""

লক্ষ্মীছড়িতে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নামে ১৭০০ একর ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা!




সিএইচটি নিউজ ডেস্ক
মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪

খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ২১৭ নং জারুলছড়ি মৌজার হেডম্যানের স্বাক্ষরসহ প্রত্যয়নপত্র জাল করে সৌরবিদ্যু কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের নামে ১৭০০ একর ভূমি বেদখলের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উক্ত প্রকল্পটি বাতিল করার জন্য ইতোমধ্যে হেডম্যান মংসাইগ্য চৌধুরী পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

এছাড়া এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর দাখিল করা এক পত্রে উক্ত সৌরবিদ্যু কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ১৭০০ একর ভূমির প্রস্তাবনা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, CDTO-CRCCII-CCECC-ERECBL CONSORTIUM নামের একটি বহিরাগত কোম্পানি ২১৭নং জারুলছড়ি মৌজায় ১৭০০ একর পরিমাণ মৌজা ভূমিতে ২০০ মেঘাওয়াট (এসি) গ্রীড টাইড সৌর বিদ্যু কেন্দ্র প্রকল্প স্থাপনের লক্ষে সরকারের বিদ্যু, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যু বিভাগে একটি প্রস্তাব দাখিল করে। প্রকল্পটির জন্য উক্ত জায়গা বরাদ্দ দিতে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বিদ্যু বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশও প্রেরণ করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের উদ্যোক্তারা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ‘উক্ত জমি ব্যবহার করলে মৌজা প্রধানের (হেডম্যান) কোনো আপত্তি/অভিযোগ নেই’ বলেও হেডম্যানের ভূয়া স্বাক্ষর দিয়ে একটি জাল প্রত্যয়নপত্র তৈরী করে, যা প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন দপ্তরে তারা ব্যবহার করে।

এ বিষয়ে ২১৭ নং জারুলছড়ি মৌজার হেডম্যান মংসাইগ্য চৌধুরী গত ৩ মার্চ ২০২৪ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা আবেদনপত্রে বলেন, “CDTO-CRCCII-CCECC-ERECBL CONSORTIUM কর্তৃক লক্ষীছড়ি উপজেলায় ২১৭নং জারুলছড়ি মৌজায় ২০০ মেঘাওয়াট (এসি) গ্রীড টাইড সৌর বিদ্যু কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের জন্য ১৭০০ একর ভূমি বরাদ্দ পাওয়ার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট বিদ্যু, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। উক্ত প্রস্তাবনার সাথে আমার ২১৭নং জারুলছড়ি মৌজার প্যাড সীল যুক্ত আমার জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে ১২০০/১৩০০ একর ভূমি উল্লেখ পূর্বক একটি প্রত্যয়নপত্র নথির সাথে সংযুক্ত করে দেন। উক্ত প্রত্যয়নপত্রে স্মারক নম্বর লেখা হয়- ২১৭/১১/জারুলছড়ি, তারিখ: ১০-০৯-২০২৩খ্রি:। অথচ উক্ত বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। উক্ত প্রত্যয়নপত্রে ব্যবহৃত প্যাড, সীল ও স্বাক্ষর আমার নয়, এমনকি উক্ত প্রত্যয়নপত্রে যা কিছু লেখা আছে তা আমার লেখা নহে। উক্ত প্রত্যয়নপত্রটি সম্পূণরূপে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়েছে।”

তিনি উক্ত বিদ্যু কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের অগ্রবর্তী করা ফাইল বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।

২১৭ নং জারুলছড়ি মৌজার হেডম্যান মংসাইগ্য চৌধুরীর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর দাখিল করা আবেদন পত্র।

তিনি তাঁর আবেদপত্রের অনুলিপি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মং সাকের্লের চীফ, লক্ষীছড়ি সেনা জোনের জোন কম্যান্ডার, লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, লক্ষীছড়ি উপজেলার ২নং দুইল্যাতুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি, খাগড়াছড়ি কার্বারি এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং দুল্যাতলী ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যের নিকটও প্রেরণ করেছেন।

অপরদিকে, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে গত ৩ মার্চ ২০২৪ স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে দেওয়া অপর এক পত্রে বলা হয়,  আমরা বিশ্বস্থ সূত্রে জানতে পারলাম যে, CDTO CRCCII ERECBL CONSRTIUM কোম্পানি ২০০ মেগাওয়াট (এসি) গ্রীড টাইড সৌর বিদ্যু কেন্দ্র স্থাপনের নিমিত্তে বিদ্যু জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২১৭ নং জারুলছড়ি মৌজা হতে ১৭০০ একর ভূমির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত ভূমিতে রান্যামা ছড়া, অনিল কার্বারী পাড়া, কম্পু পাড়া, পশ্চিম হাজাছড়ি পাড়া, নাভাঙ্গা মুখ পাড়া, কালা পাড়া, মগাইছড়ি মারমা পাড়া, মগাইছড়ি গুচ্ছগ্রাম, মগাইছড়ি নুতন পাড়াসহ প্রায় ১২/১৩টি গ্রাম রয়েছে যেখানে পাহাড়ি- বাঙ্গালি মিলে প্রায় ২,৫০০ (দুই হাজার পাঁচশত) অধিক লোকের বসবাস। প্রস্তাবিত ভূমিতে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি লোকজন দীর্ঘ যুগ যুগ ধরে ফলজ, বনজ বাগান, আদা হলুদ, কলা, পেঁপে ও কচুসহ বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসিতেছেন। সুতরাং প্রস্তাবিত জায়গাটি কোম্পানির দখলে চলে গেলে এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের আর্থসামাজিকসহ বিভিন্ন উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্থ হবে এবং উক্ত ভূমিতে বসবাসরত জনসাধারণ উচ্ছেদ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ থাকে যে, ২১ ৭নং জারুলছড়ি মৌজার মোট আয়তন- ১০.০০ বর্গ কি:মি: (প্রায়)। এছাড়া লক্ষ্মীছড়ি বন কেন্দ্রের তথ্য মতে উক্ত মৌজায় সর্বমোট- ২৯৮১.৬০ একর বনভূমি রয়েছে। কাজেই প্রস্তাবিত ভূমি বে-দখল হয়ে গেলে পরিবেশের ভারসাম্যতা হারাবে বলে আমরা মনে করি।”

ইতোমধ্যে প্রকল্পটি বাতিলের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর দেয়া পত্র।
উক্ত পত্রে তাঁরা এলাকার সাধারণ জনগণের মঙ্গলার্থে প্রস্তাবিত ভূমিতে ২০০ মেগাওয়াট (এসি) গ্রীড টাইড সৌর বিদ্যু কেন্দ্র স্থাপন না করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

এতে এলাকাবাসীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন ত্রিলন চাকমা (চেয়ারম্যান, দুল্যাতলী ইউপি), সুপার জ্যোতি চাকমা (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, লক্ষ্মীছড়ি), অংগ্যপ্রু মারমা (সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, লক্ষ্মীছড়ি), ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. দেলোয়ার হোসেন, আচিং মারমা, নন্দী শোভা চাকমা ও জ্যোতি লাল চাকমা প্রমুখ।

তাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক, মং সার্কেল চীফ ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট উক্ত পত্রের অনুলিপি পাঠিয়েছেন।



সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


 





0/Post a Comment/Comments