্দরবানের লামায় ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পৃথক দুটি নারী নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি ধর্ষণ ও অপরটি ধর্ষণ চেষ্টা। লামায় ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তির নাম মো. কায়সার আর মাটিরাঙ্গা ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির নাম মো. সাদ্দাম। এ দুটি ঘটনা এখন বেশ আলোচিত হচ্ছে। এর মধ্যে লামায় সংঘটিত ঘটনাটি জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও মাটিরাঙ্গার ঘটনাটি তা হয়নি। তবে এ নিয়ে সিএইচটি নিউজে খবর প্রকাশিত হলে তা জানাজানি হয়। পরে লামা ও মাটিরাঙ্গা ঘটনা নিয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ সংবাদ মাধ্যমে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করে।

মাটিরাঙ্গায় গৃহবধুকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি ঘটেছে একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। স্থানীয় কিছু লোক ঘটনার দিন ধর্ষণ চেষ্টার সাথে জড়িত মো. সাদ্দামকে হাতেনাতে ধরে স্থানীয় চালিতাছড়া বিজিবি ক্যাম্পে সোপর্দ করলেও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে সেদিন রাতেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

একইভাবে লামায় ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত মো. কায়সারকেও স্থানীয় স্থানীয় লোকজন হাতেনাতে আটক করলে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এক সদস্য বিচারের নামে চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে বলে জানা গেছে।

এ দুটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে কারা ধর্ষকদের রক্ষা করতে চায় তা সুষ্পষ্ট হয়। যা পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, মাটিরাঙ্গায় ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে অপরাধীকে রক্ষায় বিজিবি পলাশপুর জোন ও একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি এখন বেশ তপর হয়ে উঠেছে। বিজিবি রীতিমত ভিকটিমের স্বামী এবং যারা ঘটনাটি সম্পর্কে জানে তাদেরকে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে হয়রানিসহ নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পরদিন বিকালে ভিকটিমের স্বামীকে বিজিবি ক্যাম্পে ডেকে পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়। ফলে লোকজন এখন কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে। উল্লেখ্য, ভিকটিমের স্বামী চালিতাছড়া বিজিবি ক্যাম্পে মুজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন বলে জানা গেছে। ফলে তাকে চাপের মধ্যে রেখে তারা ঘটনাটি আড়াল করতে চাচ্ছে।

শুধু তাই নয়, কতিপয় সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তিকে (আসলে সাংঘাতিক) ভাড়া করে কতিপয় অনলাইন নিউজ পোর্টালে আজেবাজে লিখে তারা ঘটনাটি আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘দৈনিক খাগড়াছড়ি’ নামে একটি নিউজ পোর্টালে “সীমান্ত সড়কের কাজ ঠেকাতে ধর্ষণ অপপ্রচাররই যেখানে হাতিয়ার” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করা হয়। এর পরদিন ‌‘আলোকিত রাঙামাটি’ নামে আরেকটি নিউজ পোর্টালে শিরোনামের একটু পরিবর্তন ঘটিয়ে ‍“সীমান্ত সড়কের কাজ ঠেকাতে সশস্ত্র সংগঠন গুলোর বড় অস্ত্র ‘ধর্ষণ অপপ্রচার’!” শিরোনাম দিয়ে একই খবর প্রকাশ করা হয়। শিরোনাম ও প্রতিবেদকের নামের পরিবর্তন আনলেও খবরটি ছিল হুবহু একই। অবশ্য উভয় শিরোনামে তারা সীমান্ত সড়ককে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।

এতে তারা মাটিরাঙ্গায় ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা ছাড়াও ২০১৮ সালে বিলাইছড়িতে সেনা সদস্য দ্বারা দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনাকেও মিথ্যা বলে দাবি করেছে। উক্ত দুটি নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত এই খবরটি পড়ে কারোরই বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, এরা আসলে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর পা চেটে ধর্ষক ও অপরাধীদের রক্ষা করতে চায়, যা যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলে আসছে।

মাটিরাঙ্গায় গৃহবধুকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত মো. সাদ্দাম, যাকে বিজিবি’র চালিতাছড়া ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এসব কথিত নিউজ পোর্টালগুলোতে প্রকাশিত খবরে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল সিএইচটি নিউজের উপরও কামড় বসিয়েছে। সিএইচটি নিউজের বিষয়ে তাদের যে অভিযোগ তাতে মনে হয়েছে সিএইচটি নিউজের কারণে অপরাধ আড়াল করতে না পারার ক্ষোভ উগলে পড়ছে তাদের মধ্যে।

মূলত সিএইচটি নিউজ একটি স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ মাধ্যম। প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করাই সিএইচটি নিউজের কাজ। সত্য ও বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রচারের কারণে বার বার সিএইচটি নিউজের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। সরকারিভাবে সিএইচটি নিউজের লিঙ্ক ব্লক করে দেওয়াসহ একাধিকবার আক্রমণ করে পোর্টালটি ডাউন করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও সিএইচটি নিউজ সত্য খবর প্রচারে অবিচল রয়েছে।

মাটিরাঙ্গায় সংঘটিত ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি আড়াল করে ধর্ষককে রক্ষার চেষ্টার মূল কারণ হতে পারে- প্রথমত, যে ব্যক্তি ওই ঘটনায় জড়িত রয়েছে সে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজের একজন শ্রমিক। দ্বিতীয়ত, বিজিবি’র চালিতাছড়া ক্যাম্প থেকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী অপরাধীকে রাতের আঁধারে ছেড়ে দেওয়ায় তারা চরম অপরাধ করেছে। এখন যদি তারা এটা স্বীকার করে নেয় তাহলে এর জন্য তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। তাই তারা এর দায় এড়াতে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ যা যা করা দরকার তাই করছে। তৃতীয়ত, পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়ন হিসেবে যে ধর্ষণকে ব্যবহার করা হচ্ছে তার জন্য তারা ধর্ষণ চেষ্টাকারী মো. সাদ্দামকে রক্ষায় মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

বিজিবি ক্যাম্প থেকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী অপরাধীকে চুপিসারে ছেড়ে দেয়ার ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চয় ঘটনার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।

আর যার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে, যাকে হাতেনাতে ধরে এলাকার লোকজন বিজিবি ক্যাম্পে সোপর্দ করেছে সেই সাদ্দাম এখন কোথায়? তাকে আইনের আওতায় না এনে কেন রক্ষা করতে চাইছে বিজিবি-- এ প্রশ্ন এখন সবার। কাজেই, বিজিবি’র উচিত মো. সাদ্দামকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।

ধর্ষকের মতো অপরাধীদের রক্ষা করার ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন নয়। নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণকারী লে. ফেরদৌসহ তার দোসরদের রাষ্ট্র এখনো রক্ষা করে চলেছে। বিলাইছড়ির দুই মারমা বোনকে যৌন নিপীড়নকারী সেনা সদস্যদের রক্ষায় চাকমা রাণীর উপর পর্যন্ত হামলা হয়েছিল। এ ধরনের ভূরি ভূরি উদাহারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে। মাটিরাঙ্গা ও লামায় সংঘটিত ঘটনায় জড়িত ধর্ষকদের রক্ষার চেষ্টাও তারই ধারাবাহিকতা! তাই এসব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ছাড়া পাহাড়ি জনগণের কোন গত্যন্তর নেই।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।






0/Post a Comment/Comments